আবার আলোচনায় সাবেক এমপি রানা! এবার পিস্তল ঠেকানোর অভিযোগ

আলোচিত একটি হত্যা মামলায় প্রায় দুই বছর কারাভোগের পর জামিনে আছেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা। এবার তিনি আবার আলোচনায় এসেছেন। এক ব্যক্তিকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে তপন রবিদাস নামের ওই ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। তিনি নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ইতিমধ্যে থানায় জিডি করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে সাংসদ আমানুর রহমান খান দাবি করেছেন, তিনি তপন রবিদাসকে কোনো দিন দেখেননি। তাকে চেনেনও না। এজন্য হুমকি দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
তপন রবিদাস টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরীর কর্মী। ক্যানসারে আক্রান্ত স্বপন চৌধুরী একা চলাফেরা করতে না পারায় তাকে তিনি দেখাশোনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তপন রবিদাস জানান, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন চৌধুরী শারীরিকভাবে চলাফেরায় অক্ষম ব্যক্তি। অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে আনা-নেয়াসহ সব সময় তিনি তার সাথে থাকেন। সোমবার সকালে স্বপন চৌধুরীকে শহরের রেজিস্ট্রিপাড়াস্থ মেডিকো ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বাসা থেকে রিকশাযোগে যাওয়ার সময় কলেজপাড়া (হাজী রৌফের বাসার সামনে) মোড়ে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা তার প্রাডো গাড়ি দিয়ে রিকশার গতিরোধ করেন।
গাড়ি থেকে নেমে এমপি রানা মোটরসাইকেলে আসা তার সঙ্গী রেজওয়ান খানকে তাকে ধরে আনতে নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে রেজওয়ান খান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ রাজিব ও তার ভাই শুভ ও চাচাত ভাই মনছুর মিয়া এবং সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আব্বাস আলী তাকে ঘিরে ফেলে এবং চ্যাংদোলা করে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানার কাছে নিয়ে দাঁড় করায়।
তপন রবি দাস জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা স্বপন চৌধুরীর সাথে থাকেন জানতে পেরে উত্তেজিত হয়ে সাবেক এমপি রানা তার লাইসেন্সকৃত রিভলবার বের করে পেটে ঠেকিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইল শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এরপর তপন রবি দাসকে শহরে দেখা গেলে গুলি করে মেরে ফেলবেন বলে সাবেক এমপি রানা হুমকি দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে গাড়িতে ওঠে চলে যান। এ সময় সাবেক এমপি রানার উপরোল্লেখিত সঙ্গীরা নানা রকম গালিগালাজ ও হুমকি দিয়ে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়।
তপন রবি দাস আরও জানান, সাবেক এমপি রানা হুমকি দিয়ে চলে যাওয়ার পর তিনি বিষয়টি স্বপন চৌধুরী, তার পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানান। পরে তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় নিরাপত্তার জন্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-১৬০৬, তাং-৩১/০৫/২০২১ইং) করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন অভিযোগকারী তপন রবি দাস, জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন চৌধুরী ও টাঙ্গাইল পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক স্বপন চৌধুরী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা জামিন পাওয়ার পর থেকে তার কলেজপাড়ার বাসায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ঢিল ছোঁড়া ও জানালায় টোকা দেয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর ও জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, গত ছয়-সাত বছর ধরে টাঙ্গাইল শহর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি ও জমি দখলমুক্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা খুনের মামলায় খান পরিবারের সন্তান আমানুর রহমান খান রানার জামিন হওয়ার পর থেকে তিনি আবার টাঙ্গাইল শহরকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন।
টাঙ্গাইলে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত খান পরিবারের সন্তান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা এর আগে আলোচনায় আসেন টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যার আসামি হয়ে। পুলিশি তদন্তে আলোচিত এই হত্যা মামমলায় রানার সম্পৃক্ততা উঠে আসে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর তিনি আত্মগোপন করেন। দুই বছর পলাতক থাকার পর ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
২২ মাস হাজতবাসের পর ২০১৯ সালের ৯ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন। ফারুক হত্যা মামলায় আমানুরের ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান এখনো কারাগারে। অপর দুই ভাই পলাতক।
আমানুর রহমান রানা দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তবে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য একাদশ জাতীয় সংসদে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তবে সাংসদ পদটি তার পরিবারেই থাকে। রানার বাবা আতাউর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ওই আসন থেকে।
(ঢাকাটাইমস/০১জুন/জেবি)

মন্তব্য করুন