সাতক্ষীরায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ লুটের অভিযোগ

এম. বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা
 | প্রকাশিত : ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৬:০৯

সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যান আবু হেনা সাকিলের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। পৈত্রিক সূত্রে সামান্য জমির মালিক হলেও এখন চড়েন প্রাইভেট গাড়িতে। কাড়ি কাড়ি টাকা আর মাছের ঘের এসব এখন তার হাতের মুঠোয়। খাস জমিতে বাগান বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী, দুদুক চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে জমা দিয়েছেন সাতজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি।

তবে অভিযুক্ত আবু হেনা সাকিল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু লোকজন তার বিরোধিতা করছেন।

এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগে জানা য়ায়, গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কোনো কাজ না করে বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখিয়ে এডিপি ও এলজিএসপির টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান। ৪০ দিনের কর্মসূচিতে টাকা নিয়ে লোক নিয়োগ দিয়েছেন। সুবিধা নিয়ে ধনী লোকদের দিয়েছেন ১০ টাকা কেজি চালের ভিজিডি কার্ড। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সম্মানি ভাতা দেয়া হয়নি। সরকারি খাস জমিতে তৈরি করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। এসব অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা।

শ্রীউলা ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামের অ্যাডভোকেট জহুরুল হক, বুড়াখারহাটি গ্রামের মইনুর হোসেন ও পুইজালা গ্রামের প্রভাষক দীপংকর বাছাড় জানান, ঠাকুর দাস, মানিক চক্রবতী, রাসেদ সরদার, রহিমা খাতুন অনেক জমির মালিক। তাদের আছে পাকা দালান বাড়ি। ভারতে বসবাসরত বিরেন্দ্র নাথ সানা। সরকারি চাকরিজীবী আব্দুল খালেক। এরকম অসংখ্যা লোকের নামে ১০ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড দিয়েছেন চেয়ারম্যান। অথচ দরিদ্র শ্রেণির লোকজন সরকারি এসব সুযোগ সুবিধা পায়নি।

তারা জানান, পুইজালা গ্রামের রমেশচন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী কনিকা মন্ডলের টিপসই জাল দুই বছর ধরে ভিজিডি চাল উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান এবং তার লোকজন।

ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নজরুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান, দিবাকর সেন জানান, ৪০ দিন কর্মসূচির কাজ ৩০ দিনে শেষ করা হয়েছে। যাদের প্রকল্পের সভাপতি ও সম্পাদক করা হয়েছে তারা এসবের কোনো কিছু খোঁজ রাখেন না। তাদের সই জাল করা হয়েছে। আবার এসব শ্রমিক দিয়ে চেয়ারম্যান নিজস্ব ঘেরের ভেড়িবাঁধ ও বাগান বাড়িতে কাজ করিয়ে নিয়েছেন। একই শ্রমিক পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করেছেন।

তারা আরো জানান, এডিপিও এলজিএসপির আওতায় ভুয়া প্রকল্পের তালিকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিদা খানম, অলিউল্লাহ, নাজমুল হুদা জানান, রয়ার সিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। আবার মহিষকুড়া বিজিএম ক্লাবের মাঠ ভরাট করা হয়েছে বলে তিনবারে ২৪ টন চাল উঠানো হয়েছে। বুড়াখারুটি ইয়াংক্লাব, কাকড়া বুনিয়া সবুজ সংঘ, শহিদ মিনার নির্মাণ, নাকতারা পাঞ্জেগানা মসজিদ সংস্কার করার নামে লাখ লাখ টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্থিত্ব নেই।

বকচর ডিজিটাল রেডিয়েন্ট এন্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্লাব সংস্কার করার কথা বলে একই প্রতিষ্ঠানের নামে তিন বার টাকা উত্তোলন করেছেন। আর এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ সভাপতি ও সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আবদুল্লাহ আল মুামন।

নির্বাচিত ইউপি সদস্যরা জানান, সম্মানি ভাতার টাকা পর্যন্ত পায়নি বলে তারা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

শ্রীউলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বুলু জানান, আবু হেনা সাকিল জামায়াতের সমর্থন নিয়ে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি মূলত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো উপকারে আসেন না। তিনি ইউনিয়নে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। সরকার উন্নয়ন করার জন্য যে বরাদ্দ দিয়েছে সব তার পকেটে গেছে। ইউনিয়নের এমন অবস্থা রোগী নিয়ে বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত নেই। তিনি সব সময় জামায়াত বিএনপির লোক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এখন তার আছে প্রাইভেট গাড়ি, মাছের ঘের, বাগান বাড়ি আর কাড়ি কাড়ি টাকা।

শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়াম্যানের আবু হেনা সাকিল জানান, নির্বাচনের সময় এলে কিছু লোক শুধু বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা করেন। এসব অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগের তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

(ঢাকাটাইমস/৭জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :