পদহীন, দলবঞ্চিত তবু আবেদন কমেনি সম্রাটের!

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২২, ১৬:১২
অ- অ+

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ক্যাসিনোকান্ডের মূল হোতা বলা হয়ে থাকে। আওয়ামী সরকারের ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু ঢাকা দক্ষিণ নয়, অবিভক্ত মহনাগর যুবলীগের মুকুটহীন স্রমাট ছিলেন তিনি।

যুবলীগের এই নেতা জামিনে কারামুক্ত হওয়ার খবরে নগরের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন গত কয়েকদিন ধরে। সম্রাট কারামুক্ত হলেও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকায় সেখানে ভিড় করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সম্রাট বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডি ব্লকের সিসিইউর যে রুমটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানেই সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি নেতাকর্মীদের আনাগোনা। কারামুক্ত হওয়ায় পুলিশ পাহারা না থাকলেও সম্রাটের কর্মীদের সামলাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত আনসার সদস্যদের মোতায়েন করে রেখেছেন।

সম্রাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি তো জানতাম না তিনি অনেক বড় নেতা। কিন্তু এহন প্রতিদিন দেহি শত-শত মানুষ আসে তাকে দেখতে। লাইন ধরে বসে থাকে লোকজন। তিনি অনুমতি দিলে ভেতরে গিয়ে দেখা করতে যেতে পারে।’

এই আনসার সদস্য বলেন, ‘নেতাকর্মীরা তার (সম্রাট) লগে কথা বলে, ছবি তুলে। পোলাপান যারা আসে তারা অনেকেই পায়ে ধরে সালাম করে। তিনি সবাইকে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। কয়েকদিন আগেও আমি বুঝতে পারিনি তিনি অনেক বড় নেতা।’

সম্রাটের সঙ্গে দেখা করতে আসা দক্ষিণ যুবলীগের ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর যুবলীগে ভাইয়ের (সম্রাট) মতো নেতা পাওয়া যাবে না। তিনি সবসময় আমাদের খোঁজ নেন। মাঝে মধ্যে পকেটে হাত দিয়ে দেখতেন টাকা আছে কি না, পকেট খালি থাকলে খাবারের জন্য টাকা গুঁজে দেন।’

যুবলীগের এই কর্মী বলেন, ‘আমরা কর্মীরা মনে করি ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সম্রাট ভাই ছাড়া কারো কথা চলে না। ভাইয়ের মামলা শেষ হইছে, আমরা চাই তিনি আবার যুবলীগে ফিরবেন। আমরা তার কছে আসি, কারণ তিনি কর্মীদের মায়া করেন। বাপ-মার মতো স্নেহ করেন।’

শুধু যুবলীগ নয়, বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের মানুষ দেখতে আসেন ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে। বিপুল নেতাকর্মীর তার প্রতি যে অনুরাগ সেটা কেবলই কর্মীবান্ধব না হলে সম্ভব হতো না। সম্রাটের দীর্ঘ রাজনীতির পর যে কর্মী বাহিনী তৈরি করেছেন তারা বিশ্বাস করেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট বীর দর্পে রাজনীতিতে ফিরবেন। দলহীন, পদবঞ্চিত তবু আবেদন কমেনি তার।

২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে এর ১৯ দিন পর ৬ অক্টোবর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহচর হিসেবে পরিচিত মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এমরানুল হক আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের হাতে আটকের পর ক্যাঙ্গারুর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার ক্যাসিনোতে প্রায় ২২২ কোটি টাকা পাচার, দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক, র‌্যাব ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সর্বমোট চারটি মামলা করে।

পৌনে তিন বছর কারাভোগের পর গত ১১ মে সম্রাটের বিরুদ্ধে হওয়া চারটি মামলা থেকে তিন শর্তে জামিন দেওয়া হয় তাকে। আদালতের শর্তগুলো হলো- পাসপোর্ট জমা, স্বাস্থ্য পরীক্ষার আপডেট ও আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে তাকে। অবশ্য আটকের পর থেকেই চিকিৎসার সুবাধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে ভর্তি ছিলেন তিনি। জামিনের পর তাকে পাহারা দেওয়া কারারক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এসআর/কেএম/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভেষজ আনারস ক্যানসার প্রতিরোধে সিদ্ধহস্ত, শরীরের ওজনও কমায়
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১১০ জন
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা