রপ্তানিকারকদের সুবিধা নেয়ার সময় এটা নয়: নাজনীন

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ মার্চ ২০২০, ০৭:৪৮| আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২০, ২২:০৪
অ- অ+

করোনাভাইরাসের প্রভাবে চলমান সংকটকালে সাধারণ মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য ফান্ড তৈরির উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ধনীদের সুবিধা দেয়ার সময় এটা নয়। তারা যেন এ সময় সুবিধে না নেয়। এখন কাকে সুবিধা দেয়া হবে- আমাদের সীমিত সম্পদ বিবেচনায় সেটা নির্ধারণ করতে হবে।

বর্তমান কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলছিলেন ড. নাজনীন আহমেদ। সেখানেই তার উপর‌্যুক্ত মত উঠে আসে।

বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। এ ধরনের প্রণোদনা দাবি করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা। ড. নাজনীন মনে করেন, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের জন্য সহায়তা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা স্কিম থেকে একটা অংশ এনে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য রিফাইন্যান্সিং স্কিম করা প্রয়োজন।

ড. নাজনীন বলেন, ‘প্রথমত, এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে সাধারণ মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করার বিষয়ে। দিনমজুর, সাধারণ মানুষ, যারা দিন এনে দিন খায়, তাদের সহায়তা করতে হবে আগে। সাধারণ মানুষকে খাওয়ানোটা এখন টপ প্রায়োরিটি, যাদের খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা আছে।’

সব রোগের জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবার সুযোগ রাখার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন। বলেন, ‘এই সময়ে টপ প্রায়োরিটির দ্বিতীয়টি হলো স্বাস্থসেবা। যতটা সম্ভব এ সেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। আমরা দেখছি শুধু করোনা না, সাধারণ অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা এখন হুমকির মুখে পড়ে গেছে। ডাক্তারদের নিজের জন্য পর‌্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) নেই বলে করোনায় না যত রোগী মারা যাচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন অসুখে চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে বেশি।’

দেশের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন রপ্তানিমুখী খাতে সরকার যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদন দিয়েছে, তার ব্যবহার নিয়েও কথা বলেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। তিনি মনে করেন, এ টাকা দেশের এমন সংকটময় সময়ে এ খাত সংশ্লিষ্টদের নেয়া উচিত নয়। যে টাকাটা তাদের শ্রমিকের বেতনের জন্য চাইছেন, তারা সেটা না নিলে তা সরকার ব্যয় করতে পারত সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও চিকিৎসায়।

ড. নাজনীন বলেন, প্রণোদনার জন্য তারা (তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠান) সরকারের কাছে চাইছে, সরকার দিয়েছে। কিন্তু রপ্তানি খাতে যারা আছেন তাদের শ্রমিকের বেতন নিজেদেরই দেয়া উচিত। তারা এখন বলুক এই ৫ হাজার কোটি টাকা তাদের প্রয়োজন নেই। কিছু গার্মেন্ট মালিক অবশ্য বলছে তারা এ টাকা নেবেন না। একটা সাধারণ বা ছোট ব্যবসায়ী যদি তার কর্মচারীদের বেতন দিতে নিজের সঞ্চয় ভাঙতে পারেন, তাহলে ওনারা কেন পারবে না! বরং ওই পাঁচ হাজার কোটি টাকার ফান্ড ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য রিফাইন্যান্সিং স্কিমে দেয়া যেতে পারে। একটা জরুরি ফান্ড করে খুব অল্প সুদে দেয়া যেওেত পারে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাসহ পণ্যের সরবরাহ চেইন যাতে সচল থাকে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান ড. নাজনীন আহমেদ। কেউ কিছু তৈরি করলে তা যদি বাইরে না যায়, কিংবা কেনাকাটা না হয় তাহলে চাহিদাও তৈরি হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন চাহিদা নেই। বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে এখন সংকটকাল চলছে। কাজেই চাহিদাকে চাঙা করতে হলে সব ধরনের মানুষের কাছে টাকা থাকতে হবে। কেনাকাটার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

এখন এই করোনা সংকট যদি অল্প দিনের হলে মানুষের খাওয়া-পরা আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবস্থা করলে অর্থনৈতিক সংকট কিছু কাটিয়ে ওঠা যাবে। আর যদি সংকট প্রলম্বিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের খাওয়ানোর কথা যেমন চিন্তা করতে হবে, তেমনি চিন্তা করতে হবে চাহিদা কীভাবে চাঙা করা যায়। এ ক্ষেত্রে অনলাইন কেনাকাটার ব্যবস্থা রাখা এবং নিরাপদে পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আর এর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটা সংযোগ স্থাপন করে দিতে হবে। সেই প্রস্তুতি এখনই নিয়ে রাখা প্রয়োজন।

অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ বছর সরকারের ধান বেশি কেনার পরামর্শ দিয়ে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সামনের মাসে শুরু হবে বোরো ধানের মৌসুম। আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান এবার একফোটা অপচয় করার সুযোগ নেই। সরকারের অবশ্যই উচিত হবে অন্য বছরের চেয়ে এই বছর বেশি ধান কেনার ব্যবস্থা করা। যদি করোনা সংকট বেশি দিন হয় তাহলে অনেক মানুষকে খাওয়াতে হবে সরকারকে। যেহেতু এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এ মৌসুম শুরু হবে, তাই সেটা দিয়ে আগামীতে প্রয়োজনে খাদ্যের নিরাপত্তা দেয়া হবে। খাদ্যের ব্যাপারে আমার পরামর্শ থাকবে প্রকিউরমেন্টের প্লানটা সরকার এখই করবে। চালের দামও হয়তো কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা করতে হবে।’

খাদ্যের অভাবে কেউ যেন না মরেন এবং কৃষক যেন তার পণ্য সহজে পরিবহন করতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান এই অর্থনীতিবিদ।

সরকার রপ্তানি পণ্যে নগদ সহায়তার জন্য বাজেটে যে ‘ক্যাশ সাবসিডিয়ারির’ বরাদ্দ রেখেছে সেই টাকার কিছু অংশ গরিবদের জন্য এখন খরচ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন। ‘যেহেতু যতটা রপ্তানি হয় সরকার তার ওপর ক্যাশ সাবসিডি দেয়। এখানে সরকার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মতো এলোকেট করে রেখেছিল। ধরলাম এক হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে। এ টাকাটা সরকার নিশ্চিন্তে গরিব মানুষের জন্য ব্যয় করতে পারে।’

এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে গার্মেন্ট সেক্টরে এক শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ধরা আছে। পোশাক মালিকরা বলছেন, তাদের ১০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ বাতিল হবে। তাই যদি হয় তাহলে তো ৩০০ কোটি টাকা এখানে বেঁচে যাবে। সেটা সরকার সাধারণ মানুষের জন্য খরচ করুক।’

(ঢাকাটাইমস/২৯মার্চ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সমুদ্র অভিযানে সাহসিকতার জন্য আইএমও’র স্বীকৃতিস্বরূপ প্রশংসাপত্র পেল কোস্ট গার্ড
ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যা: চারজন গ্রেপ্তার, বিএনপির বহিষ্কার ৫ জন
দিল্লিতে ধসে পড়ল চারতলা ভবন, বহু মানুষ আটকে পড়ার শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক নিয়ে তিন দিনের আলোচনা শেষ, আশাবাদী বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা