আমি তোমার জন্য কাঁদছি মা...

সুমন্ত আসলাম
  প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৬:২৮| আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৬:৩৪
অ- অ+

কয়দিন আগে যা লেখা হয়েছিল...মাকে ফেলে গেল শালবনে, মাঝরাতে। বাবা মারা গেলেন, দেহ নিল না তার সন্তান, পড়ে রইল হাসপাতালেই, নিল কেবল ‘মৃত্যুসনদ’, যেন পেনশনের টাকা পেতে কষ্ট না হয় তাদের।

নয় বছরের মেয়েটা ক্ষুধার জ্বালায় বের হয়েছিল রাস্তায়, কামুক পুরুষ তার সব কেড়ে নিল, অথচ সে কেবল ভাত চেয়েছিল। পরাজিত পুরুষটা তার ‘অপৌরষ’ ঝাড়ল হাত-পা বেঁধে বউকে কুপিয়ে।

আর মুখার্জি বাড়ির বউ না, তালুকদার বা চৌধুরী বাড়ির বউও না, সাদাসিধে এক পরিবারের বউ নেমেছিল সেদিন রাস্তায়, সম্বল তার দেহখানি। পক্ষাঘাতে স্বামী বিছানায় দু বছর, প্রতিদিন ওষুধ লাগে দেড়শ টাকার, চার আর তিন বছরের বাচ্চা দুটো একটু পরপরই চেচায়---মা খিদা লাইগছে...।

বউটার ঠোঁট দুটো কাঁপছিল---লজ্জায়? না ক্ষুধায়?

আজ যা লিখছি...

কাল রাতে মা এসেছিল আমার ঘরে। আমি অবাক হইনি একটুও। অথচ আট বছর আগে মা চলে গেছেন আমাকে ছেড়ে, আমাদের ছেড়ে। বিছানায় বসল মা। স্বর্গমোড়ানো হাত রাখল কপালে। বলল, ‘আমি তো প্রায়ই আসি। অবাক হবি না কখনো, বাপ।’

আমি বলি, ‘মা, তুমি পরীমনিকে চেনো?’ ‘কোন পরীমনি?’ ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরকে?’ ‘তোর হেলেনা খালা?’ ‘ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুন নাহারকে?’ ‘এসব কাদের নাম বলছিস তুই?’

‘কাল আর আজ মিলে যে সাতাশ লাখ গার্মেন্টকর্মী ঢুকল ঢাকায়, তার সাড়ে ষোল লাখই মেয়ে। এদের মধ্যে লাবণীকে চেনো তুমি? রুম্পাকে? শেফালীকে?’

‘আমি ওদের চিনব কী করে বাবা!’

‘নিজেকে দানব বানানো কিছু মহিলা, আর সম্ভ্রম ও মানুষ পরিচয় হারানো কিছু মহিলা। এদের নিয়েই আমাদের নিত্য বাস। এবার বলো তো তুমি এদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে কারা? কারা কাউকে মাথায় উঠায়, কাউকে পায়ে পেষে নিয়মিত? এই ভাগ্য নিয়ন্ত্রক-নীতি নির্ধারকদের তুমি চেনো?’

‘না-য়া-য়া।’

‘অথচ তুমি মদন মোহন তর্কালংকারকে চেনো, রাম সুন্দর বসাককেও। বেলন দিয়ে কাঠের পিঁড়িতে রুটি বানাতে আর পড়াতে তুমি আমাদের অ আ ই ঈ। তারও কয়দিন পর গুরুজনকে ভক্তি কর, চোরকে সকলে ধিক্কার দেয়, দম্ভ করা অনুচিত, কদাচ অসৎ কল্পনা করিও না, গ্রগলভাতা ভালো নয়, পশ্চাৎ ভাবিয়া কার্য করিবে, দৌরাত্ম্য ভালো নয়; আরো কত কী পড়াতে, শেখাতে! মাঝে মাঝে মেঘ ডেকে উঠত গর্জনে, টিনের চালে ভূতের ভয় অথবা মাঝরাতে শেয়ালের ডাক তুমি দু হাতে জড়িয়ে ধরতে আমাকে, বুকে মিশিয়ে দিতে আমার মাথা, আয়তুলকুরছির ফুঁয়ে নির্ভয় করতে ভয় নেই বাপ, আমি আছি না!

মারে, তোমাকে যে আরো একবার দরকার, এই সময়ে; যে তার সমস্ত ভালোবাসায় ঠোঁট কাঁপিয়ে বলবে ভয় নেই রে বাপ, আমি আছি, আমার ভালোবাসা আছে। আমি তোমার জন্য কাঁদছি মা, আমি তোমার মতো কারো অপেক্ষায় নির্ঘুম চেয়ে আছি গগনে।

লেখক: ঔপন্যাসিক, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/১আগস্ট/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পাঠকের উদ্দেশ্যে লেখকের বার্তা
কাশিয়ানীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন এখনই, ৬০ ব্রিটিশ এমপির খোলা চিঠি
গোসলের পর ওজু করতে হবে কি? ইসলামী বিধান যা বলে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা