হাঁসের খামারে বদলে গেল কালামের জীবন

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৭

হাঁসের খামার গড়ে চমক সৃষ্টি করেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের মধ্য উমানন্দ জামতলা বাজারের চায়ের দোকানদার আবুল কালাম আজাদ। দুই বছরে শুধু নিজে স্বাবলম্বী হননি, প্রেরণা জুগিয়েছেন অন্যদেরও। সেই সাথে পাল্টে গেছে তার অভাবের জীবন।

জামতলা বাজারের চায়ের দোকানি আবুল কালাম আজাদ টিভি ও ফেসবুকে হাঁস লালন করার দৃশ্য দেখে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর অল্প অল্প করে জমাতে থাকেন টাকা। দু’বছর আগে চায়ের দোকানের ব্যবসা ছেড়ে জমানো প্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে শুরু করে উন্নত জাতের হাঁস পালন। প্রথমে ২৫/৩০টি হাঁস দিয়ে শুরু করেন খামারের স্বপ্ন। সেই শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আবুল কালাম আজাদকে। এরপর গত দু’বছরে ছোট বড় মিলিয়ে তার খামারে বর্তমান প্রায় ছয় হাজারের অধিক হাঁস রয়েছে। খামারে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করছেন। ডিম পারা হাঁস রয়েছে ১০০টি। পাশাপাশি দু’শতাধিক দেশীয় মুরগি পালন করার পাশাপাশি মুরগির বাচ্চাও উৎপাদন করছেন তিনি। দুই দিনে এক লট অর্থাৎ ১২শ হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনে তার খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেন প্রায় ৩৫ হাজার টাকায়। খরচ বাদ দিয়ে সব মিলিয়ে মাসে আয় হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আবুল কালাম আজাদ প্রথমে ১৫ হাজার টাকায় দুটি পুকুর দুই বছরের জন্য লিজ নেন। সেই পুকুরে হাঁস পালনের পাশাপাশি সেখানে মাছ চাষ করছেন। ফলে মাছও বিক্রি করছেন। সেই সাথে হাঁসেরও খাবার জুটছে। অভাবের সংসারে ১০ জনের ভরণ পোষণ মেটাতে হিমশিম খেতে হতো আবুল কালাম আজাদকে। হাঁস-মুরগির খামার করে অনায়াসে সংসারের অভাব দূর করার পাশাপাশি স্বচ্ছলতা ফিরেছেন তিনি। তার খামারে এখন রয়েছে উন্নতজাতের খাকি ক্যাম্বল, জেনডিন, রানাডা ও ব্লাকো জাতের হাঁস। তার এই খামারের আয় ও উন্নতি দেখে প্রতিবেশীরা খুশি।

তবে এই খামারির অভিযোগ, উলিপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা না পাওয়ায় পাশের গাইবান্ধা জেলার সুদরগঞ্জ উপজেলা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এতে করে কিছুটা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এই খামারিকে। এছাড়াও করোনায় প্রায় চার শতাধিক হাঁস-মুরগি মারা গেছে।

খামারি আবুল কালাম আজাদ বলেন, চায়ের দোকান করার সময় টেলিভিশন, মোবাইল ও ফেসবুকে সরকার খামারের উপর খুব উৎসাহ থেকে আমি খামার শুরুর স্বপ্ন দেখি। সেই থেকে চায়ের দোকান না করে হাঁসের খামার করার সিদ্ধান্ত নেই । স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জমানো এক লাখ টাকা সংগ্রহ করে চায়ের দোকান বাদ দিয়ে শুরু করি খামার। বাড়তি শ্রমিক কাজ না করলেও পরিবারের স্ত্রী, সন্তান এবং পুত্রবধূরাও সহযোগিতায় করছেন। বর্তমানে এই খামারে ৬/৭ লাখ টাকা পূঁজি রয়েছে।

স্থানীয় নুরবক্ত মিয়া জানান, আবুল কালাম আজাদ ভাই গ্রামে খামার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। অনেক বেকার যুবক তার খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। চাকরির পেছনে না ছুটে অল্প পুঁজিতেই এ ধরনের খামার তৈরি করে বেকার ছেলেমেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্ভব বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, স্বল্প পূঁজি নিয়ে আবুল কালাম আজাদ যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, তেমনিভাবে বেকার যুবকরাও যদি এগিয়ে আসে, তাহলে আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপূর্ণ হবে। পাশাপাশি দরিদ্রতা দূরণ হবে। এছাড়াও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ হতে সহযোগিতার করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :