ঈদের পরে কী হবে?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৭| আপডেট : ২০ জুলাই ২০২১, ১৯:২২
অ- অ+

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের একরকম ভয়াবহ রূপই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে৷ বিশেষ করে চলমান জুলাই মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। দেশে দৈনিক মৃত্যু দুই শতাধিক। শনাক্ত ১০ থেকে ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করায় মানুষ ছুটছে গ্রামের বাড়ির দিকে। এই স্বজনমিলনের যাত্রায় কোনো মাধ্যমেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।

অন্যদিকে ঈদের প্রধান অনুষঙ্গ কোরবানির জন্য পশু কিনতে গিয়েও একই চিত্র। পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা কারোরই নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ। পশুর হাটের স্বাস্থ্যবিধি কিছু নির্দেশনা দিয়ে রাখা আর মাইকিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

দেশে করোনার প্রচণ্ড সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্টের উপস্থিতির কারণে ঈদের পরে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা নিয়ে শঙ্কায় আছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কারণ ইতিমধ্যে গ্রামগঞ্জে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশি ছড়াচ্ছে ডেলটা ধরন (ভারতে উৎপত্তি)।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সপ্তাহ ধরে চলা কঠোর বিধিনিষেধের সুফল আসার আগেই সবকিছু শিথিল করে দেয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে৷ কারণ কোথাও সরকারের ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ন্যূনতম চিত্র দেখা যাচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা ঈদের পর অনেকটা জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে করোনার সংক্রমণ। একই সঙ্গে বাড়বে মৃত্যু। যারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাড়ি গেছেন তাদের অনেকে আক্রান্ত হবে। অনেকে পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের সংক্রমিত করবেন। তারাই আবার ঢাকায় ফিরে সংক্রমণ ছড়াবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের ঈদের ছুটির মতো মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ছিঁটেফোঁটাও নেই। লকডাউনের পরে এখনো শনাক্ত ও মৃত্যুর চিত্র মোটেও পাল্টেনি। তাই ঈদের পরে করোনা সংক্রমণের ঢেউ কোন দিকে যাবে, কী হবে সেই আশঙ্কা রয়েই গেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারিতে এমন পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে দেশে করোনার রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। মোট শনাক্ত রোগী ১০ লাখ থেকে বেড়ে ১১ লাখ ছাড়াতে সময় লেগেছে মাত্র নয় দিন। দেশে মহামারিতে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত এক লাখ রোগী শনাক্তের রেকর্ড।

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবশেষ দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধের কোনো ইতিবাচক প্রভাব এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। গত ১৪ জুলাই থেকে ঈদের এক দিন পর পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। অবশ্য ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি হবে। এই সময়ে গার্মেন্টসসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা জানা যায়। সংক্রমণ ঠেকাতে ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ছিল। তখন সব ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা, ব্যবসা, বাণিজ্য, কলকারখানা বন্ধ করে অনেকটা ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার গার্মেন্টস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে থাকে। এবার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই পরিস্থিতি খারাপ।

জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনীতির কথা ভাবলে দীর্ঘদিন লকডাউন চালানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), রোগীর সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখা এবং সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে দ্রুত রোগী বাড়ার কারণে হাসপাতালে শয্যা কমে আসছে৷ বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থদের আইসিইউ দরকার হলে তা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারা দেশের মানুষ যখন ঢাকার দিকে তাকিয়ে তখন রাজধানীর হাসপাতালগুলোর চিত্র সুবিধার নয়। ১৬টি করোনা চিকিৎসা চলা হাসপাতালে ৫০টিও আইসিইউ খালি নেই।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না জানিয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, যেখানে গত দুই মাস আগেও সারা দেশে সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ বেড খালি ছিল, সেখানে এখন টান পড়ছে, ধীরে ধীরে কমে কমে মেষ পর্যাায়ে যাচ্ছে শয্যাসংখ্যা।

রোবেদ আমিন জানান, যে হারে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে করে যদি হাসপাতালের বিদ্যমান চাপ চলতেই থাকে তাহলে আগামী সাত থেকে ১০ দিন পর আর হাসপাতালের বেড খালি থাকবে না।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এমআর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
স্পেনে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন লিভারপুল তারকা দিয়োগো জোতা
নির্বাচন সামনে রেখে টেলিকম নীতিমালা প্রণয়ন সমীচীন নয়: মির্জা ফখরুল 
Navigating Complexity: The Role of Chaos Theory in Management Education
গুমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা