যেভাবে সৃষ্টি হয় দাবানল

আবুল কাশেম
  প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৪:৪০| আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৭
অ- অ+

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন তারা। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। দমকলকর্মী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনী, বিমান-হেলিকপ্টার ব্যবহার করেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না এসব আগুন। অনেকেই জানেন না যে কীভাবে বিশাল বিশাল বনে দাবানলের সৃষ্টি হয় এবং কীভাবেই তা বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। চলুন আজকে আমরা এই বিষয়ে জেনে আসি।

বেশ কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়াতে এমন এক আগুনে এক এক করে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত দুই শতাধিক মানুষ৷ সেরকম অবস্থার সৃষ্টি হয় রাশিয়ায়৷ এখন ইউরোপে।

দাবানল হচ্ছে বনভূমি বা গ্রামীণ এলাকার বনাঞ্চলে সংঘটিত অনিয়ন্ত্রিত আগুন। উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বনাঞ্চলসমৃদ্ধ যেকোনো স্থানেই দাবানল দেখা দিতে পারে৷ সাধারণত, যখন কোনো আগুনের উৎস প্রচন্ড তাপমাত্রায় এবং যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আসে, তখন দাবানলের সুত্রপাত ঘটে৷ গাছপালা থেকে থেকে ক্রমাগত পানি বাস্পীভূত হয়ে সৃষ্টি হয় পানির এই ঘাটতি৷ ঘাটতি পূরণ করা হয় মাটি বা বাতাসে বিদ্যমান জলীয় বাষ্প বা বৃষ্টির পানি শোষণ করে৷ কিন্তু অনেকদিন ধরে উত্তপ্ত ও শুষ্ক আবহাওয়া চলতে থাকলে গাছপালা পানির এই সমতা রক্ষা করতে না পেরে শুষ্ক ও দাহ্য হয়ে ওঠে৷ যেসব অঞ্চলের আবহাওয়া এতটাই আর্দ্র যে গাছপালা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে, সেসব অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়৷

পাহাড়ি অঞ্চলে দাবানলের ইন্ধন কিছু বেশি। যতক্ষণ খুশি আপন মনে জ্বলতে থাকে আগুন। জ্বলতে জ্বলতে যখন খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব হয় কেবল তখনই মরে যায়, দুর্ভিক্ষে মরার মতোই। ইতোমধ্যে মাটি পুড়ে টেরাকোটা হয়ে যায়, হারিয়ে ফেলে দরকারি জলশোষণ ক্ষমতা। এমন দগ্ধ মাটির ওপর যখন ঝুম বৃষ্টি নামে তখন এসব আলগা পোড়ামাটি আর কাদা ধুয়ে সমানে নামতে থাকে পাহাড়ের গা বেয়ে। নামতে নামতে পাদদেশে গড়ে তোলে কদর্য আরেক পাহাড়।

আমেরিকার বনাঞ্চলে বিভিন্ন উপায়ে আগুন লাগে বছরে প্রায় এক লক্ষ বার। যে কারণে পুড়ে যায় ২০ লক্ষ হেক্টর জমি। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই আগুন সামনে যা কিছু পায় পুড়িয়ে নিঃশেষ করে গাছপালা ঘরবাড়ি মানুষসহ। বজ্রপাতসহ এই আগুন লাগবার পেছনে প্রাকৃতিক কারণ মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ। বাকী চারভাগের জন্য দায়ী মানুষ।

অযত্নে ফেলে রাখা ক্যাম্পফায়ারের আগুন, সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি থেকে যতটা আগুন লাগে ততটা লাগে না প্রকৃতি থেকে। কিন্তু যেভাবেই হোক একবার আগুন লাগলে প্রকৃতি তাকে ইন্ধন যোগায় পাগলের মতো। ফায়ার স্টর্ম, আগুনে-সাইক্লোন, অগ্নি-টর্নেডোর রূপ নিয়ে দিকবিদিক ছড়িয়ে পড়ে। ক্যালফোর্নিয়াতে সান্টা অ্যানা শুষ্ক বায়ুপ্রবাহ অগ্নি স্ফূলিঙ্গকে মাইল মাইল দূরে অনায়াসে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। কেবল রাস্তার ওপারে নয়, নদীর ওপারেও আগুনকে বহন করে নিয়ে যেতে পারে এমন বায়ুপ্রবাহ।

গত তিরিশ বছরে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অরণ্য, আফ্রিকার কঙ্গো বর্ষাবন এলাকা এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মিলিয়ন মিলিয়ন একর এলাকার বৃক্ষ ধ্বংস করে জুম এবং নিয়মিত চাষাবাদের জমি বের করা হয়েছে। উর্বরা শক্তি কম হবার কারণে কয়েক বছর পরেই আবার নতুন করে পোড়াতে হচ্ছে বন-বনানী। যে কারণেই আগুন জ্বলুক, বড় ধরনের আগুনের কিছু উটকো আচরণও আমাদের চোখে পড়ে। দাবানলে পোড়া সাইবেরিয়ার তাইগা বনের ধোঁয়া ৩ হাজার মাইল দূরে জাপানের ওসাকা শহরকে অন্ধকার করে দিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার ব্ল্যাক ফ্রাইডে বুশ-ফায়ারের ছাই উড়ে গিয়ে পড়েছে ২ হাজার মাইল দূরের নিউজিল্যান্ডে।

এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে দাবানল সৃষ্টির অন্যতম কারণ বজ্রপাত। বজ্রপাতের ফলে বিভিন্ন স্থানে শুরুতে ছোট ছোট দাবানলের সৃষ্টি হয়। বায়ুর ইন্ধনে তা দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

আগুন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যেভাবেই লাগুক এবং এক পর্যায়ে এটা ক্ষতিকর রূপ নিলেও এর ভেতর কিছু কল্যাণকর দিকও আছে। প্রকৃত প্রস্তাবে, মাঝে মাঝে আগুন না লাগলে বনাঞ্চলের ন্যাচারাল ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মৃত ও পচনশীল দ্রব্যাদি পুড়ে গিয়ে শুদ্ধ হয় পরিবেশ, গাছের কাণ্ডে জমে থাকা পুষ্টি, অগ্নিকান্ডের পরে আবার ফেরত আসে জমিতে।

যাবতীয় ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হয় এতে, রোগশোকের জীবাণুও নষ্ট হয়ে যায়। উচুঁ গাছের শামিয়ানা পুড়ে গেলে অন্ধকার স্যাঁতসেতে বনের উঠানে সূর্যের আলো ঢুকে পড়ে। তখন ছাইয়ের গাদায় শুরু হয় নতুন জীবন। প্রথমে তৃণ, তারপর বড় গাছ এবং ক্রমশ নিবিড় অরণ্য। আবার কখনো বজ্রপাতে পুড়ে যাবার জন্যে তৈরি হয় বন। এভাবেই চলতে থাকে প্রাকৃতিক অগ্নি-চক্র।

ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম কেনা যাবে, জানালো বিটিআরসি
বনানীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
কসবা সীমন্তে বিএসএফের গুলি, আহত দুই বাংলাদেশি
কানে বিশেষ স্বীকৃতি পেলো আদনান আল রাজীবের ‘আলী’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা