করোনাকালে নিভৃতে মানুষের পাশে গণস্বাস্থ্য

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২২:৫৩ | প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৭

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রকোপে থমকে আছে সবকিছু। দেশে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে লকডাউন পরিস্থিতি। যে কারণে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। যে যেভাবে পারছে এসব মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সহায়তা। করোনা দেশে হানা দেয়ার শুরু থেকেই অসংখ্য অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।’

শুধু তাই নয়, এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে ক্রমেই সহায়তার আওতা বাড়াচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খাদ্য সহায়তার বাইরেও সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা, গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ নানা কাজ করছে গণস্বাস্থ্য। শুধু তাই নয়, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা দেয়া অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয়। সেখানে শুরু থেকেই চলমান রয়েছে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম।

তবে গণস্বাস্থ্যের এতসব কার্যক্রম অনেকটা নীরবে নিভৃতে চললেও সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে তাদের করোনা শনাক্তকরণ কিট নিয়ে। শেষ পর্যন্ত তারা করোনার কিট পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগবে করোনা টেস্ট করতে সেখানে গণস্বাস্থ্য সর্বোচ্চ তিনশ টাকায় টেস্ট করানোর পরিকল্পনা করছে।

করোনায় অসহায়দের জন্য যত উদ্যোগ

গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার কারণে লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রায় দশ হাজারের মতো পরিবারের পাশে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছেন এসব সামগ্রী।

গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হলে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ২ এপ্রিল শুরু হয় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। যা এখনো চলছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ১১ জেলার ২০ উপজেলায় আট হাজার ৯৮৩টি পরিবারের মাঝে সহায়তা দেয়া হয়। ঢাকা ছাড়া বাকি এলাকাগুলো হলো- গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা এবং নওগাঁ।

ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নূর এবং ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজের সহায়তায় ঢাকা এবং আশপাশে দুই হাজার ২৫১ পরিবারকে দেয়া হয়েছে খাদ্য সহায়তা।

জানা গেছে, প্রথমে খাদ্য সামগ্রীর তালিকায় চাল, ডাল, আলু, সয়াবিন তৈল, সরিষার তৈল, লবণ, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, সাবান দেয়া হলেও ক্রমে তাতে আইটেম যুক্ত করা হয়। পরে আটা এবং রমজান শুরুর পর ছোলা যুক্ত করা হয়েছে সহায়তার তালিকায়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তা করছে বলেও জানা গেছে।

গণস্বাস্থ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক পরিবারকে দেয়া সহায়তা প্যাকেটে ১৫ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, চার কেজি আটা, পাঁচ কেজি আলু, আধা কেজি সয়াবিন তৈল, সরিষার তৈল, আধা কেজি লবণ, এক কেজি পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, এক কেজি ছোলা ও একটি হাতধোয়ার সাবান দেয়া হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ম এলাকাতে নয় হাজার ৭৬৯ জন গর্ভবতী মাকে প্রসবপূর্ববর্তী এবং ৯২২ জনের গর্ভকালীন পরীক্ষা করা হয়েছে।

এদিকে লকডাউন শুরুর পর নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল যখন রোগী ভর্তিসহ চিকিৎসা কার্যক্রম অঘোষিতভাবে বন্ধ করে তখন বসে নেই গণস্বাস্থ্য। সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ গণস্বাস্থ্যের সকল হাসপাতাল ও সাবসেন্টারে স্বাস্থ্য সেবা চালু রেখেছে।

সাভারের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগীদের থার্মাল স্ক্যানারের সাহায্যে তাপমাত্রা নেয়া, শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, হাত ধোয়ার জন্য হ্যান্ডওয়াশ কর্নার বানানো হয়। চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিরে সবার জন্য মাস্কেরও ব্যবস্থা করা হয় হাসপাতাল থেকে। এছাড়াও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের অংশ হিসাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তার কর্ম এলাকা ও তার আশেপাশে ৭৪টি হ্যান্ডওয়াশ কর্নার তৈরি করেছে।

গণস্বাস্থ্যের সমন্বয়ক যা বললেন

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মঞ্জুর কাদের আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মহামারিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে অন্যদের মতো গণস্বাস্থ্যের আলাদা জনশক্তির প্রয়োজন হয় না। কারণ আমাদের চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকেলের লোকজন আছে। যে কারণে বিপদ শুরু হলে চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য কাজে আমরা লেগে যেতে পারি। করোনার সময়েও এমনটা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে রোগীর কাছে গিয়ে, কাউকে টেলিফোনে সেবা দিচ্ছি। গণস্বাস্থ্যের ঢাকা হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেড়েছে আগের তুলনায়। আমরা কোনো সেবা বন্ধ রাখিনি।

চিকিৎসা সেবার বাইরে অন্যান্য সহায়তা কিভাবে দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সমন্বয়ক বলেন, ‘শুরুতে আমরা নিজেদের সামর্থে্যর ভেতর থেকে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ট্রাস্টের গচ্ছিত ৮৫ লাখ টাকা দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য। বলেছেন প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে দেব তবুও মানুষের পাশে থাকতে হবে। এছাড়াও দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থানরত শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফান্ড সংগ্রহ করে পাঠাচ্ছেন। তাদের ধন্যবাদ। আমাদের পরিকল্পনা হলো যতক্ষণ পর‌্যন্ত সুযোগ থাকবে ততক্ষণ মানুষের পাশে থাকবো।’

(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/বিইউ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বৈষম্য নিরসনে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রধান বিচারপতির

তিন জেলায় বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

মোটরযানে হুটার-হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএর হুঁশিয়ারি

সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন ঠেকানো সম্ভব নয়: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নির্বাচন সংক্রান্ত সহায়তা দিবে ৯৯৯

দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ৩য় শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের

সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের

কুয়েতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :