চিকিৎসার অভাবে চলে গেল শিশুটি...

আরিফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা
  প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ২৩:১৯
অ- অ+

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি শিশু জান্নাতুলকে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে মৃত বলে ফেলে রেখেছিল ক্লিনিক। এরপর মায়ের ছোঁয়ায় জেগে ওঠা শিশুটিকে বাঁচাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের ২৪ ঘণ্টার প্রাণপণ চেষ্টা তার অভিমান ভাঙাতে পারেনি। মৃত্যুকেই অলিঙ্গন করতে হলো আরও উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ বাড়িতে শিশুটি মারা যায়। আরেঅচিত এই শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে তাকে একনজর দেখতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামে শত শত মানুষের ঢল নামে।

এর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহী যাওয়ার মতো টাকা শিশুটির বাবার কাছে না থাকায় শিশুটিকে বাড়িতে নেয়া হয়। অর্থ জোগাড় করার প্রস্তুতির একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে পড়ে শিশু জান্নাতুল।

শিশু জান্নাতুলের মৃত্যুর পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামজুড়ে। অনেকে শিশুটির মৃত্যুর জন্য বেসরকারি ক্লিনিক উপশম নার্সিং হোমের চিকিৎসক ও আয়াদের অবহেলাকে দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবি তোলেন। জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মুদি দোকানি আবদুল হালিমের স্ত্রী জিনিয়া খাতুনের প্রসবব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা গত রবিবার বিকালে তাকে শহরের উপশম নার্সিং হোমে ভর্তি করান। সেখানে ভোর চারটার দিকে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কন্যাসন্তান প্রসব হয়। পরিবারের সদস্যরা শিশুটির নাম দেন জান্নাতুল।

শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষণ পর ক্লিনিকটির নার্স-আয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয় মৃত কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন জিনিয়া। এরপর মৃত ভেবেই তাকে ফেলে রাখা হয় ক্লিনিকের একটি রুমের মেঝেতে। এমন অভিযোগ এনে শিশুটির বাবা আব্দুল হালিম বলেন, ‘মৃত কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবরে আমরা যখন দাফন-কাফনের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি, তখন আমার স্ত্রী (জিনিয়া) তার কন্যাকে শেষবারের মতো দেখতে চায়। কিন্তু ক্লিনিকটির আয়ারা শিশুটির গলা চেপে উঁচু করে আমাদের বলেন এই দেখেন মৃত বাচ্চা।

আবদুল হালিম বলেন, ‘তারপরও আমার স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী কোলে নিতেই নড়ে ওঠে আমার সদ্যভূমিষ্ঠ কন্যা। এ সময় আমরা চিৎকার দিয়ে উঠলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শিশুকে অক্সিজেন দেন। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে জান্নাতুলকে গোপনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন। তাদের কথামতো সোমবার সকালে আমরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি।’

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রোডের উপশম নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে শিশুটিকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভিড় জমায়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগে শিশুটি জন্ম নিয়েছে। তাছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল শিশুটি। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে ইনকিউবেটরে রেখে প্রাণপণ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই শিশুটির উন্নতি না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দিই। দুপুরে শিশুটির পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন।’

শিশু জান্নাতুলের বড় চাচা বরকত আলী বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানোর পরামর্শ দিলেও আমাদের হাতে রাজশাহী যাওয়ার মতো টাকা-পয়সা ছিল না। এ জন্য আমরা দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসি। এরপর টাকা জোগাড় করার প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু এরই একপর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে মায়ের কোলেই নিথর হয়ে পড়ে শিশু জান্নাতুল।’

শিশুটির মৃত্যুর খবরে মঙ্গলবার দুুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় শিশুর মা জিনিয়া খাতুন প্রলাপ বকছেন। তিনি তার শিশুকন্যার মৃত্যুর জন্য উপশম নার্সিং হোমের চিকিৎসক জিন্নাতুল আরা, ক্লিনিকটির নার্স ও আয়াদের অবহেলাকে দায়ী করেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘জীবিত থাকা অবস্থায় তার সন্তানকে মৃত ঘোষণা দিয়ে তাকে তীব্র ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। তিনি শেষবারের মতো দেখতে না চাইলে জীবিত অবস্থায় হয়তো...!

এ ব্যাপারে চিকিৎসক জিন্নাতুল আরা বলেন, ‘শিশুটি যখন ভূমিষ্ঠ হয়, একেবারেই শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না। নাভির কাছে কেবল ঢিবঢিব শব্দ ছিল। চার ঘণ্টা অক্সিজেন দেয়ার পর সে কিছুটা সুস্থ হলে আমরা সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।’

তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ’ তবে, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/কেএম/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাজা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ইসরায়েলি সেনারা ট্রমায় আক্রান্ত, বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা
টেকনাফে ডাকাতদলের পাহাড়ি আস্তানা থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
দুই মাঠে খেলে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে বাংলাদেশের জয়!
পবিত্র কাবার ওপরে সরাসরি সূর্যের অবস্থান, মুসলিম বিশ্বের ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা