আমাদের এসএসসি ও এখনকার সময়…

মির্জা গোলাম ইয়াহিয়া
  প্রকাশিত : ৩১ মে ২০২০, ২১:৪৯
অ- অ+

আজ এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। এবার করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফলাফল জানা যাচ্ছে শুধু ওয়েবসাইট ও মোবাইলের মাধ্যমে। গত কয়েক বছর ধরেই এভাবে রেজাল্ট জানা যাচ্ছিলো। কিন্তু এই বছর ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে রেজাল্ট জানার পন্থাই আর রাখা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এটা করা হয়েছে।

যারা ভালো ফল করেছে তাদের প্রতি আমার অভিনন্দন। আর যারা এবার আশানুরূপ ফল করতে পারেনি, তাদেরও ভেঙ্গে পড়লে হবে না। দুনিয়ার অনেক ফেল করা লোকজনই কিন্তু পরববর্তী জীবনে বড় কিছু হয়েছে। যার মাধ্যমে পাস করা শিক্ষার্থীদের পেছনে ফেলে দিয়েছে তারা। তাই ফেল মানেই সবকিছু শেষ নয়। বরং নতুন করে শুরু। এ বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। খারাপ রেজাল্ট করা সবার প্রতি আমার অন্তরের ভালোবাসা থাকলো।

প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন আমার নিজের স্কুল জীবনের স্মৃতি মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে আমার স্কুলের কথা। আমাদের সময় এসএসসি পাস করা সহজ বিষয় ছিলো না। এতো পাস, এতো জিপিএফাইভ- এসব ছিলো না। আমাদের সময় তো আসলে গ্রেডিং সিস্টেমেই ছিলো না। তখন ছিলো ডিভিশন।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম আমি। আমার এসএসসি ব্যাচ - ১৯৭৮। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম আমি। ওই সময়ের কিছু বাল্য বন্ধুর কথা মনে পড়ছে আমার। অনেককেই ভুলে গেছি। কারো কারো নাম মনে আছে কিন্তু চেহারা স্মরণ করতে পারি না।

এই মুহূর্তে মনে পড়ছে গোলাম হোসেন, মহিউদ্দিন, রমিজ রাজা, মাহমুদুর রহমান টুকু, মনির, ফারুক, দুলাল, তুষার, সৈয়দ শাখাওয়াত হোসেন, রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এ এম আমিন উদ্দিন, কাজী আবুল কালাম, নজরুল, রচি, মনির, হুমায়ুন কবির মনি, মনতা, লিটন, নাজির, মামুন, মকবুল, গোলাম মোস্তফা পিয়ার, রফিক, ফজলু, ইসমাইল হোসেন টিপু, এহসান, জামিল, শওকত, সাত্তার, আহমাদউল্লাহ, মাহমুদ হোসেন শিপন, ফখরুল আমিন খান মৃদুলের কথা। যাইহোক, এসএসসির প্রসঙ্গে ফিরে আসি। আমাদের সময় মোবাইল ছিলো না। ইন্টারনেট ছিলো না। রেজাল্ট প্রকাশিত হতো দৈনিক পত্রিকায়। এ ধরনের দিনে পত্রিকা সংগ্রহ করা কঠিন ব্যাপার ছিলো। আমার রেজাল্টের জন্যও পত্রিকা সংগ্রহ করতে পারেনি, সবাই আগেই কিনে ফেলেছিলো। তবে আমরা একটু সৌভাগ্যবান ছিলাম। কারণ আমাদের বাসা ছিলো আজিমপুরে। স্কুলও একই এলাকায়। এখান থেকে কাছেই বকশীবাজারে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। তাই আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসএসসির রেজাল্ট বকশীবাজারে গিয়েই জানতে পারতো। আমিও এভাবেই আমার রেজাল্ট জেনেছিলাম। তখন শিক্ষাবোর্ডের দেয়ালে রেজাল্ট শিট টানিয়ে দেয়া হতো। যেখানে রোল নম্বর ও ফলাফল থাকতো। শত শত শিক্ষার্থীর ভিড়ে খুব কষ্ট করে নিজের রোল নম্বর পাসের তালিকায় খুঁজে পেয়েছিলাম।

পাস করা তখন কঠিন বিষয় হলেও আমাদের ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের রেজাল্ট খুব ভালো হতো। প্রতি বছর ২-৩ জন বোর্ড স্ট্যান্ড করতো। স্টার মার্ক পেতো বেশ কয়েকজন। তাই আমার রেজাল্ট নিয়ে আমি খুশি হতে পেরেছিলাম। তবে আমার বন্ধুদের রেজাল্ট ছিলো আরো ভালো। তবু এসএসসি পাস করাটা তখনো অনেক গৌরবের ব্যাপার ছিলো। এসএসসিতে আমার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিলো ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী হাই স্কুল। তখন বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা একই দিনে হতো। ইংরেজির ক্ষেত্রেও তাই। সকালে প্রথম পত্র আর বিকেলে দ্বিতীয় পত্র। এক দিনেই দুটি পরীক্ষা দেয়া খুব কঠিন ছিলো। মানসিক চাপ অনেক বেশি হতো। আমাদের সময়ে ঢাকায় কোচিং সেন্টার ছিলো না বললেই চলে।

তখন বাড়িতে লজিং মাস্টার থাকতো। আমাদের লজিং মাস্টার ছিলো না। বাসায় এসে পড়াতেন স্কুলেরই একজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রও বাড়িতে এসে আমাদের পড়াতেন। এসএসসির পরীক্ষার আগে আমাদের স্কুল থেকে বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়েছিলো। এখনো সম্ভবত এর প্রচলন আছে। স্কুলের বন্ধুদের পাশাপাশি শিক্ষকদের কথাও খুব মনে পড়ে। আমাদের হেডমাস্টার ছিলেন আব্দুল রশীদ সরকার স্যার, অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার ছিলেন মোহাম্মদ আবুল হাসেম স্যার। ক্লাশ টেনে ক্লাশ টিচার ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ স্যার। আমাদের ক্লাশ নিতেন আলী হোসেন আখুঞ্জী স্যার, জোনায়েদউল্লাহ স্যার, হাফিজউদ্দিন স্যার, আমিনুল ইসলাম স্যার, জাহাঙ্গীর স্যার, আব্দুর রশীদ স্যার।

আরো অনেক স্যার ছিলেন, যাদের সবার নাম মনে পড়ছে না। জীবনচলার পথে সব ক্লাশের সব শিক্ষকই ভূমিকা রেখেছেন। আজকের দিনে তাদের সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা।

লেখক: হেড অব পাবলিক রিলেশন্স অ্যান্ড মিডিয়া ডিভিশন, সিটি ব্যাংক

ঢাকাটাইমস/৩১মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা