বগুড়ায় আলুর দাম নাগালে আনতে কোল্ড স্টোরেজে অভিযান

এনাম আহমেদ, বগুড়া
  প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০২০, ২০:৪৫
অ- অ+

সরকারের বেঁধে দেয়া দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না বগুড়ার কোথাও। পাইকারি এবং খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪৫ টাকা কেজিতে। হিমাগার থেকেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৫ টাকায়, যে কারণে চাইলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করতে পারছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, জেলা প্রশাসন থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাইকারি ও খুচরা বাজার এবং হিমাগারগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এর আগে গত ২০ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ ও হিমাগার পর্যায়ে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

বগুড়ার রাজাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পাইকারি কার্ডিনাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা কেজি এবং পাকড়ি আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৮-৪০ টাকায়। এছাড়া শহরের ফতেহ আলী এবং খান্দারের খুচরা বাজারে কার্ডিনাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি এবং পাকড়ি ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে।

রাজাবাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী পার্বতী ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী লক্ষণ চন্দ্র বণিক জানান, আমরা সরকারের বেধে দেয়া দামেই বিক্রি করতে চাই। কিন্তু হিমাগারগুলো থেকে আমাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। আমাদের পাইকারি ব্যবসায়ীরা হিমাগারগুলো থেকে কিনেছে ৩৩/৩৪ টাকা কেজি কার্ডিনাল আলু এবং পাকড়ি আলু কিনেছে ৩৫/৩৬ টাকা কেজিতে। অথচ হিমাগার থেকে আমাদের ২৭ টাকা কেজির মেমো ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। আলু কেনার পর আবার বাজারে নিয়ে আসতে প্রতি কেজিতে ৩ টাকার মতো খরচ হয়। তাহলে আমরা কিভাবে বিক্রি করব? এখন আমাদের লোকসান করে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।

এএইচজেড কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান অ্যাপোলো জানান, আমাদের হিমাগারে যেসব আলু সেগুলো আমাদের না। বিভিন্ন ব্যবসায়ী রেখেছেন। তারাই এখান থেকে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর আমরা ওই দামেই বিক্রির নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছি। তাদের বলেছি, সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করার জন্য। কিন্তু আজকেও এখান থেকে আলু ৩৩/৩৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছে হিমাগারে আলু রাখা ব্যবসায়ীরা। ওইসব ব্যবসায়ী যদি সরকার নির্ধারিত দাম না মানে আমরা কি করব?

এদিকে রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ জানিয়েছেন, এবার আলু প্রথম থেকেই ঘাটতি ছিল। এর মধ্যে আবার আলুর দাম কম থাকায় করোনার সময় প্রচুর আলু ত্রাণ হিসেবে দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ওই সময়টাতেই প্রায় ১৫ হাজার টন আলু বগুড়া এবং রংপুর বেল্ট থেকে নেপালে রপ্তানি করা হয়েছে। আলুর কিছুটা সংকট আছেই। এবার কয়েক দফা বন্যার কারণে আগাম আলুও কৃষকরা চাষ করতে পারেনি যে কারণে নতুন আলুও খুব সম্প্রতি বাজারে আসছে না। যদি বন্যায় সমস্যা না হতো, তাহলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আগাম জাতের আলু বাজারে পাওয়া যেত। নতুন আলু নামলে দাম বেশিই হয়। কিন্তু যখন সরবরাহ বেশি থাকে, তখন আলুর দামও কমে। তবে হিমাগারগুলো থেকে যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করে, তবে আমাদের পাইকাররা কেজিতে ১ টাকা লাভ করেও বিক্রি করতে রাজি আছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে আলু উৎপাদনে শীর্ষ জেলা বগুড়া। দ্বিতীয় রংপুর জেলা , তৃতীয় দিনাজপুর এবং চতুর্থ জয়পুরহাট। দেশের আলুর চাহিদা মেটায় উত্তরাঞ্চেলের জেলাগুলো। বগুড়া জেলায় ১ বছরে আলুর চাহিদা থাকে ১ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে জেলায় গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১২ লাখ ২০ হাজার টন আলু। অতিরিক্ত আলু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের চেয়ে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৭ হাজার মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন কম হয়েছে।

এদিকে জেলার আলু চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে আলু চাষ করে তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ফলন সংগ্রহ করতে কৃষকের খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকারও বেশি। এক বিঘা জমি থেকে ফসল সংগ্রহ হয় ১০০ থেকে ১১০ মণ। সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কৃষকরা ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা প্রতি মণ আলু বিক্রি করতে পেরেছেন। ফলে এক বিঘা জমিতে কৃষকরা ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে উঠাতে পেরেছিল ৩২ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকা। যে কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আলু চাষের জমি কম ছিল। ফলে এবার উৎপাদনও কম হয়েছে।

জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাছিম রেজা জানান, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার থেকে বগুড়ার সব উপজেলায় কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালানো হচ্ছে। সমস্যা আসলে কোল্ড স্টোরেজেই। সংকটটা তৈরি করছেন তারাই। কারণ সেখানে বড় ব্যবসায়ীরা ২ হাজার/৩ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করে রেখেছেন। যেগুলো তারা বের করছেন না। আমরা প্রত্যেক কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানার টার্গেট করেছি। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রত্যেক কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানা করা হবে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে আলু মজুদ করে রাখার অপরাধে শাজাহানপুরে টিএমএসএস কোল্ড স্টোরেজকে ৫০ হাজার টাকা, আশরাফিয়া কোল্ড স্টোরেজে একজন পাইকারি ব্যবসায়ীকে অধিক মূল্যে আলু বিক্রি করায় ৫ হাজার টাকা এবং একই অপরাধে আরেক ব্যবসায়ীর ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জায়গাতেও জরিমানা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পটুয়াখালী-৩: নুর, মামুন নাকি রনি?
লেবাননে ১০ কোটি ডলারের বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
এনআরবিসি ব্যাংকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ফরেন ট্রেড’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: এখনো ঘটনার বিস্তারিত কারণ জানতে পারেনি র‍্যাব
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা