বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদের গুলশানের বাড়িতে কাদের আনাগোনা? এসব কীসের আলামত?

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২২, ২২:৪৯| আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১৬:৫২
অ- অ+

বাড়িটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদের৷ অবস্থান রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২-এর ৫৫ নম্বর সড়কে৷ এই বাড়িতেই থাকেন রশিদের মেয়ে খন্দকার মেহনাজ রশিদ৷

গুলশান ক্লাবে বড় পদে মেহনাজের চাকরির খবর প্রকাশ্যে আসার পর তার বাড়ি নিয়েও পাওয়া যাচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য৷

মেহনাজের বাড়িতে দেশের একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর একাধিক কর্ণধারের যাতায়াত৷ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে রাজধানীর একটি আসনে মনোনয়ন পাওয়া এক শিল্পপতির রহস্যময় আনাগোনা ইতোমধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে।

রাজধানীর অভিজাত ক্লাবপাড়ায় অতি পরিচিত এই শিল্পগোষ্ঠীর একাধিক কর্ণধারই শুধু নয়, সেখানে গুলশান ক্লাবের বর্তমান সভাপতিও নিয়মিত যাতায়াত করেন৷ গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে৷

দেশের অন্যতম পাঁচ তারকা একটি হোটেলের একজন পরিচালক এই বাড়িতে কেন ঘনঘন আসেন তা নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে। অর্থপাচার নিয়ে তদন্ত হওয়া এই শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার কেন বঙ্গবন্ধুর খুনির মেয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন? এই প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরেও এসেছে।

সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না প্রশ্ন তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

মোহাম্মদ আলী শিকদার মনে করেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা স্বাধীনতাবিরোধীদের সহ্য হচ্ছে না। তাই তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বকে ভালোভাবে নিতে পারছে না। কারণ তার নেতৃত্বে দেশ জঙ্গিবাদমুক্ত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটেছে। পঁচাত্তরের খুনিরা দেশকে পাকিস্তানের মতো জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সেই ধারাবাহিকতায় তাদের অপচেষ্টা থেমে নেই। তাই তাদের ব্যাপারে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘গুলশানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বঙ্গবন্ধুর খুনির পরিবার বসবাস করে, এটাও আতঙ্কজনক। কারণ অভিজাত এলাকায় উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বসবাস করেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ-সম্পর্কও গড়ে ওঠে প্রতিবেশী হিসেবে। কেউ যদি এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পঁচাত্তরের খুনিচক্র এখনো গর্জে ওঠার চেষ্টা করে। দেশকে বিপথে নিতে তাদের ষড়যন্ত্রও থেমে নেই। এদেরকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এরা খুবই সংঘবদ্ধ। তবে এদের চেতনা খুবই দুর্বল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকৃত বিকাশ হলে তাদের প্রতিহত করা সহজ হবে।’

বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একজন খুনির মেয়ে কীভাবে গুলশানের ক্লাবের মতো অভিজাত শ্রেণির মিলনমেলায় ঢুকে পড়ল, কেন ঢুকল, খতিয়ে দেখতে হবে। এটা শুধু চাকরি নয়, এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোনো দূরভিসন্ধি আছে বলে আমি মনে করি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ মনে করেন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখনো সক্রিয়।

ড. হারুন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যেসব খুনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে তারা দমে যায়নি, এখনো সক্রিয়। তাদের পরিবারের সদস্যরাও তাদের চেতনাতেই বেড়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে সাপের বাচ্চা সাপই হয়।’

এই বঙ্গবন্ধু গবেষক মনে করেন- বঙ্গবন্ধুর খুনি পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছে, সেই তথ্য গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে থাকা উচিত৷ তিনি বলেন, ‘তাদের গতিবিধিও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ-সম্পর্ক রাখছে, কী বৈঠক করছে, কোনো ষড়যন্ত্র চলছে কি না, এসব জানতে হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে হবে।’

গুলশান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফেরদৌস খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা মেহনাজ রশিদের পরিচয় জানতে পেরে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। আগে যদি তার পরিচয় জানতাম, তাহলে তো চাকরিই হতো না। এ কথা আমরা ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি। তিনি (মেহনাজ) কীভাবে আমাদের ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন, কতদিন কাজ সব জানানো হয়েছে।’

ক্লাবের অনেকেই মেহনাজ রশিদের বাসায় যাতায়াত করতেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদৌস খান বলেন, ‘সেটা আমার জানা নেই, তবে আমি কোনো দিন সেখানে যাইনি। যারা গেছে তাদের কাছে প্রশ্ন করেন।’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই ধরনের সুযোগ দেওয়ার ঘটনা, খুবই দুঃখজনক। মেনে নেওয়া যায় না। অনেকে এসব পরিবারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখে, ধারণ করে। গুলশান ক্লাব অবশ্যই জেনে-শুনে তাকে চাকরি দিয়েছে। তাদের এমন কাণ্ড করা ঠিক হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উচিত কেন, কীভাবে, কারা চাকরি দিলো, তাদের কী লাভ- এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।’

প্রসঙ্গত, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদের মেয়ে গুলশান ক্লাবের উচ্চপদের চাকুরে? এটাও সম্ভব!’ শিরোনামে ঢাকাটাইমসে শুক্রবার একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে গুলশান ক্লাব কর্তৃপক্ষ। চাঞ্চল্যকর সংবাদটি নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে মেহনাজকে উচ্চ পদের ওই চাকরি থেকে বরখাস্তের খবর জানানো হয়।

গেল বছরের অক্টোবরে ক্লাবটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এডমিন পদে চাকরি নেন মেহনাজ রশিদ। তিনি ক্লাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনারও দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি তিনি বেশ দাপটের সঙ্গে ক্লাবে চলাফেরা করতেন।

জানা গেছে, উচ্চ বেতনে চাকরি নেওয়া মেহনাজ ক্লাবে ব্যাপক দাপট দেখাতেন। এমনকি তার গুলশানের বাসায় ক্লাবের অনেকে আড্ডাও দিতেন। এদের বেশির ভাগই সমাজের অর্থবিত্তশালী। মেহনাজ তাদের মাধ্যমে অর্থসম্পদের মালিকও হন।

সূত্র জানায়, যেসব ব্যবসায়ী এই পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে তাদের শনাক্তে মাঠে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ঠিকমতো আয়কর দেন কি না, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বৈধ কি না— সেসব বিষয়ে চলছে অনুসন্ধান। প্রয়োজনে নেওয়া হবে দুদকের সহযোগিতা।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দুই দফায় ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া রশিদসহ পাঁচ খুনি এখনো অধরা। আর রশিদের মেয়ে মেহনাজ ২০০৯ সালে তৎকালীন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসকে হত্যাচেষ্টা মামলার অন্যতম আসামি।

(ঢাকাটাইমস/০৬জুন/এইচএফ/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত, জাতির সামনে উপস্থাপন ৫ আগস্ট
সালথায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা শাহিন গ্রেপ্তার
সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীকে দেখতে হাসপাতালে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে এনসিপি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা