এসএমই পরিচালক ইসমাত জেরিন খান

‘প্রণোদনায় দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে’

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২০, ২০:৩২| আপডেট : ০৯ জুন ২০২০, ১২:৩২
অ- অ+

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই) পরিচালক ইসমাত জেরিন খান। তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটরিং এবং অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে হবে। ব্যাংকে লেনদেন নেই এমন উদ্যোক্তারা কীভাবে এই প্রণোদনার টাকা পাবেন তার জন্য একটা গাইডলাইন প্রয়োজন।

বুধবার ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসএমই পরিচালকের এসব অভিমত উঠে আসার পাশাপাশি এর জন্য কিছু করণীয় সম্পর্কে বলেন তিনি।

করোনাভাইরাসের ক্ষতি মোকাবেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ শতাংশ হারে সুদের ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহিতা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ইসমত জেরিন খান যারা দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে তাদের এই প্রণোদনা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেওয়ার অপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের কাছে এ বিষয়ে ডাটাবেজ আছে। তারা জানেন কারা প্রকৃত উদ্যোক্তা।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের আলাদাভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ইসমাত জেরিন খান। বলেন, তারা যেন সহজে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার টাকা পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ব্যাংকের সঙ্গে যাদের লেনদেন নেই সেসব উদ্যোক্তা কীভাবে এ প্রণোদনার টাকা পাবেন তার জন্য একটা গাইডলাইন তৈরি করা দরকার।

এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার যে ঋণসুবিধা দিয়েছে তাকে খুবই ভালো উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে ইসমাত জেরিন খান বলেন, এখন এর সুষ্ঠু মনিটরিং করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা যেন এর সুবিধা পান সে ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

এসএমই ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করে ঋণ বিতরণ করলে তা ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন সংস্থাটির এই পরিচালক। ইসমাত জেরিন খান বলেন, ‘ঋণ নেয়ার পর তা ফেরত দেয়া বড় বিষয়। সেটা ফেরত দিতে গ্যারান্টরের প্রয়োজন। এ গ্যারান্টর কে হবে, এ ব্যাপারে একটা গাইডলাইন প্রয়োজন। বড় উদ্যোক্তা আর ছোট উদ্যোক্তা দুজনেরই ঋণ নেয়ার ক্যাটাগরি একই রকম হলে সমস্যা।’

গ্রামীণ যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে কাজ করেন তারা কীভাবে প্রণোদনা-ঋণের আওতায় আসবেন? ইসমাত জেরিন বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে কাজ করছেন কিন্তু যাদের ব্যাংকিং চ্যানেল নেই, তাদের জন্য আলাদা স্কিম চালু করে আলাদা বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। প্রয়োজনে এসএমই ফাউন্ডেশন অথবা এলাকাভিত্তিক যে চেম্বার এসোসিয়েশন আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের তথ্য বের হয়ে আসবে। তাদের হয়তো কাগজে কলমে কিছু ডকুমেন্ট থাকবে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সহোযোগিতা করা যাবে।

নারী উদ্যোক্তাদের অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ দেখছেন এসএমই ফাউন্ডেশন পরিচালক, ‘অনেকে ব্যাংকে লেনদেন ফলো আপ করে আসেনি। আবার কারও কারও ট্রেড লাইসেন্সও নেই। চেম্বার অ্যাসোসিয়েশন জানে তারা ব্যবসা করছে। এই নারী উদ্যোক্তারা বড় বিপদে আছে। তারা কীভাবে প্রণোদনার টাকা পাবেন, সেটা বের করা আগ্রাধিকারের বিবেচনা রাখে।’

দেশে করোনাভাইরাসের প্রভারের পরপরই সরকার বেশ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করে। বড় ‍উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা- সবার জন্য প্রণোদনা দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়য়। এখান থেকে যারা লোন নেবেন, তারা ৪ শতাংশ সুদ দেবেন, আর বাকি ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি দেবে।

ইসমাত জেরিন খান বলেন, সরকারের উদ্যোগটা খুবই ভালো। কিন্তু ২০ হাজার কোটি টাকার ফান্ডটায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে লোনের ব্যবস্থা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটা ফরম দেয়া হয়েছে যেখানে সব ডকুমেন্ট সাবমিট করে লোন নিতে হবে। এখন অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন নেই। এখন ব্যাংক বলতে পারে উদ্যোক্তারা তাদের কাছে যায়নি। তারা টাকা কাদের দেবে। এটা যেন না হয়।’

ব্যাংক ওই উদ্যোক্তাদের চেনে না এটা ঠিক, কিন্তু এফবিসিসিআই, চেম্বার এসোসিয়েশন, এসএমই ফাউন্ডেশন, ফেডারেশন, জেলা পর‌্যয়ের চেম্বারগুলো চেনে। তাদের সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ করতে হবে বলে অভিমত ইসমাত জেরিন খানের। বলেন, ‘এর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। চেম্বার এসোসিয়েশনকে যুক্ত করা প্রয়োজন। শুধু বলা মাত্র ব্যাংক টাকা দেবে তা না। ব্যাংককে তো আগেও নয় শতাংশ সুদে টাকা দিতে বলা হয়েছিল। তখন কি উদ্যোক্তারা টাকা পেয়েছেন?’

ইসমাত জেরিন খান মনে করেন, প্রণোদনার টাকা ঢালাওভাবে না ‍দিয়ে সেক্টরভিত্তিক চিন্তা করতে হবে। সঠিক উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছে কি না দেখতে হবে। ফান্ডের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সরকারের মনিটরিং সবচেয়ে বেশি জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/৩জুন/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পটুয়াখালী-৩: নুর, মামুন নাকি রনি?
লেবাননে ১০ কোটি ডলারের বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
এনআরবিসি ব্যাংকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ফরেন ট্রেড’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: এখনো ঘটনার বিস্তারিত কারণ জানতে পারেনি র‍্যাব
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা