কাফরুলে মসজিদ নিয়ে টানাহেঁচড়া, জমি আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১৮:২৭ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২২, ১৮:১৪

রাজধানীর মিরপুরে বাউনিয়াবাদ খালের পাশে গড়ে তোলা হজরত ওমর (রা.) মসজিদ নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। মসজিদ কমিটি বলছে, মসজিদটি উচ্ছেদের পায়ঁতারা করছে একটি চক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা এই মসজিদের জায়গার মালিক জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ইদ্রিস হোসাইন ও তার সহযোগীরা জমিটি দখলের পাঁয়তারা করছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইদ্রিস হোসাইনের পাল্টা অভিযোগ, স্থানীয় একটি কুচক্রি মহল তার সুনাম নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এই মসজিদের বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন খরচ তিনি বহন করেন। জায়গাটি তাদের পূর্বপুরুষের। এ বিষয়ে তাদের পক্ষে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। মসজিদটি সরিয়ে পাশেই নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলছেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইদ্রিস হোসাইন স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে বিপুল অর্থের চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী ইদ্রিস গং পেশিশক্তি ব্যবহার করে জমিটি ওই কোম্পানিকে দখলে নিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১/১ নম্বর সড়কের পাশে বাউনিয়াবাদ খালের (কাফরুল থানার ইব্রাহিমপুর মৌজার এসএ খতিয়ানে নম্বর-২৯,৩০,৩১, আরএস খতিয়ান নম্বর-২, মহানগর জরিপের ৬ নম্বর খতিয়ানের মহানগর জরিপের ৩০১ নম্বর দাগের উপরে .১৬৫০ শতক বা দশ কাঠা জমির উপরে ২০১৪ সাল থেকে হজরত ওমর (রা.) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। জমিটি ঢাকা মহানগর রেকর্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হাউজিং অ্যান্ড ঢাকা সেটেলমেন্টের রেকর্ডভুক্ত হয়। সে হিসাবে জমিটির মালিক জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের গেইটের সামনে একটি সাইবোর্ডে সতর্কীকীরণ বিজ্ঞপ্তি। তাতে লেখা- ওই সম্পত্তির ওপর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে রুল জারিসহ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ আদেশটি দেন। তপসিল বর্ণিত সম্পত্তির রিটপিটিশনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাঈল হোসেন গং ১. মো. ইসাহাক মিয়া ২ মো. ইদ্রিস হোসাইন. ৩ ফারুক হোসাইন

তপসিল পরিচয়: জেলা ঢাকা, থানা বর্তমান কাফরুল, মৌজা ইব্রাহিমপুর, সিএস/এসএ খতিয়ান নম্বর ৩৭, দাগ নম্বর-৩০,৩০০,৩০১,২৮। মহানগর (সিটি দাগ) ৩০১, ১৪০১,৩০২.২০২।

২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি এই মসজিদের একটি কমিটি হয়। তার আগে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ রেজাউল হক এবং সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ গিয়াসুদ্দীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে মসজিদের .১৬৫০ শতক জমি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (লিজ) পাওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। আবেদনটি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মিরপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হুরায়রাকে দেখার দায়িত্ব দেন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হুরায়রা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওনারা মসজিদটি অবৈধভাবে নির্মাণ করেছেন। পরে জমিটি স্থায়ী বন্দোবস্ত (লিজ) পাওয়ার আবেদন করেছেন। আবেদন করলেই তো লিজ দেওয়া যায় না। ওনাদের আবেদন করার অনেক আগেই জমিটি প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন হস্তান্তর করা হবে।’

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, সম্প্রতি ইদ্রিস আলীসহ ১৫-২০ জন ওই জমির উপরে থাকা টিন দিয়ে ঘেরা একচালা মসজিদটি ভাঙার জন্য সেখানে যান। তারা জমিটির পাশে একটি ঘর তৈরি করছেন অস্থায়ী নামাজের ঘর হিসেবে। এতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে।

মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব থাকা হাফেজ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইদ্রিস আলীসহ ১৫-২০ জন এসেছিলেন মসজিদটি উচ্ছেদ করার জন্য। তারা জমিটি উচ্ছেদ করে অন্য কারো কাছে বিক্রি করার পাঁয়তারা করছেন। তারা সব সময়ে অস্ত্রশস্ত্রে¿ সজ্জিত থাকেন। এখানে আমাদের জীবনের হুমকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা নুর নবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মসজিদ এখানেই থাকবে। প্রয়োজন হলে জান দিব, কিন্তু মসজিদ ভাঙতে দিব না।’

এ ব্যাপারে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জায়গা আমার থানার মধ্যে কি না সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মসজিদ কমিটির লোকজন থানায় এসে অভিযোগ করলে আমি সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করব।’

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইদ্রিস আলী একজন ঠিকাদার এবং তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসাহাক মিয়ার চাচাতো ভাই।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসাহাক মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি শুনেছি জমিটি ওদের পূর্বপুরুষদের ছিল। জায়গাটি সরকার একোয়ার করেছেন। একোয়ার করা সম্পত্তি ৪০ বছর পরে কী একটা যেন করা যায়, তাই ওরা এটা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন বলে শুনেছি। এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না।’

এ ব্যাপারে ইদ্রিস হোসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই মসজিদের গত মাসের বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৫১০০ টাকা আমি পরিশোধ করেছি। এই মাসের বিদ্যুৎ বিলের টাকাও আমার পকেট থেকে দিতে হবে। যখন মসজিদের জন্য যা কিছু লাগে সেটা আমি বহন করে থাকি। এই জায়গার মালিক আমার পূর্বপুরুষ। ওনাদের কাছ থেকে হাউজিং এস্টেট জায়গাটা একোয়ার করেছে। যেটা নিয়ে আমি ও আমার অন্যান্য অংশীদার মিলে হাইকোর্টে রিট করেছি।’

এলাকার কিছু কুচক্রি মহল তাদের সুনাম নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে দাবি করে ইদ্রিস হোসাইন বলেন, ‘এই মসজিদের কাছে একটি কোম্পানি কাজ করছে। তার জন্য আমি নিজে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে একটি অস্থায়ী নামাজের ঘর তৈরি করছি। তাহলে কীভাবে আমি মসজিদের জায়গা আত্মসাৎ করছি?’

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :