অবহেলায় খালিশপুরে স্মৃতি বিজড়িত ‘নীল কুঠিবাড়ি’

মো. শাহিন রেজা
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২০, ১৫:২৮| আপডেট : ২৬ জুন ২০২০, ১৫:৩২
অ- অ+

বাংলাদেশের আনাচে কাঁনাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য। কিন্তু বেশির ভাগই অবহেলিত। ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কালের বিবর্তনে। এমনই এক প্রচীন স্থাপত্য নীলকরদের স্মৃতি বিজড়িত 'নীলকুঠি'। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় মানুষের কাছে কাচারী বাড়ি হিসাবে পরিচিত এই নীলকুঠি। খালিশপুর বাজারের পশ্চিম পাশে ৯ একরের ও বেশি যায়গা নিয়ে নীল কুঠিবাড়ি অবস্থিত।

দালানটি আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছিল অনেকের এমনটিই ধারনা করে। এ কুঠিবাড়ি নির্মাণের মূল উদ্যেশ্য ছিল পূর্ব বাংলার কৃষকদের নীল উৎপাদনে উৎসাহী করা ও নীল চাষ দেখাশোনা করা। ইংরেজ মি. ডেভরেল এ কুটিবাড়ি থেকে এই অঞ্চলের নীল চাষ পরিচালনা করতো।

শিল্পবিপ্লবের পথিকৃৎ ছিল ইংল্যান্ড। ঐ সময় ইংল্যান্ডে সাদা কাপড়ের চাহিদা ছিল অত্যাধিক। কাপুড়ের সাদা রং বজায় রাখার জন্য নীল ছিল একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। ভারত বর্ষ বৃটিশদের উপনিবেশ হওয়ায় বলপূর্বক ইংরেজরা ভারত বর্ষকে নীল চাষের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলে। নীল চাষের ফলে জমির উর্বরতা হরাতো তাই চাষিদের নীল চাষে অনীহা ছিল, অধিকিন্তু চাষিরা ইংরেজদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যও পেত না। যারা নীল চাষ করতোনা তাদের নানা ভাবে নির্যাতন করা হত। এই কুঠিরেরই কিছু কক্ষ নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হত।

পরবর্তীতে ইংরেজরা উপমহাদেশে থেকে বিতাড়িত হলে কুঠির ভবনটি সিও অফিস হিসাবে ১৯৫৬-৫৭ ও ১৯৮৩-৮৪ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৮৪ সালের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ছিল।

বর্তমানে কুঠিরটি জরাজীর্ণ, সংস্কারের অভাবে কুঠিবাড়িটি ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে অবস্থান করছে। ৬৫ বছর বয়স্ক স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আলি জানান বেশ কয়েক বছর আগে সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা আর আলোর মুখ দেখিনি। কুঠি বাড়ির চারপাশে রয়েছে শত বছরের বড় বড় আম গাছ। কুঠিবাড়ি পাশে আরো অনেক বাড়ি ঘর ছিল যা বৃটিশদের গাড়ি রাখাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হত। এছাড়াও ছিল বৈকালীন অবকাশ যাপনের জন্য যায়গা যা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নীল কুটিবাড়িটিও অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।

কুটিবাড়ি এক পাশে সরকারি হামিদুর রহমান কলেজ ও স্মৃতি জাদুঘর অবস্থিত। এই কুটিবাড়ির যায়গা খাস জমির তালিকাভুক্ত। স্থানীয়রা জানালেন সরকার এখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ইকো পার্ক তৈরি উদ্যোগ নিয়েছে।

কুঠিবাড়িটি স্থানীয় মানুষের উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের সাক্ষ্য দিচ্ছে ফলে এটি এখন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করছে। এখানে ইকোপার্ক তৈরি হলে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থার সাথে সাথে সরকার অর্থিক ভাবে লাভবান হবে। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষেরা এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।

এছাড়াও উপজেলার দত্তনগরে এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামার, সুন্দরপুরের জমিদার বাড়ি, কপোতাক্ষ নদ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে খালিশপুরের নীলকুঠি বাড়ি অতি শীঘ্রই সংস্কার এবং ইকো পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি করে দিবে।

লেখক: শিক্ষক ও নাগরিক সাংবাদিক

ছবি তুলেছেন সৈকত

ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবুল বারকাত গ্রেপ্তার
শতভাগ পাস, প্রায় সবাই জিপিএ-৫: ক্যাডেট কলেজের উজ্জ্বল সাফল্য
৩ থেকে ১০ জুলাই: যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে ৩৪৫ অপরাধী আটক
মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সে সেনাবাহিনীর অভিযান: শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আটক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা