সংগীত
গজলের সম্রাট মেহেদী হাসান

গজল শুনেছেন কিন্তু মেহেদী হাসানের নাম শুনেননি এমন কাউকেই সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। মেহেদী হাসানের পূর্বে মুন্নি বেগম, বেগম আক্তার, কে. এল সায়গল, তালাত মাহমুদ গজল গেয়ে জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন।
মেহেদী হাসান ভারতের রাজস্থান প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ষাটের দশকের প্রথম দিকে পাকিস্তান রেডিওতে উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশন করতেন। পরবর্তীতে তিনি ওমর খৈয়াম, হাফিজ, মির্জা গালিব, আমির খশরুর জীবনী পাঠ করেন। এভাবে গজলের প্রতি তার মোহ জন্মে। পাকিস্তানের বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের লেখা কয়েকটি বিখ্যাত গানে কণ্ঠস্বর দিয়ে তিনি সুপার স্টারে পরিণত হন। প্রথম দিকে তিনি চলচ্চিত্রেই গান গাইতেন। তার বিখ্যাত কয়েকটি গান হচ্ছেÑ মুঝেতুম নাজারসে, পেয়ার ভারে দো সারমিলে, দুনিয়া কিসিকে পেয়ারমে, হামচালে ইসজাহামে, এ্যাদুনিয়া কিয়াতুঝসে, এলাহী আঁশু ভারি জিন্দাগী, রাফতারাফতা, হামারে দিলসে মাতখেলো, তেরেভিগেভিগে আঁখোমে প্রভৃতি। এই গানগুলো গেয়ে তিনি উর্দু চলচ্চিত্রের একনম্বর সংগীত তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
এছাড়াও তিনি শত শত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় চারশ ছায়াছবিতে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। একপর্যায় তিনি চলচ্চিত্রের গানের চেয়ে গজলের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। তার বিখ্যাত কয়েকটি গজল হচ্ছেÑ শোলাথা জালবুঝা, হামে কোইগাম নাহিথা, মহব্বাত কারনে ওয়ালে কামনাহোঙ্গে, রানজিশহিসাহি, গুলোমে রাঙ্গেভারে। এই কয়েকটি গজল ছাড়াও তিনি শত শত গজলে কণ্ঠ দিয়েছেন। গুলোমে রাঙ্গেভারে গজলের রচয়িতা ছিলেন ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ। তিনি মূলত এই লেখকের গজলে বেশি কণ্ঠ দিয়েছেন।
মেহেদী হাসানের পরে গোলাম আলী, পঙ্কজ উদাস, ওনুপজালোটা, জগজিৎ সিং প্রমুখ শিল্পী গজল গেয়ে ভারত-পাকিস্তানের শ্রোতাদের কাছে সুপার স্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও তার জনপ্রিয়তার কাছাকাছি কেউ যেতে পারেননি। তিনি বাংলাদেশের তিনটি চলচ্চিত্রে বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানগুলো হচ্ছেÑ তুমি যে আমার ভালোবাসা, হারানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়, ঢাকো যতনা নয়োনো দু হাতে। এই গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর মধ্যে ষাটের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত হারানো সুর ছবিতে নায়ক রহমান ‘হারানো দিনের কথা মনে পড়ে যায়’ এই গানটি চলচ্চিত্রের পর্দায় গেয়েছিলেন। শুধু এই গানের জন্যই ছবিটি সুপার হিট হয়েছিল।
মেহেদী হাসানের পর পাকিস্তানে একাধিক গজল গায়কের আবির্ভাব হয়। কিন্তু তারা কেউ মেহেদী হাসানের জায়গায় পৌঁছতে পারেননি। কারণ একটাই, লতা মুঙ্গেশকরের ভাষায়, পরমেশ্বর তার অশেষ দয়া মেহেদী হাসানের কণ্ঠে ঢেলে দিয়েছিলেন। যে কারণে মেহেদী হাসানকে গজল সম্রাট বলা হয়। তার গাওয়া গজল, উর্দু গান, বাংলা গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। শারীরিকভাবে তার মৃত্যু হলেও সংগীত জগতে তিনি চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন সংগীতের চর্চা করে গেছেন। শেষ বয়সেও তিনি উচ্চাঙ্গ সংগীত ও গজলের চর্চা করতেন। তার একাধিক পুত্র গজল শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন কিন্তু বাবার মতো সুনাম অর্জন করতে পারেননি। তার কারণ সম্ভবত শিল্পী লতা মুঙ্গেশকরের একটি উক্তি একবার এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মেহেদী হাসানের বিকল্প শিল্পী কি আর তৈরি হবে না?
উত্তরে তিনি বলেছিলেনÑ স্বয়ং ঈশ্বর মেহেদী হাসানের কণ্ঠে নেমে এসেছেন। এই উক্তি দ্বারাই প্রমাণিত হয়ে যায় মেহেদী হাসানের বিকল্প আর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। যদিও একাধিক গজল শিল্পী ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন যেমনÑ গোলাম আলী, জগজিৎ সিং, চিত্রা সিং, ভুপেন্দর সিং, আহমেদ হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন, অনুপ জালোটা ও পঙ্কজ উদাস। এই শিল্পীরাও গজলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৯ডিসেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন