ঘুষের টাকা নিয়ে লাপাত্তা রাজশাহীর সাব-রেজিস্ট্রার

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৬ মার্চ ২০২০, ২০:৪৮

রাজশাহী সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এখন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সদর সাব-রেজিস্ট্রার জামিনুল হক অতিরিক্ত টাকা ছাড়া দলিলে হাতই দেন না, কিন্তু ঘুষ কেলেঙ্কারির কথা জানাজানি হলে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস করছেন না। এরই মধ্যে গত ৫ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল জামিনুলের অফিসে হানা দেয়। কিন্তু জামিনুল অফিসে ছিলেন না।

সেদিন দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের ২৮ নভেম্বর থেকে জামিনুল অফিসে আসেননি। সেদিন অসুস্থতার অজুহাতে দরখাস্ত দিয়ে গেছেন তিনি।

এদিকে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়ে জামিনুলকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার কর্মচারীরাও তার অনুপস্থিতির বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। অফিসে জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস হোসাইনকেও পাওয়া যায়নি।

তার দপ্তরের কর্মচারীরা জানান, রবিবার থেকে তিনিও ছুটিতে। পুরো সপ্তাহ ছুটি কাটাবেন। আগামী রবিবার থেকে তাকে অফিসে পাওয়া যাবে।

গত ৫ মার্চ অভিযানের পর দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাজশাহী মহানগরীর আলম ফিলিং স্টেশনের মালিক আজিজুল আলমের চারটি দলিল সম্পাদনে ৪৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন সাব-রেজিস্ট্রার জামিনুল হক। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি জানাজানি হলে পরের দিনই তিনি অসুস্থতার কারণে ছুটির দরখাস্ত দিয়ে চলে যান। আর অফিসে আসেননি। তাকে দুদক খুঁজছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জামিনুল হক এর আগে ঢাকার ধানমন্ডির সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তারও আগে ছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়। এসব এলাকাতেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তাকে বারবার বদলি করা হয়। শেষে তিনি আসেন রাজশাহীতে। শ্রীপুরে থাকাকালে ঈদের বোনাস হিসেবে তিনি দলিল প্রতি সাত হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেছিলেন। দলিল লেখকরা রাজি না হলে তিনি দলিল সম্পাদন বন্ধ করে দেন। এর জের ধরে সেখানকার দলিল লেখকরা তাকে অবরুদ্ধ করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনায় জামিনুল হক থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেছিলেন। এরপরই তাকে শ্রীপুর থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অনিয়ম দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার জামিনুল হক। ঢাকার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে তার রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ধানমণ্ডিতেও আছে আরেকটি ফ্ল্যাট। আছে দামি গাড়ি। এছাড়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মধুপুর এলাকায় গোল্ডেন গেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে তার একটি বিলাসবহুল স্কুল রয়েছে। ঢাকার দুদক তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করছে। এরই মধ্যে রাজশাহী দুদকও তার কার্যালয়ে হানা দেয়।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জামিনুলের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস হোসাইন বলেন, তিনি একদিন অফিসে এসে দুই সপ্তাহ ছুটির জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছিলেন। এক-দুই দিন হলে আমি ছুটি দিতে পারতাম। এতো দিন তো আমি ছুটি দিতে পারি না। কিন্তু ছুটির দরখাস্ত দিয়েই তিনি অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। সাড়ে তিন মাস ধরেই তিনি অনুপস্থিত।

তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন বা কেন আসছেন না তা জানেন না জানিয়ে জেলা রেজিস্ট্রার ইলিয়াস বলেন, অফিসে অনুপস্থিত থাকার কারণে জামিনুলকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবও আসেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পলাতক সাব-রেজিস্ট্রার জামিনুলের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেগুলোর প্রমাণও পাওয়া গেছে। বিষয়টি কমিশনকে জানানো হবে। সেখান থেকে যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬মার্চ/কেএম/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

কোটি টাকার সেতু আছে, রাস্তাও আছে, নেই শুধু চলাচলের উপায়

ফুটবলার থেকে সংসদ সদস্য, সোনা চোরাচালানেও জড়ান আজীম?

প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে: প্রধান বিচারপতি

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাচনে হেরে ভোট কারচুপির অভিযোগ করলেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা

কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন শারীরিক প্রতিবন্ধী মরিয়মের

কুমিল্লায় পৃথক স্থানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু

ফরিদপুরে ডিমের বাজারে অভিযান, ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

কুমিল্লায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

চুয়াডাঙ্গায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

৫ দিন পর বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :