নড়াইলে আ.লীগ নেতা বদর হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন

নড়াইল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ মার্চ ২০২০, ২২:১১

নড়াইলের লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকারকে (৪০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। লোহাগড়া উপজেলাবাসীর ব্যানারে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি হয়।

মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত বদর খন্দকারের আট বছরের শিশু সন্তান সাঈদ ও স্ত্রী নাজমিন বেগম হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করেন।

নাজমিন বেগম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতা হারানোর যন্ত্রণা কতটা কষ্টের আপনি তা জানেন। আপনি মমতাময়ী মা। দেশের অভিভাবক। আমার দু’টি শিশু সন্তানের দিকে তাকান। তাদের বাবাকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাষণ্ডরা। আমি স্বামী হারিয়েছি। কী দোষ ছিল আমার স্বামীর? হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করছি।’

‘নজরুল, ফরিদ, সুজনসহ সবার ফাঁসি চাই। আমার বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি চাই।’ এসব কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশু সন্তান সাঈদ। আর পাশেই এক আত্মীয়ের কোলে চেপে কান্নারত মা ও ভাইয়ের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে ছিল নিহত বদরের অবুঝ ছোট্ট মেয়েটি। এদের কান্না দেখে মানববন্ধনে অংশ নেয়া হাজারো মানুষ কান্না ধরে রাখতে পারেননি। সবাই কেঁদেছেন অঝোরে। এ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন, নিহত বদরের বড় ভাই বাবর খন্দকার, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সামাজিক বিরোধ ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকারকে কুপিয়ে হত্যা করে আসামিরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে লোহাগড়া-নড়াইল সড়কের টি-চরকালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বদর লোহাগড়া ইউনিয়নের চরবগজুড়ি গ্রামের ময়ের আলীর ছেলে এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ধারালো অস্ত্রের কোপে বদর খন্দকারের বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল এবং ডান হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া দুই পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘটনার দিন বদর খন্দকার চরকালনা এলাকায় নিজের ইটভাটা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বদরের কাছে ইট বিক্রির সাড়ে ৪ লাখ টাকা থাকলেও আসামি আকবর খন্দকার ওই টাকা নিয়ে গেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বদর খন্দকারের স্ত্রী নাজমিন বেগম গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লোহাগড়া থানা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লোহাগড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল শিকদারকে (৪৫)। অন্য আসামিরা হলেন-নজরুল শিকদারের বড় ভাই ইবাদত শিকদার, ভাইপো জাকারিয়া শিকদার ওরফে গফফার, ভাগ্নে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক উপ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আজাদ সুজন, চাচাতো ভাই এনায়েত শিকদারসহ ১৬জন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিলটন কুমার দেবদাস জানান, এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন, মতিউর রহমান মুন্না মোল্যা, রুহুল আমিন, রফিক মোল্যা, আলী মিয়া মোল্যা ও বাবু মোল্যা। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি মুন্না মোল্যা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এসআই মিলটন কুমার দেবদাস বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা বদর খন্দকার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারপূর্বক ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন এলাকাবাসী।

(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/কেএম/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :