ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে হতাশায় বিরোধী নেতা-কর্মীরা

বাছির জামাল
 | প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:০৪

একাদশ ভোটের আগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে হতাশা রয়েছে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক শিবিরে। এ পক্ষের নেতারা মনে করছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে লক্ষ্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল তা বিন্দুমাত্র পূরণ হয়নি। উল্টো ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জোটের শরিকদল গণফোরামের যে দুই নেতা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ফ্রন্টটি গঠনের পর থেকে বিরোধী শিবিরে থাকা মানুষের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। গণমানুষ থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করেছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট প্রভাব ফেলতে পারবে। কিন্তু নানা নাটকীয়তা শেষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নজিরবিহীনভাবে ভরাডুবির মুখে পড়ে জোটটি। ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৮টি আসনে পায় জয়ের দেখা। বিপুল কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটের দিনই নির্বাচন বয়কট করে জোটটি। ঘোষণা দেয় পুনরায় ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামাসহ নানা কর্মসূচির। বেশ কয়েকটি আন্দোলনের কর্মসূচি দিলেও তা সফল হয়নি। এসব আন্দোলন-কর্মসূচিতে ছিল না গণমানুষের অংশগ্রহণ।

নির্বাচনের একশ দিন ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেলেও পুনর্নির্বাচন দিতে সরকারের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এখন জোটের নেই কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি। উল্টো বাড়ছে নিজেদের জোটের শরিকদলগুলোর মধ্যে দূরত্ব। নির্বাচনে ৮ বিজয়ীর মধ্যে গণফোরামের ২ জন দলীয় এবং জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিয়েছেন। তারা সংসদে বক্তব্য রাখলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি, পুনর্নির্বাচন, তারেক রহমানের মওকুফের কথা একটি বারের জন্য হলেও বলেলনি।

গণফোরামের বিজয়ী দুজন শপথ নেওয়াটা জোটের শরিকদল বিএনপির নেতারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এমতাবস্থায় জোটের শরিকদলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। যদিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, গণফোরামের দুজনের শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্টে কোনো নীতিবাচক প্রভাব পড়েনি। ঐক্যফ্রন্ট এখনও ঐক্য আছে, আর এ ঐক্য টিকে থাকবে লক্ষ্য আদায় পর্যন্ত। জোটের কয়েকজন শীর্ষনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নেওয়ার পর মতভেদ ও বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে জোটটিতে। বিএনপির নির্বাচিত ছয় সদস্যও ভেতরে ভেতরে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছেন না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। আবার বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যের সবাই শপথ নিয়ে সংসদে গেলে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ নির্বাচিত ওই আটজন ছাড়া দুই জোটের প্রায় সব নেতাই শপথ নেওয়ার বিরুদ্ধে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচিত এমপিদের শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতার দিন ঘনিয়ে আসায় জোটসহ শরিক দলের শীর্ষ নেতারা বারবার বৈঠক করছেন। কিন্তু কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না তারা।

জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি রেখে সংসদে যাওয়ার পক্ষে নয় বিএনপির বড় একটি অংশ। অপর অংশ সংসদে যোগ দিয়ে সরকারকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার বিনিময়ে পর্দার আড়ালে ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পক্ষে। পশ্চিমা প্রভাবশালী কূটনীতিকরা বারবার দলটির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সংসদে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া রাজি থাকলে প্যারোলে হলেও মুক্তি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার চিন্তাও করছেন পরিবারের স্বজন, দলের কিছু নেতা ও আইনজীবীরা। তবে এখনও খালেদা জিয়াসহ দলের আরেকটি অংশ সমঝোতার মাধ্যমে মুক্তিতে রাজি নন। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছেন তারা। না হলে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যাবে বলে মনে করেন এ অংশের নেতারা।

দলের একাধিক নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপির সামনে এখন দুটি পথÑ সংসদে যোগ দিয়ে বিশ্বায়নের রাজনীতিতে সংসদীয় দল হিসেবে টিকে থাকা অথবা সংসদের বাইরে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন আদায় করা। এ দুটি বিষয় নিয়ে দলের ভেতর চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ না নিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। একই সঙ্গে দাবির সপক্ষে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার এবং বিদেশিদের সমর্থন আদায়ের জোর প্রচেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংসদীয় রাজনীতিতে বিএনপির অস্তিত্ব ধরে রাখতে হবেÑ এমন যুক্তি দিয়ে নির্বাচিত অধিকাংশ সংসদ সদস্যসহ দলের একটি অংশ সংসদে যোগ দিতে চাইছে। তাদের মতে, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি সংসদীয় রাজনীতির বাইরে ছিল। এবারও সংসদে যোগ না দিলে রাজনীতিতে বিএনপি অপাঙক্তেয় হয়ে যাবে। এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :