হত্যার অভিযোগের পরও ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:২৮
অ- অ+

নির্বাচিত, সারাদেশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা চরাঞ্চলের হত-দরিদ্র ও দিনমজুর খড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলকে (৩৫) পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেছেন তার অসহায় স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন। জলিল উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের বড় নলছিয়া গ্রামের আব্দুল লাল চাঁন মুন্সীর ছেলে।

গত ৬ আগস্ট জলিলকে খড় কেনার কথা বলে নিজ বাড়ি থেকে কৌশলে বের করে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার খগেন ঘাটের দিকে নিয়ে রওনা দেন তার সহযোগী ব্যবসায়ীরা। তার কয়েকদিন পরেই জলিল নিখোঁজের কথা জানেন পরিবারের লোকজন।

জলিলের লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত এবং ‘পরিকল্পিত এই হত্যা’র বিচার দাবিতে রবিবার দুপুরে ভূঞাপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি হয়েছে। জলিলের স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের লোকজনসহ বড় নলছিয়া গ্রামবাসী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় জলিলের স্ত্রী বুলবুলি তার স্বামী হত্যার বিচার ও লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজের পাঁচ দিন পর বুধবার রাতে তাকে মেরে ফেলার খবর পায় স্বজনরা। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই ঘাট থেকে জলিলের ক্ষতবিক্ষত লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন তার ছোট ভাই ও স্বজনরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনই জলিলের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্থানীয় নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা কবরস্থানে দাফন করা হয়। সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়ে এলাকার কিছু মাতব্বর ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনে সহযোগিতা করেছেন। এরপর থেকে জলিলের পরিবারকে কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো নানাভাবে হুমকির শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারের।

হতদরিদ্র জলিলের স্ত্রী বুলবুলি জানান, তার স্বামী স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে নৌকাযোগে গরুর খাদ্য খড় কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত ৬ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে বড় নলছিয়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে হাফেজ (৪৫), আব্দুলের ছেলে মিজানুর (২৫), রুস্তমের ছেলে নূর ইসলাম (৩০), সুরমানের ছেলে শাকিল (২৮), ইউছুফের ছেলে জহির (২৮), মজনুর ছেলে জাহাঙ্গীর (৩৮), জানির ছেলে পরবত (৩৫), চেরাগ আলীর ছেলে লাল চাঁন (৩৩) জলিলের বাড়িতে এসে জলিলকে খড় কেনা-বেচা করতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের করে সঙ্গে নিয়ে যান।

বুলবুলি জানান, এসময় তার স্বামী (জলিল) তাদেরকে বলেন- ‘আমি তো গতকালই তোমাদের বলে দিয়েছি আমি আজকে খড়ের কাজে যাব না’। পরে তারা একপর্যায়ে জোর করে জলিলকে নিয়ে যান। জলিলের স্ত্রীর কাছে কোনো ফোন না থাকায় তিনি স্বামী বা তার সহযোগী কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। পাঁচ দিন পর বুধবার একটি ফোন নাম্বার থেকে (০১৭৩১****০২) জানানো হয়, তার স্বামী খড় বিক্রি করতে সিরাজগঞ্জে জেলার চৌহালী বাজারে গেছেন।

এর পরের দিন বৃহস্পতিবার হাফেজের স্ত্রী জলিলের বাড়িতে এসে বুলবুলিকে বলেন, তোমার স্বামী পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ সংবাদে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বুলবুলি। পরে জলিলের ভাই মুসা ও জাহাঙ্গীর ভাইয়ের খোঁজ নেয়ার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালীর খগেন ঘাটের দিকে রওনা দেন। ভোরের দিকে জলিলের লাশসহ বাড়িতে ফেরেন তারা। লাশ বাড়িতে আনার পর তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন দেখেছেন বলে জানান বুলবুলি।

এরপর এ ঘটনায় ভূঞাপুর থানা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্ত আসামিরা জোর করে তার লাশ দাফন সম্পন্ন করে। বুলবুলি জানান, তার মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে ভূঞাপুর থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন করেন। কিন্তু ভূঞাপুর থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ না করে সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানায় মামলা করতে বলে। বুলবুলি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে।’

পরবর্তীতে হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়। পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি ভূঞাপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

বুলবুলি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওহাব সাংবাদিকদের বলেন, ‘টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ আদালত মামলা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেসব তথ্যাদি চেয়েছেন তা সংগ্রহ করে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করবো।’

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সংস্কার করে তারপরেই নির্বাচন দিতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বনানীতে সড়ক অবরোধ সিএনজি অটোরিকশা চালকদের, তীব্র যানজটে দুর্ভোগ
আজ থেকে সারা দেশে চিরুনি অভিযান শুরু
সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা আরও ২ মাস বাড়লো
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা