জীবনে কখন স্বার্থপর হওয়া জরুরি?

বেঁচে থাকার তাগিদে এবং কাজে সফলতার জন্য কিছু মাত্রায় স্বার্থপরতা ভালো। নিজেকে এগিয়ে নেওয়া যায়। তবে সব ক্ষেত্রে নয়। বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। অন্যের ক্ষতি না করে নিজের ভালো করা ভালো। কেবল নিজের সুবিধা দেখা তা নয়, অন্যের ক্ষতিটা এখানে বুঝতে হবে। স্বার্থপর হওয়া কিংবা শুধুমাত্র নিজের আখেরটা গুছিয়ে নেওয়ার মতো মানসিকতা মোটেই কাম্য নয়, তবু কিছু ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজনেই স্বার্থপর হওয়া জরুরি।
সম্পর্কে থাকা মানে শুধুই যে সঙ্গীকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে এমনটা নয়। নিজের জন্যেও কিন্তু সময় রাখা জরুরি। কারণ সম্পর্কটা দুজনের। দুজনকেই সেখানে একসঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে একে অপরের খোঁজ রাখতে হবে, সুবিধা-অসুবিধা এসবও দেখতে হবে।
শুধুমাত্র একজনের জন্যই ভেবে যাবেন আর নিজের যাবতীয় কৃচ্ছ্রসাধন করবেন এমনটা কিন্তু নয়। বরং নিজের জন্যেও ভাবুন। এতে ভালো থাকবেন, সেই সঙ্গে সম্পর্কও থাকবে সুস্থ। কারণ সম্পর্কে সব সময় যদি একজনই নিজের শখ, আহ্লাদ বাদ দিয়ে অন্যকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু অন্যজনের তা খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তিনি নিজেরটুকু ছাড়া অন্যের সুবিধে-অসুবিধে বোঝার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলবেন।
যদি আপনি নিজেই নিজেকে সুখী না করতে পারেন তবে কেউ আপনাকে সুখী করতে পারবে না। প্রথমে নিজেকে ভালোবাসা জরুরি। তবেই আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে চারপাশের মানুষেরা আপনাকে সুখী করতে পারে।
আপনার ভালো থাকার চাবি আপনারই হাতে, চারপাশের মানুষেরা কেবল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। প্রেমিকের জন্য আপনার সময়, শক্তি, আবেগ খরচ করার আগে ভেবে দেখুন আপনি কী চান! মন থেকে ভালোবাসলেই কেবল আপনাদের সম্পর্কটি সুখের হবে।
সম্পর্কে থাকার অর্থ একে অন্যের কাছে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। তা বলে এই নয় যে সম্পর্কে আছেন বলে আপনাকে নিজের যাবতীয় সব কিছু ছেড়ে চলে আসতে হবে। সঙ্গীর যা পছন্দ তাই করতে হবে, এমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। সম্পর্কের খাতিরে দুজনেই কিছু অভ্যাস ছাড়তে হয়। একসঙ্গে থাকতে গেলে ঠোকাঠুকি লাগবেই। সেইসঙ্গে মানুষ হিসেবে সকলে কিন্তু সমান নন। আর তাই এই বিষয়টিও মাথায় রাখুন। সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা আপনাদেরই করতে হবে। দুজনের পছন্দ অপছন্দ যেমন জানতে হবে তেমনই একে অন্যের সুবিধা অসুবিধার দিকেও কিন্তু মনোযোগ দিতে হবে।
সব সময় আপনার নিজের থেকে সঙ্গীকে এগিয়ে রাখতে হবে এমনটা নয়। কিংবা শুধু সঙ্গীর ভালো চেয়ে যাবেন, তাকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের বরাদ্দ খরচ থেকে বেশ কিছুটা টাকা সরিয়ে রাখবেন এমনও নয়। সঙ্গীর পছন্দ বলেই সব সময় তাকে সেই ভাবে উপহারে ভরিয়ে রাখতে হবে এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।
নিজেকে সময় দিন, নিজের মতো করে কফি ডেটে যান, শপিং করুন, পার্লারে যান-মোটকথা নিজের যথাসাধ্য দিয়ে আগে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন। নিজে ভালো থাকলে তবেই সম্পর্ক ঠিক থাকবে। সব সময় উপহার দিয়ে কাউকে খুশি রাখা যায় না। সেই সঙ্গে নিজের আত্মসম্মানও বজায় রাখা জরুরি। এটা কিন্তু আপনাকেই সঙ্গীকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
মন থেকে স্বার্থপর হলে তবেই কিন্তু নিজের যাবতীয় সিদ্ধান্ত ঠান্ডা মাথায় নিতে পারবেন। নইলে যে কোনও বিচারই একপেশে হয়ে যাবে। আর স্বার্থপর না হতে পারলে সম্পর্কে কিন্তু স্পেসও থাকে না। নিজেদের মধ্যেকার বোঝাপড়া বজায় রাখতেই এই স্পেস থাকাটা জরুরি।
মনের মিল যদি না হয়ে থাকে, কোথাও যদি মনের মধ্যে কোনও আক্ষেপ থাকে, ক্ষোভ থাকে তাহলে তা স্পষ্ট করে বলাটা কিন্তু জরুরি। নিজের মধ্যে চেপে রাখবেন না। এতে পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে পারেন।
আপনার সঙ্গী কত ইনকাম করেন সেটা ব্যাপার নয়, আপনার আর্থিক স্বাধীনতা সম্পূর্ণই নির্ভর করছে নিজের ওপর। তাই একটু স্বার্থপর’ হয়েই চিন্তা করুন আর্থিক স্বাধীনতা আপনাকে একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করবে।
(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন