চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এই নারী!

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২০, ১৮:০৫
অ- অ+

শরীয়তপুরে অফিস সহায়ক (রাজস্ব প্রশাসন) পদে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে এক নারী ও তার ভাইয়ের কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হালিমা খাতুন এই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ ঘটনায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার নুপুর ৭ জুন হালিমা খাতুন ও তার বাবা আলী আহম্মদ আকনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, চাকরি দেয়ার নামে গোসাইরহাট উপজেলার নাগেরপাড়া গ্রামের শাহ আলম ব্যাপারীর মেয়ে খাদিজা আক্তার নুপুর ও তার ছোট ভাই নাজমুল ব্যাপারীর কাছ থেকে কয়েক দফায় ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন হালিমা খাতুন।

এরপর ওই ভাই-বোনকে শরীয়তপুরে অফিস সহায়ক (রাজস্ব প্রশাসন) পদে চাকরিতে যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র দেয়া হয়। নিয়োগপত্রে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর রয়েছে। গত ১ এপ্রিল তাদের কর্মস্থলে যোগদানের কথা উল্লেখ করা হয় নিয়োগপত্রে। ওই দিন অফিস সহায়ক পদে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন নিয়োগপত্র ভুয়া।

খাদিজা আক্তার নুপুরের স্বামী মাহবুব আলম বলেন, আমার স্ত্রী নুপুর ও শ্যালক নাজমুলের চাকরির ব্যাপারে হালিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন হালিমা গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এমএলএসএস পদে চাকরি করেন। হালিমা বলেন, আমার সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। কয়েকজনকে চাকরি দিতে পারব এবং চাকরি দিতে টাকা লাগবে। চাকরি না হলে টাকা ফেরত দেব। তার কথা বিশ্বাস করে স্ত্রী ও শ্যালকের চাকরির জন্য ঋণ করে কয়েক দফায় হালিমাকে ২৪ লাখ টাকা দেই। টাকা দেয়ার সময় হালিমার বাবা আলী আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।

মাহবুব আলম বলেন, আমার স্ত্রী ও শ্যালককে একটি করে নিয়োগপত্র দেন হালিমা। সেই নিয়োগপত্র নিয়ে স্ত্রী ও শ্যালক যোগদান করতে গেলে বলা হয় নিয়োগপত্র ভুয়া। এরপর ২৪ লাখ টাকা হালিমার কাছে ফেরত চাইলে টালবাহানা শুরু করেন। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও তার স্বজনদের জানালেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। তাই আমার স্ত্রী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চাকরির দরকার নেই, আমরা টাকা ফেরত চাই।

এছাড়াও গোসাইরহাট ধীপুর গ্রামের আবু কালাম মীরের স্ত্রী মনুজা বেগমকে চাকরি দেবে বলে তার কাছ থেকে নগদ এক লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং একটি বাড়ি একটি খামার, আশা, নুসা, ব্র্যাক, কালসা বিআরডিবি, এসডিএস, সেবাসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে তার মাধ্যমে ঋণ তুলে প্রায় তিন লাখ ৮৫ হাজার হাতিয়ে নিয়েছেন হালিমা খাতুন।

মনুজা বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ । স্বামী ভ্যান চালক । আর আমি মানুষের বাসায় রান্নার কাজ করি। হালিমার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে আমাকে চাকরি দেবে বলে নগদে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা নিয়েছেন হালিমা। আর বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা তুলে তাকে দিয়েছি। টাকা দিয়ে আমার চাকরিতো হলো না। টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। তাই সারা জীবনের গুচ্ছিত বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া ৬ শতক ও আমার ক্রয় করা ২ শতক জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবো।

ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হালিমা খাতুন বলেন, ২৪ লাখ নয়; খাদিজা আক্তার নুপুরের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা নিয়েছি। চার লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। বাকি টাকা প্রতি মাসে কিস্তিতে ফেরত দেব।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলমগীর হুসাইন মুঠোফোনে বলেন, হালিমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক স্যার তদন্তর জন্য একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছে। তদন্ত চলছে । ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার নুপুর ছাড়াও বেশ কয়েকজন আমার কাছে এসেছেন। আমি তাদের জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করতে বলেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী আবু তাহের বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্ত নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পটুয়াখালী-৩: নুর, মামুন নাকি রনি?
লেবাননে ১০ কোটি ডলারের বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
এনআরবিসি ব্যাংকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ফরেন ট্রেড’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: এখনো ঘটনার বিস্তারিত কারণ জানতে পারেনি র‍্যাব
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা