আলফাডাঙ্গায় মধুমতিতে বিলীন হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:২৪
অ- অ+

ফরিদুপরের আলফাডাঙ্গার ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই আর তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সরকারের গড়ে তোলা গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্প মধুমতি নদীতে বিলীন হচ্ছে। গত তিন বছরে শতাধিক ঘর চলে গেছে নদীগর্ভে। অন্যগুলো গ্রাস করতে উদ্ধত মধুমতি। কিন্তু সরকারের কোটি কোটি টাকার এই মানবিক প্রকল্প রক্ষায় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

২০০৪ সালে ১২০টি ছিন্নমূল পরিবারের স্থায়ী আবাসনের লক্ষ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্ধ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামে মধুমতি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয় গুচ্ছগ্রাম। এই প্রকল্প অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ২০১১-১২ অর্থবছরে এর পাশেই ১৫০টি পরিবারের আবাসনের জন্য নির্মাণ করা হয় আশ্রয়ণ।

কয়েক শ পরিবারের মানুষ সরকারের ঘর ও জায়গা পেয়ে গুচ্ছগ্রামটিকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। টগরবন্ধ ইউনিয়নের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর পাড়ে সারি সারি সবুজ বৃক্ষরাজি আর সুন্দর গোছানো টিনের ঘর নিয়ে চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম অল্প দিনেই স্থানীয় মানুষের মাঝে ভিন্নতা এনে দেয়।

নয়নাভিরাম গুচ্ছগ্রামে স্থায়ী আবাসন পেয়ে এগুলোর বসিন্দারা সুখের সংসার গুছিয়ে নিয়েছিলেন। ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর ছিন্নমূল মানুষগুলো এখানে বসবাসের পাশাপাশি অল্প দিনেই পরিশ্রম করে গবাদি পশু পালনসহ আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করে। সব মিলিয়ে ভালোই কাটছিল এখানকার বসতিদের দিনকাল।

কিন্তু হঠাৎ তাদের সুখের সংসারে বাদ সাধে সর্বনাশা মধুমতি। নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে প্রলয়ংকরী রূপ নিয়ে একে একে গিলতে থাকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি। কিছুদিনের ব্যবধানে আঘাত হানে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ইতিমধ্যে মধুমতির গর্ভে চলে গেছে প্রকল্পের বাসিন্দাদের শতাধিক ঘর। তিন বছর ধরে চোখের সামনে মধুমতির ভাঙনে বিলীন হয় শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন।

নদীভাঙন থেকে ভিটেমাটি বাঁচাতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে কাকুতি-মিনতি করেও কোনো ফল মেলেনি তাদের ভাগ্যে। অসহায় মানুষগুলোর শেষ সম্বল রক্ষার আকুতি কারও কানে ঢোকেনি। ফলে মধুমতি নদীর ভাঙনে শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আবার ছিন্নমূল মানুষে পরিণত হয়েছে। রাস্তা আর নদীর পাড়ে ঝুপড়ি তুলে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ঘরহারা মানুষগুলো। আলফাডাঙ্গায় ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের মহৎ ও মানবিক উদ্যোগ।

মধুমতির ভাঙন চলছেই। গুচ্ছগ্রামের এখনো বেঁচে যাওয়া ঘরগুলো গ্রাস করতে নদী চলে এসেছে দুয়ারে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানেই বসবাস করছে বাসিন্দারা।

সরেজমিনে নদীভাঙনের ছবি তুলতে গেলে দেখা মেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। মধুমতির ভাঙনসীমার তিন গজের মধ্যে ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ষাটোর্ধ্ব রুমেসা বেগম। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এগিয়ে এসে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি।

ভূমিহীন রুমেসা বেগম জন্মান্ধ। পরিবার নিয়ে গুচ্ছগ্রামেই জীবন-যাপন করছিলেন তিনি। কিন্তু মধুমতির ভাঙনে তার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু বাড়ির শোকে নদীপাড়ে ঝুপড়ি তুলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন তিনি।

এদিকে বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর তীব্র স্রোতের কারণে নতুনভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বসতিরা।

দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গুচ্ছগ্রামের সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন দাবি করছে, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তারা।

টগরবন্ধ ইউপি চেয়ারম্যান ইমাম হাচান (শিপন) বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। ’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আলফাডাঙ্গা উপজেলা শাখার কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আশা করি খুব শিগগির এর স্থায়ী সমাধান হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শ্যামলীতে দিন-দুপুরে ছিনতাই, চাপাতি, বাইকসহ গ্রেপ্তার ৩
বগুড়ায় দাদী ও নাতি বউকে গলা কেটে হত্যা  
যাত্রাবাড়ীতে ২ কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার 
কারফিউয়ে থমথমে গোপালগঞ্জ, যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ১৪
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা