হোসেনপুরে হিমাগার না থাকায় আলুতে পচন

আশরাফ আহমেদ, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২১, ১৪:১১

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হলেও হিমাগার না থাকায় আলুতে পচন ধরছে। অন্যদিকে বাজারে ক্রেতার অভাবে আলুর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন। এতে কৃষকেরা লোকসানের পাশাপাশি আগামীতে আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৪৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় আট হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এই পরিমান আলু লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪৬৫ মেট্রিক টন বেশি।

হোসেনপুরে কোনো হিমাগার না থাকায় পাশের উপজেলার পাকুন্দিয়ার হিমাগারে সিন্ডিকেটের কারণে হোসেনপুরের চাষিদের আালু সংরক্ষণ করা অনেকটা অসম্ভব বিধায় চাষিদের উৎপাদিত আলু নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বাজারে ক্রেতার অভাবে আলুর দাম কম থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত আলু কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, হোসেনপুর উপজেলাটি ভৌগলিকভাবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও নরসুন্ধা নদ বেষ্টিত হওয়ায় এ অঞ্চলের ভূমি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পঁচনশীল এ পুষ্টিকর পণ্যটি মাড়াই মৌসুমের পর সারা বছরই চাহিদা থাকার কারণে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। এজন্য প্রয়োজন হিমাগার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলে স্থানীয়ভাবে কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু খাবারের বা বীজের জন্য ভবিষ্যতে সংরক্ষণ করতে হন্নে হয়ে দৌড়াতে হয়।

এক সময় দেশি আলু চাষ করে তা দীর্ঘদিন পরও বীজ ও খাবারের জন্য রাখতে পারলেও এখন সেগুলো বিলুপ্ত। উন্নত জাত হিসেবে ডায়মন্ড, কারেজ ও এসটারিস আলুর ফলন বেশি হওয়ায় তা অধিক লাভজনক হিসেবে ব্যাপকহারে আবাদ হচ্ছে। এগুলো এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় কোল্ড স্টোরের বাইরে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই আলুতে পচন ধরছে।

সরেজমিনে উপজেলার হাজিপুর বাজারের আলু বিক্রেতা সিদলা ইউনিয়নের পুড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আ. কাদির, আ. আজিজ, আ. রাশিদ, সাহেবের চর নয়াপাড়া আশরাফুলসহ অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এ বছর তারা প্রত্যেকেই গড়ে ৪০ কাঠা জমিতে আলু চাষে কমপক্ষে তিন লাখ টাকা করে লোকসান গুনেছেন।

ইকবাল হোসেন বলেন, তিন ঘণ্টা যাবত আলু নিয়ে বসে আছি, কেউ দাম করছে না।

গত রবিবার হোসেনপুর বাজারে কথা হয় জামাইল গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন, বরুয়া গ্রামের মমতাজ উদ্দিন, চর জামাইল গ্রামের ইব্রাহিম খলিল সোহাগসহ বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা এমন আরো কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, তাদের প্রত্যেকের এখনও কয়েকশ মণ আলু অবিক্রিত থাকায় আলুতে পঁচন ধরছে।

সাহেবের চর গ্রামের কৃষক বাদল মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, আমার কয়েকশ মণ আলু পচনের কারণে ফেলে দিতে হয়েছে। ফলে মোটা অংকের লোকসানের মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হলেও স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার থাকলে কৃষকেরা যথাযথ সুফল পাচ্ছেন না। এ উপজেলায় কম করে হলেও ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি হিমাগার থাকলে কৃষকেরা আরো বেশি লাভবান হতেন।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া পারভেজ জানান, সরকারিভাবে এ উপজেলায় একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য সংসদ সদস্য ডা. জাকিয়া নুরের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৫মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :