‘কাঁঠাল রাজ্য’ লাউড়েরগড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ
  প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২১, ১৮:০৯
অ- অ+

হরেক রকমের ফলের গাছ থাকলেও বাড়ির সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত শুধু কাঁঠাল গাছই লাগানো আছে। আর সেই গাছগুলোর নিচ থেকে শুরু করে ওপর পর্যন্ত কাঁঠাল আর কাঁঠাল। প্রতি বছরের মত গ্রামটিতে এবারও সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল ধরেছে। গ্রামের বাসিন্দারা গাছগুলোর কাঁঠাল নিজেরা খায়, বিক্রি করে এবং দূর-দূরান্তের সব আত্মীয়-স্বজনের বাসায় পাঠিয়ে দেয়। সরকারি, বেসরকারি রাস্তার পাশে নিজেদের জায়গায় গ্রামের মানুষেরা কাঁঠাল গাছ রোপণ করেছে। ফলে কাঁঠালের রাজ্যে পরিণত হওয়া সরজমিনে লাউড়েরগড় গ্রামটিতে এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে।

লাউড়েরগড় গ্রামটি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সীমান্তের শাহ আরেফিন(রহ.)-এর মাজার ও যাদুকাটা নদী সংলগ্ন এলাকায়।

লাউড়েরগর গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক আলম সাব্বির জানান, এই গ্রামে শুরুতে কয়েকটি পরিবার ছিল। তারা মেঘালয় পাহাড়ে গারোদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করে পাহাড় থেকে কাঁঠাল আনত। আর এই কাঁঠাল খেয়ে মাটিতে বিচি লাগিয়ে গাছের উৎপাদন বাড়াতে থাকে। এই গ্রামে এখন প্রায় ৫০০ বসতি আছে, এর মধ্যে ৪৫০টি বাড়িতেই কাঁঠাল গাছ আছে। আর প্রতিটি বাড়িতেই কম হলেও ১০-২০টি করে গাছ আছে। গ্রামটিকে কাঠাল রাজ্য বলা যায়। কাঁঠালগুলো খুব মিষ্টি। যার জন্য এখান থেকে কাঁঠাল কিনে অনেকেই শহরে নিয়ে বিক্রি করছে।

আরও জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল ধরে। লাউড়েরগড় গ্রামটি এক সময় লাউড়ের রাজধানী হিসেবে বিখ্যাত ছিল। ছিল রাজা, রানি, প্রজাসহ আলাদা একটা রাজ্য। দ্বাদশ শতকে কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র বংশের কেশব মিশ্র প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন লাউড় রাজ্য ছিল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব বদলে গেছে। বদলে গেছে সেই বিখ্যাত লাউড়ের রাজধানীর নামও। বর্তমানে সেই রাজ্যের আছে কিছু ধংসাবশেষ। কাঁঠালের বেশি উৎপাদন ও সুস্বাধু হওয়ায় জেলা শহরের বাসিন্দারা এখান থেকে কিনে নিয়ে যায়। ফলে দিনদিন সেই লাউড়ের রাজ্যকে এখন এক নামে সবাই কাঁঠাল রাজ্য হিসেবে চেনে। তবে সড়ক পথের বেহাল অবস্থার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না এই গ্রামের বাসিন্দারা।

লাউড়েরগড় গ্রামের বাসিন্দা আমিন মিয়া বলেন, শুনেছি আমাদের গ্রামে রাজ-রানি সবাই ছিল এবং আমাদের গ্রামকে লাউড়ের রাজ্য বলা হতো; কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে সব। এখন এই গ্রামে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে এই গ্রামকে সবাই কাঁঠালের রাজ্য বা কাঁঠালের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা রজব মিয়া বলেন, আমার বাড়ির চারপাশে কাঁঠাল গাছের সব কয়টিতে কাঁঠাল ধরেছে। প্রতিবছর কাঁঠাল আমরা নিজেরা খাই, কিছু বিক্রি করি আর বাকি কাঁঠাল দূর-দূরান্তের সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। এই কাঁঠাল বিক্রি করে অনেকেই তাদের সংসারের হাল ধরেছেন, তাই সবাই গ্রামটিকে কাঁঠালের গ্রাম বলেই চেনেন। ভাঙা সড়কের কারণে স্থানীয় পাইকার ও বাজারে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়। শহরে নিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারি না। শহরে নিয়ে বিক্রি করতে পারলে বেশি দামে বিক্রি করা যেত।

সুনামগঞ্জের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, এই গ্রামের কাঁঠাল অনেক সুস্বাদু। লাউড়েরগড় এসেছি কাঁঠাল কিনে নিয়ে ইফতারের সময় খাওয়ার জন্য। আমি প্রতি বছর কাঁঠালের সময় আসলে এই গ্রাম থেকে কাঁঠাল নিয়ে যাই। আমার মত অনেকেই এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে যায়। ফলে এই গ্রামকে সবাই কাঁঠালের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে দিনদিন।

লাউড়েরগড় গ্রাম থেকে কাঁঠাল নিয়ে এসে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজারে বিক্রি করেন কাঁঠাল ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া। তিনি বলেন, বাজারে লাউড়েরগড় গ্রামের কাঁঠালের অনেক চাহিদা রয়েছে। কারণ এই গ্রামের কাঁঠাল খেতে খুব মিষ্টি। বাজারে কাঁঠালের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সড়কের দুরবস্থার কারণে লাভের পরিমাণ কম।

বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, এখানকার কাঁঠাল খুব সুস্বাদু। ফলে চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে শহরে বিক্রি করতে পারছে না সড়কে কারনে। সড়ক পথের উন্নয়ন হলে এখানকার কাঁঠাল বিক্রি করে অনেক পরিবার লাভবান হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দোলা বলেন, উপজেলার লাউড়েরগড় গ্রামের বালু ও মাটি ভালো থাকায় কাঁঠাল বেশি উৎপন্ন হয়। আমাদের পক্ষ থেকে সব রকমের সুবিধা ও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১০ জুলাই
তিনবারের ‘বেস্ট ডমেস্টিক এয়ারলাইন’ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
একদিনে ৩ দেশের ওপর বিমান হামলা ইসরায়েলের
খুলনায় তাসলিমার পাশে দাড়াঁল ‘স্বপ্ন’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা