গরুর আড়ঙে হাজারো মানুষের মিলনমেলা

ফরিদপুর প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৫

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গীর পদ্মার ধু ধু চরে হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী গরুর আড়ং উৎসব। পৌষ সংক্রান্তিতে গরুর রশি ছেড়ার এই প্রতিযোগিতা ও আনন্দ মেলা (আড়ং) রবিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয়।

বার্ষিক এই উৎসবে অংশ নিতে ও দেখতে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোর-কিশোরীর আগমনে বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গীর পদ্মাপাড় সুবিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়।

স্থানভেদে দেশের একেক অঞ্চলে গরুর দাবড়ানি, গরু দৌড়, গরুর রশি ছেড়া বা আড়ং নামের এই প্রতিযোগিতা বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। একটি খুঁটির সঙ্গে গরুর রশি বাধা থাকে, গরুকে দাবার বা ধাওয়া দিয়ে সেই রশি ছিড়তে হয় প্রতিযোগীদের। পরে ওই রশি বিচারকদের কাছে দিতে হয়। এই ক্ষেত্রে যত দ্রুত গরুর গলায় বাধা দড়ি গাছে বেধে দেওয়ার পর যে গরুটি তার রাগ যত বেশি প্রদর্শন করবে ও ছিড়ে চলে যেতে পারবে তার মালিকদেরই পুরস্কৃত করা হয়। প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ওই সেরা প্রতিযোগীদের নির্বাচিত করা হয়।

পদ্মার এই চরে গত পাঁচ বছর ধরে এলাকাবাসীর আয়োজনে গরুর আড়ং উৎসব হয়ে আসছে। চরহরিরামপুর ইউনিয়নের মানুষ বছরের দুটি ঈদের পরে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবেও মনে করেন এই গরুর আড়ংকে।

আড়ং ঘিরে মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতকুড় আর অন্য স্বজনদের আগেভাগেই দাওয়াত করে বাড়িতে আনেন তারা, আয়োজন করেন পিঠাপুলির উৎসব।

গরুর সঙ্গে মাঠে যেতেই এই স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত করে আনা হয় বলে জানান চরহরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির খান। তিনি বলেন, স্বজনদের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নিয়ে গ্রুপ করে দুপুরে বাড়িতে সবাইকে খাওয়ানোর পর গরু নিয়ে মাঠে আসেন সকলে। যার যার মতো লোক পছন্দ করে আগেই বাড়িতে জড়ো করেন প্রতিযোগীরা।

এবারের উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

বিকেল চারটায় উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি।

ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে সুসজ্জিত শতাধিক গরু নিয়ে মালিক এবং সমর্থকেরা অংশ নেন। উৎসব ঘিরে অস্থায়ী মেলাও বসে যায়। মেলায় ছিল খাবার ও নিজেদের তৈরি মিষ্টি-ম-ার দোকান। শিশুরাও বিনোদন ও খেলনা কেনার সুযোগ পেয়ে বেশি খুশি হয়েছে।

উৎসবে আসা তানজিনা আক্তার বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারো এই গরু আড়ং এর আয়োজন খেতে এসেছি। অবহেলিত জনপদ পদ্মার চরের মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছে, এটিই বড় কথা।’

‘এই চরের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র। বর্তমান সমাজের যে সুফল তার কোনোটিই তাদের ভাগ্যে জোটে না। তবুও এই আড়ঙে মহামিলনমেলা হলো। উৎসবমুখর দিন কাটাতে পেয়ে সকলেই আনন্দিত।’

আড়ঙে বিচারকদের নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম পুরস্কার ২১ ইঞ্চি এলইডি টিভি পান ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মো. আজিজ মোল্যা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার ২১ ইঞ্চি কালার টিভি পান যথাক্রমে দোহারের আসলাম বেপারি ও চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের শেখ আবুল। এছাড়া প্রতিটি গরুর মালিককে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে একটি করে বালতি দেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :