জহিরুলের পর সাফায়েতও ফিরেছেন কফিনবন্দি হয়ে

ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মাঝ সমুদ্রে ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টির কবলে পড়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় মারা যাওয়া সাফায়েত মোল্লার মরদেহ নিজ বাড়িতে এসেছে। মরদেহ পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে নিজ বাড়ির পাশে দাফন করা হয়।
সাফায়েত মোল্লা (২০) মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের উম্মারখালী গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাফায়েত মোল্লার পিতা কাশেম মোল্লা। এর আগে মারা যাওয়া প্রথম দফায় ইমরান হাওলাদার, দ্বিতীয় দফায় জয় তালুকদার এবং তৃতীয় দফায় জহিরুল ইসলামের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাফায়েত মোল্লার পিতা কাশেম মোল্লা জানান, সোমবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সাফায়েত মোল্লা লিবিয়া থেকে ২৪ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ২৫ জানুয়ারি অতিরিক্ত ঠান্ডায় মৃত্যুবরণ করেন সাফায়েতসহ ৭ বাংলাদেশি। সাফায়াতের মৃত্যুর খবর প্রথমে না পেলেও ২৭ জানুয়ারি জানতে পারে সাফায়েত মারা গেছে। গত ২৯ জানুয়ারি ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এক অতি জরুরি নোটিশের মাধ্যমে জানা যায় তিউনিউসিয়ার ভূমধ্যসাগরে ৭ বাংলাদেসি প্রাণ হারায়। মরদেহ আসার পরে একনজর দেখতে ভিড় করেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।
সাফায়েত মোল্লার দুলাভাই রাসেলে মিঞা বলেন, সাফায়াতের মৃত্যুর খবর অনেক দিন দালালেরা গোপন রেখেছিলেন। তারা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিলেন যে সাফায়েত অসুস্থ, তাই হাসপাতালে আছে। এর কয়েকদিন পরে, সাফায়াতের সঙ্গে বেঁচে যাওয়া একজনের কাছ থেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পারি।’
নিহতের বড় ভাই সুফিয়া মোল্লা বলেন, ‘সাফায়েত আমাদের প্রিয়জ ছোট ভাই ছিল। অকালে প্রাণ হারাবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি। একটু উন্নত জীবনযাপন করার জন্য অবৈধভাবে দালাল চক্রের মাধ্যমে ইতালি যায়। আমরা চাই এরকম অবৈধভাবে যেনো আর কেউ না যায়। আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। যারা বিদেশ নিয়েছে, সেইসব দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এব্যাপারে রাজৈর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, ‘যারা মারা গেছেন, তাদের সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। তবে নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে জানাতে পারবো। আর দালালদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।’
তবে কোন দালালের মাধ্যমে সাফায়েত গিয়েছেন তা বলতে রাজি হয়নি তার পরিবার। আর মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা প্রহন করবো। তবে অধিকাংশ সময় নিহতের পরিবার কোনো অভিযোগ করে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দিতে চাই।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি ২৮৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালির উদ্দেশে রওনা হন। তাদের মধ্যে ২৭৩ জনই বাংলাদেশি নাগরিক। অভিবাসনপ্রত্যাশী অন্যরা মিসরীয় নাগরিক। তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে যাওয়ার পর প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে তাদের নৌযান। এ সময় প্রচণ্ড ঠান্ডায় হিম হয়ে মারা যান সাত বাংলাদেশি। গত ২৫ জানুয়ারি বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশ ইতালির দূতাবাস। বাংলাদেশ ইতালি দূতাবাস থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যামে নিশ্চিত করেন যে মারা যাওয়া সাত বাংলাদেশি মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুর জেলার।
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন