বাজেট পাসের পর পুঁজিবাজারে ভালো কিছু দেখতে পাব: আহমেদ রশীদ লালী

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২০ জুন ২০২২, ২০:০৩| আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ২১:৩৩
অ- অ+

নতুন বাজেট প্রস্তাবের পরে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বাজারও কিছুটা নেতিবাচক ধারায় চলছে কদিন ধরে। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সামনের দিনে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার কথাই বলছেন।

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও বাজেট পাস সামনে রেখে পুঁজিবাজারের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশীদ লালীর সঙ্গে। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বাজেট পাসের পর পুঁজিবাজার কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে কথা জানালেন। এ ছাড়া পড়তি বাজারে বিনিয়োগকারীদের করণীয় সম্পর্কেও কথা বলেছেন এই পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ।

ঢাকাটাইমস: পুঁজিবাজার নিয়ে আশা-হতাশা দু-ই আছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। পুঁজিবাজার কীভাবে ভালো হতে পারে?

আহমেদ রশীদ লালী: আমাদের পুঁজিবাজারের অংশ হওয়ার এখনো অনেক কিছু বাকি আছে। সেসব পর্যায়ক্রমে যুক্ত হবে। সামনের দিনে পুঁজিবাজারে অনেক ভালো কিছু দেখতে পাব। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি ক্লিয়ারিং করপোরেশন হয়েছে। বন্ড মার্কেটের সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এ রকম আরো বহু ইতিবাচক প্রোডাক্ট পুঁজিবাজারে আসবে। এর মাধ্যমে বাজার অনেক বড় হবে৷ প্রোডাক্ট যত বাড়বে পুঁজিবাজার তত সমৃদ্ধ হবে। পুঁজিবাজারের গ্রোথ এখনো অনেক বাকি, যেটা ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব। এ জন্য আমি আশা করছি সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজার অনেক ভালো হবে।

ঢাকাটাইমস: বাজারের বর্তমান প্রবণতাকে কীভাবে দেখছেন? বিনিয়োগকারীরা এত উদ্বিগ্ন কেন?

আহমেদ রশীদ লালী: বাজারে ওঠানামার প্রবণতা পৃথিবীর সব শেয়ারবাজারেই আছে। আমরা বলি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হয়ে গেছে। পুঁজিবাজার কখনো স্থিতিশীল হয় না। দুনিয়ার সব জায়গায় পুঁজিবাজার ওঠানামার মধ্যে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। এর মধ্যে আপনাকে বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে, ব্যবসা করতে হবে। বাজার ওঠা-নামার মাঝে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

ঢাকাটাইমস: নতুন বাজেট ঘোষণার দিকে আশায় তাকিয়ে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বাজেট প্রস্তাবের পর এর কী ধরনের প্রতিফলন ঘটেছে পুঁজিবাজারে?

আহমেদ রশীদ লালী: এবারের বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য আড়াই শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়েছে। ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানো হয়েছে করপোরেট ট্যাক্স। অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এই ট্যাক্স ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য আমরা চেয়েছিলাম তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের পার্থক্যটা ১০ শতাংশ হোক। অন্যদিকে ডিভিডেন্ড চেয়েছিলাম সম্পূর্ণ করমুক্ত। এ ছাড়া আমাদের আরও যেসব দাবি ছিল সেগুলোর জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি।

দেশ থেকে যে টাকাটা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে, সেই টাকাটা নিয়ে আসতে সরকার একটা সুযোগ দিয়েছে। আমি মনে করি এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এই টাকা এসে গেলে এর একটা অংশ যেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয় সেজন্য সরকার কাজ করছে। আমি আশা করছি ৩০ জুন বাজেট পাম হলে পুঁজিবাজারের জন্য আরো দু-একটা ভালো জিনিস থাকবে। ইতোমধ্যে এ রকম আশ্বাস অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন। তাই আমরা আশা করছি, বাজেট পাস হলে পুঁজিবাজার অনেক কিছু পাবে।

ঢাকাটাইমস: বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীকে বাজারে আনার জন্য অনেক দিন ধরে চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তেমন কোনো ফল আসছে না।

আহমেদ রশীদ লালী: বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মার্কেটিংটা আরও বাড়াতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের রিসার্চ বলতে কোনো কিছু নেই। এখানে যদি আট-দশজন অ্যানালিস্ট রাখা যায় তাহলে বিনিয়োগকারী, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবে৷ পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে তা সবাই জানতে পারবে। সেখান থেকে বিভিন্ন পলিসি নিয়ে বিএসইসিতে দিতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এই রিসার্চও নেই, অ্যানালিস্টও নেই। যদি এগুলো হতো তাহলে রিসার্চটা মানুষ কিনে নিত। বিনিয়োগকারীরা কিনবে কোথায় কী হচ্ছে তা দেখার জন্য৷ তো আমি মনে করি, অ্যানালিস্টদের রেখে যদি একটা প্রোপার রিসার্চ করা যায় তাহলে বাজার উপকৃত হবে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে এই অনুরোধ রইল।

ঢাকাটাইমস: মাঝে মাঝেই দেখা যায় লোকসানি প্রতিষ্ঠান দরবৃদ্ধির শীর্ষে চলে আসে। বছর বছর এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আহমেদ রশীদ লালী: ছোট পেইড-আপের কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা বেশি ইন্টারেস্ট শো করে। কারণ, পেইড-আপ বড় হয়ে গেলে তার ইন্টারেস্ট লেভেলটা কমে গিয়ে ইনভেস্টমেন্টে চলে যায়। আমাদের বাজারটা বর্তমানে ট্রেডিংনির্ভর হয়ে গেছে। ৮০ শতাংশ হচ্ছে ট্রেডিং আর ২০ শতাংশ হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট।

একজন বিনিয়োগকারীর জন্য যেটা অত্যন্ত প্রয়োজন সেটা হলো- কারো যদি ১০০ টাকা থাকে তাহলে উনি ২০ টাকা ট্রেডিং করবে আর ৮০ টাকা ইনভেস্টমেন্ট করে রাখবে, বছর গেলে সেখান থেকে একটা ইনকাম জেনারেট হবে৷ আর যদি ক্যাপিটাল গেইন হয় তাহলে বিনিয়োগকারী ক্যাপিটাল গেইন নেবেন। তাহলে দেখা যাবে দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে গেছে।

তাই বড় ক্যাপিটালাইজেশনে ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে। আজকে কিনে কালকে বিক্রি করে লাভ করা যাবে না। এতে ক্যাপিটাল গেইন হবে না। তাই বড় কোম্পানি যেগুলো আছে সেগুলোকে মাথায় রেখে তিন বছর বা পাঁচ বছর সময় ধরে এগোতে হবে।

আর এজন্যই বিনিয়োগকারীরা বড় কোম্পানির দিকে যেতে চায় না। কারণ বড় কোম্পানিতে কুইক রিটার্ন নেই। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা চায় কুইক রিটার্ন। এ জন্যই এসব জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি বা ছোট মূলধনি কোম্পানিগুলো দর বৃদ্ধির শীর্ষে চলে আসে।

ঢাকাটাইমস: ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সবার ভরসার জায়গায় আছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এই জায়গায় আসতে পারে?

আহমেদ রশীদ লালী: ব্যাংকিং সেক্টর একটা ভালো নিয়ন্ত্রিত সেক্টর। ব্যাংকিং সেক্টর সব সময় ভালো লভ্যাংশ দেয়। কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে দেখেছি আমরা বিগত দিনগুলোতে। তাই বিনিয়োগকারীরা ধরেই রাখে যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ তো পাওয়া যাবে। কিন্তু ব্যাংক সেক্টরে যেটা হয়েছে তাদের ক্যাপিটালাইজেশন বিশাল হয়ে গেছে। ব্যাংকভেদে ৭০০ কোটি থেকে নিয়ে ১৮০০ কোটি টাকাও হয়ে গেছে পেইড আপ ক্যাপিটাল। এত বড় ক্যাপিটাইলেজশনের মুভমেন্টটা কম হয়। বিনিয়োগকারীরা এত বড় ক্যাপিটালাইজেশনে কম যেতে চায়। তবে এখনো সবার আস্থার জায়গা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

ঢাকাটাইমস: ওঠানামার বাজারে পড়তি সময়ে বিনিয়োগকারীদের করণীয় কী হওয়া উচিত?

আহমেদ রশীদ লালী: বিনিয়োগকারীদের প্যানিক হওয়া চলবে না। আমি সব সময়ই এই কথাটা বলে আসছি। প্যানিক হলেই ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। যখন বাজার পড়তে থাকে তখনই যদি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেয় তাহলে লোকসানের পরিমাণ বেশি হয়। আর যারা মার্জিন লোন নেন, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মার্জিন লোনের একটা ইন্টারেস্ট আছে, সেটা দিতে হয়, তারপর লাভের হিসাব। যখন কেউ মার্জিন লোন নেন, তাকে মনে রাখতে হবে, দাম পড়ে গেলে যখন মার্জিন কল আসবে, তখন কিছু টাকা হাউসকে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা। তাতে পড়তি বাজারে শেয়ারটা লোকসানে বিক্রি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা