মা-বাবার খোঁজে কুড়িগ্রামে ‘সুইস-কন্যা’

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
  প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:১০| আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪০
অ- অ+

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় হারিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের এক দম্পতি নেন দত্তক। ৪৫ বছর পর তিনি ছুটে এলেন নিজ ভূমে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বাবা-মাকে। কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারীতে বাবা-মাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রবাসীকন্যা।

হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম। তবে বড় হয়েছেন বেশ স্বচ্ছল পরিবেশে। তবে ভুলে যাননি শেকড়। মনে পড়ত বাবার কথা, মায়ের কথা, নিজের এলাকা, গ্রাম-কিছুই ভোলেননি।

তবে স্বামী ও প্রবাসী বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে গত এক সপ্তাহে শেকড়ের সন্ধান মেলেনি। এজন্য হতাশ পরিবারটি।

প্রবাসী-কন্যার নাম খোদেজা রওফি। তিনি ও তার সঙ্গীরা জানান, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় বয়স ছিল সাড়ে তিন। উলিপুর উপজেলার থেতরাই বাজারে কাঁদছিল সে। স্থানীয়রা নিয়ে যান উপজেলায় বেসরকারি ‘টেরেডেস হোমস’-এর লঙ্গরখানায়। সেখানেই ছিল ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত।

সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের রওফি পরিবার শিশুটিকে দত্তক নেয়। নতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি দেয় জেনেভা শহরে। পড়াশোনা শেষ করে জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন ২০০১ সাল থেকে।

মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলার সময়ের স্মৃতি হিসেবে কোনো কিছু মনে নেই খোদেজার। কেবল এতটুকু মনে রয়েছে তিনি অন্য কোনো শহরে চলে এসেছিলেন।

মা-বাবার খোঁজে এলেও কারও নাম-ঠিকানা কিছুই জানেন না। শেকড় খোঁজার সূত্র হিসেবে আছে কেবল শৈশবের একটি সাদাকালো ছবি। এটি নিয়েই চেষ্টা করছেন তিনি। বলেন, ‘শেষ বয়সে এসে যদি আমার মা-বাবা এবং বংশধরদের খুঁজে পাই। জানি না পাব কি না। তবে পেলে আমার থেকে খুশি আর কেউ হবে না।’

খোদেজা জানান, সুইজারল্যান্ডে তাকে দত্তক নেওয়া পরিবারটি আদর স্নেহ দিয়েই বড় করেছেন তাকে। বড় করেছেন নিজের সন্তান পরিচয়ে। কোনো কিছুর ঘাটতি রাখেননি সেই বাবা-মা।

তারপরও যার নাড়ি ছিঁড়ে এই পৃথিবীতে এসেছেন, তাকে একটিবার ছুঁয়ে দেখার আকাক্সক্ষা বয়ে বেড়িয়েছেন সব সময়। বাবাকে একটিবার বাবা ডাকতে চেয়েছেন। যখন জানলেন তার জন্ম বাংলাদেশে, তখন থেকেই খচখচ করছিল মনটা। এক সময় স্বামীকে বলেই ফেললেন কথাটি। স্বামীও রাজি হলেন এখানে আসতে।

খোদেজা সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পড়াশোনা শেষ করে সেখানকার এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনোকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে পাঁচ বছরের সন্তান রয়েছে, নাম রেখেছেন ইলিয়াস।

খোদেজার সফরসঙ্গী ‘ইনফ্যান্টস ডু মনডে’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর রাকিব আহসান জানান, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের সোর্সদের কাজে লাগিয়ে আমরা খোদেজার মা-বাবা এমনকি তার স্বজনদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্যউপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি।’

‘তবে কেউ যদি কখনো খোদেজার মা-বাবার পরিচয় দাবি করেন তাহলে আমরা সঠিক তথ্য-উপাত্তসহ ডিএনএ টেস্ট করিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হব। কেননা আমরা চাই না, এই সময় এসে খোদেজা কোনো প্রতারণার শিকার হোক।’

আরেক সফরসঙ্গী ‘জেনেভা বাংলা পাঠশালা’র পরিচালক ও ‘সুইস বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বলেন, ‘খোদেজার সঙ্গে আমার পাঠশালাতেই পরিচয় হয়। সেখানে আলাপচারিতায় তার শৈশবের কথা জানালে আমিও তার মা-বাবার খোঁজে এসেছি। কিন্তু বিষয়টি খুবই জটিল। কেন না কোনো ডকুমেন্টস আমাদের হাতে নেই। কিন্তু তারপরও যদি মিরাকল (অলৌকিক) কিছু ঘটে।’

স্থানীয় এনজিও কর্মী নুরুল হাবীব পাভেল জানান, সেই সময় কুড়িগ্রামে খুবই দুর্ভিক্ষ ছিল। তখনকার পরিস্থিতি দেখে কয়েকজন একটি নোঙ্গরখানা খোলেন। সেখানে এক হাজার

২০০ শিশু ছিল নোঙ্গরখানায়। প্রতি ৫০ জন শিশুকে দেখার জন্য একজন করে টিম লিডার ছিল। খোদেজার টিম লিডার ছিলেন আনিছুর।

খোদেজার ছবি দেখে তাকে চিনতে পেরেছে আনিছুর। কিন্তু তার মা-বাবা কে, কোথায় তার বাড়ি, এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তিনিও।

আনিছুর বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমার জানামতে ৩৬ জন এতিম শিশুকে অনেক বিদেশি দত্তক নিয়েছিলেন। খোদেজার সঙ্গে তার সমবয়সী পিপিজ এবং কুরানী নামের আরও দুটি শিশু বিদেশে গিয়েছিল। সেই সময় টিডিএইচে যেসব শিশু বড় হয়েছিল তাদের মধ্যে যাদের মাতাপিতা মারা গেছে তাদেরই শুধু বিদেশে দত্তক দিয়েছে।’

‘আর যাদের পিতামাতা ছিল তাদের স্বাবলম্বী করে দেওয়া হয়। আর খোদেজাকে রাস্তা থেকে নিয়ে আসায় তার পিতামাতা সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছে না।’

ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সিরাজগঞ্জে পৃথক স্থান থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার
জাতীয় পার্টি আর ভাঙবেন না, বাবাকে আর অপমান করবেন না: এরিক এরশাদ
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান, পেশাদার মাদক কারবারিসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য: মামুনুর রশীদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা