করোনাকালে যাদের গরম পানীয় পান করা অনুচিত

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:২৯ | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৫১

বৃষ্টি ভেজা দিনে শরীর চাঙ্গা করতে চাই শুধু এক কাপ গরম চা। এমনই গুণ চায়ের। শুধু কী মনের শান্তিতে চা পান? মোটেই না। এখন নানা কারণে চা পান করেছে স্বাস্থ্য সচেতনরা। বেশিরভাগ মানুষই করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। নানারকম টোটকাও প্রয়োগ করছেন অনেকে। কিন্তু এ বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সবার শারীরিক অবস্থা একইরকম নয়। তাই সবার জন্য একইরকম টোটকা কার্যকর হবে না। এতে উল্টে ক্ষতি হতে পারে।

এখন অনেকেই ভেষজ চা খাচ্ছেন। আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, মধু, পাতিলেবু, তুলসিপাতা দেওয়া চা খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে স্বাস্থ্য ভালও হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই চা অতিরিক্ত পান করলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে। যারা সর্দি-কাশিতে ভোগেন, তাদের পক্ষে এই চা খাওয়া উপকারী। এর ফলে তাদের শরীর ভাল হতে পারে। কিন্তু যাদের পিত্ত বা বাতের সমস্যা আছে, তাদের পক্ষে উষ্ণ পানীয় সেবন ঠিক নয়। ভেষজ চা তাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

একদিনে কতবার ভেষজ চা খাওয়া যেতে পারে? চিকিৎসকরা বলছেন, শারীরিক অবস্থা বুঝে এই চা খাওয়া উচিত। যাঁদের বাত রয়েছে, তারা একদিনে সর্বোচ্চ দুইবার এই চা খেতে পারেন। এই ধরনের ব্যক্তিরা ভেষজ চায়ে সামান্য ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে যাদের শরীরে পিত্তর সমস্যা আছে, তাদের দিনে একবারের বেশি ভেষজ চা খাওয়া উচিত নয়। সন্ধেবেলা খেলেই সবচেয়ে ভাল হয়। খালি পেটে কোনওদিনই এই চা খাওয়া উচিত নয়। যাদের সর্দি-কাশির সমস্যা আছে, তারা দিনে দু-তিনবার ভেষজ চা খেতে পারেন। এই ধরনের ব্যক্তিদের ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে দারুণ কাজ দিতে পারে ভেষজ চা।

এই ধরনের চা বেশিমাত্রায় খেলে শরীরের কী ক্ষতি হতে পারে? চিকিৎসকদের মতে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে রোজ ভেষজ চা খেলে উল্টে অনেকরকম ক্ষতি হতে পারে। একজন মানুষের বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং আবহাওয়া বিচার করে তবেই তার জন্য ভেষজ চা তৈরি করা উচিত। সবার ক্ষেত্রে এই চা সমান কাজ দেয় না। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে তবেই ভেষজ চা খাওয়া উচিত। ১০০ মিলিলিটার পানিতে ভেষজ চায়ের সব উপকরণ দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি অর্ধেক করে নিয়ে তবে খাওয়া যেতে পারে।

ভেষজ চা ঘরোয়া টাটকা উপাদান দিয়ে নিজে বানিয়ে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সব চা কী সবাই খেতে পারেন। কোন চা কখন খাবেন। কীভাবে পান করা উচিত ভেষজ চা? চলুন জেনে নেই।

তুলসি চা

একবাটি পানিতে একমুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে মেশান এক চামচ মধু আর দুইচামচ লেবুর রস। মধু দেবে এনার্জি, লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। আর তুলসির প্রভাবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

শুকনা কাশির প্রকোপ কমাতে চাইলে এতে ধনে ও আদা মিশিয়ে নিন। প্রদাহের প্রবণতাও কমবে তাতে।

কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এই চা না খাওয়াই ভাল। যেমন-

গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাবেন না। কারণ তুলসিতে আছে এস্ট্রাজল যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে।

ডায়াবেটিসের ওষুধ খেলে বা ইনসুলিন নিলে নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় বলে জানা গেছে।

রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, যাদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তারা তুলসি খাওয়ার আগে দুইবার ভাববেন। কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের কিছু ক্ষতি হতে পারে।

দারুচিনি চা

দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারুচিনির গুড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু-র মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। দারুচিনির কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লেবুর ভিটামিন সি এর কাজও তাই। সঙ্গে যুক্ত হবে মধুর এনার্জি। বেশ খানিকক্ষণ চাঙ্গা থাকার অব্যর্থ পানীয়। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার সুগার কমাতে পারে বলে যাঁর ডায়াবিটিসের ওষুধ চলছে, তিনি বুঝেশুনে খাবেন।

অশ্বগন্ধা চা

রোজ সকালে বা বিকেলে এক কাপ অশ্বগন্ধার চা খেতে পারেন। এক কাপ ফুটন্ত পানিতে এক চা-চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুড়ো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন মিনিট ১০-১৫। ছেঁকে লেবুর রস ও মধু দিয়ে খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমবে। অশ্বগন্ধার জীবাণুনাশক গুণও আছে। কমবে মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার।

দুধ চা এর ভক্ত হলে পানির বদলে ফুটন্ত দুধে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মিশিয়েও চা বানাতে পারেন। তাতে এলাচ বা আদা মেশালেও কোনও বাঁধা নেই। তবে চিনির বদলে মধু মেশালে উপকার মিলবে বেশি।

হলুদ চা

আধ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচের গুঁড়োতে ফুটন্ত পানি মেশান। এতে মেশান একটা গোটা লেবুর রস আর দেড় চামচ মধু। সকাল-বিকেল খেলে ইমিউনিটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না।

পুদিনা চা

ফুটন্ত পানিতে মেশান রোজমেরি। তাতে দিন ১০-১২টা পুদিনা পাতা। দেওয়ার আগে একটু কুচি কুচি নেবেন যাতে গন্ধটা পুরোপুরি বেরোয়। ১৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। তৈরি পুদিনা চা।

আদা চা

এক চা-চামচ আদা কুচি, দুটো লবঙ্গ, এক ইঞ্চি দারুচিনি থেঁতো করে দুইকাপ পানি দিয়ে ফোটান। তাতে দিন ৩ ইঞ্চি কমলালেবুর খোসা। কম আঁচে ফোটান ১৫ মিনিট। দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান। জ্বর-সর্দি-গলা ব্যথা, সবের আরাম হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :