হুমকির মুখে মুহুরি সেচ প্রকল্প

ভাঙনে বদলে দিতে পারে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। ফেনী নদীকে আন্তর্জাতিক প্রমাণের চেষ্টা মুহুরি সেচ হুমকির মুখে। সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর মাঝখানে ইনটেক ওয়েলে বা কূপ খনন করে পাইপের মাধ্যমে সমঝোতার ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করে নিতে চাচ্ছে ভারত। পানি প্রবাহের ভারতীয় অংশে না করে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে কূপ খননের প্রস্তাবনার বিষয়ে প্রকৌশলগত যথার্থতা খতিয়ে দেখতে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই ফেনী নদী পরিদর্শনে আসছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে প্রায় ৩৬টি পাম্প বসিয়ে ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে ভারতের পানি প্রত্যাহারের বিষয় সুরাহার আগে সমঝোতার ১.৮২ কিউসেক পানি দেয়ার ব্যাপারে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, সমঝোতা অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলবে ভারত, যার পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ৫২ লিটার এবং দিনে প্রায় ৪৫ লাখ লিটার। ফেনী নদীর মাঝখানে কূপ খননের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্যই এ প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। কিছুদিনের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আবার স্থানটি পরিদর্শনে আসবে। সমঝোতা স্মারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই দেশের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা যৌথভাবে ইনটেক ওয়েলের (কূপ) স্থান চূড়ান্ত করবে।
পাশের দেশ ভারতও নিজেদের উত্তর-পূর্ব অংশের বেশ কটি রাজ্যের পানির অভাব মেটাতে দীর্ঘ বছর ধরে নানা কৌশলে ফেনী নদীকে আন্তর্জাতিক নদী প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে শুষ্ক মৌসুমে নদী তীরবর্তী চট্টগ্রামের মিরসরাই, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, সোনাগাজীর মুহুরি সেচ প্রকল্প, ফুলগাজী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দক্ষিণাংশ এবং নোয়াখালী-লক্ষীপুরের কিছু অংশের বিভিন্ন সেচ প্রকল্পে পানির জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এতে করে লাখ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনাবাদি হয়ে পড়বে। অকার্যকর হয়ে পড়বে ১৯৮৪ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদের হাত ধরে তৎকালীন ১৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প ‘মুহুরি সেচ’প্রকল্প। যার আওতায় এ অঞ্চলের প্রায় ১৪ থেকে ১৫টি উপজেলার ৮-৯ লাখ হেক্টর জমিতে লোনামুক্ত পানির সরবরাহ করা হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় যেখানে ফেনী, মুহুরি ও কালিদাস পাহালিয়া এ তিনটি নদীর পানি দিয়ে ৮-৯ লাখ হেক্টর জমির সেচ কাজ করার কথা, সেখানে এখনই শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতেও সেচ দেয়া সম্ভব হয় না। মুহুরি সেচ প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ পানির মূল উৎস ‘ফেনী নদী’। ফেনী থেকে ২৫ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-ফেনী জেলার সীমানায় মুহুরি সেচ প্রকল্পটির অবস্থান।
জানা যায়, আশির দশকের পর বিভিন্ন সময়ে ভারত ত্রিপুরার সাবরুমের নানা স্থানে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে শূন্য রেখা হতে দেড়শ’গজের মধ্যে প্রায় ৩৬টি শক্তিশালী পাম্প মেশিন বসিয়ে ফেনী নদী থেকে একতরফাভাবে পানি তুলে নিচ্ছে। এ পাম্পগুলোর প্রতিটির ন্যূনতম ক্ষমতা দুই কিউসেক। এ হিসেবে ৩৬টি পাম্প মেশিনে চুক্তি ছাড়াই ৭২ কিউসেক পানি নিচ্ছে তারা।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, প্রতিনিধি দলটি নদীর বর্তমান পানি প্রবাহ, ইনটেক ওয়েল (কূপ) খননের সম্ভাব্য স্থান পর্যবেক্ষণ করেন।
তিনি বলেন, এটা ছিল প্রাক পর্যবেক্ষণ। চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণ করার জন্য সপ্তাহ খানের মধ্যে জেআরসির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল রামগড় আসবেন।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলছেন, নদীতে বালু তোলার জন্য যাদের ইজারা দেয়া হয়েছে, তারা অনুমতির চেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে ছোট ছোট মেশিন দিয়ে ইচ্ছামত বালু তুলছে। ফলে আমার ইউনিয়নের অনেক জায়গায় নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে ফেনী নদী, অভিন্ন নয়- শুধুই বাংলাদেশের সম্পদ। এর উৎপত্তি, প্রবাহ এবং ভৌগলিক অবস্থান নিশ্চিত করে ফেনী নদী কোনভাবেই আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহের সীমা রেখায় প্রবাহিত নয়। দেশি-বিদেশি যারাই ফেনী নদীকে অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদী প্রমাণের চেষ্টা করছেন বহু বছর ধরে তারা কখনই মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে এর পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারেননি।(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এলএ/এআর )

মন্তব্য করুন