নায়িকা সিমিকে পঙ্গু করা কে এই ব্যাংক কর্মকর্তা?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১১:৫৬ | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১০:৩৭
ছবিতে চিত্রনায়িকা ও প্রযোজক সিমি ইসলাম কলি

বড় ব্যবসায়ী হতে গিয়ে বেহাল দশা নায়িকা ও প্রযোজক সিমি ইসলাম কলির। সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তার ওপর। উদ্দেশ্য ছিল মেরে ফেলা। ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচেছেন। তবে বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব। কারণ, তার দু’পায়ের রগ কেটে দিয়েছে হামলাকারীরা। সিমির অভিযোগ, এই হামলার পেছনে রয়েছেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা। কিন্তু কে সেই ব্যাংক কর্মকর্তা?

খোঁজ নিয়ে ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, ওই ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জীবন কৃষ্ণ রায়। তিনি জনতা ব্যাংকের আরামবাগ শাখার এজিএম হিসেবে কর্মরত আছেন।

সিমির সঙ্গে কথা বলে ঢাকা টাইমস জেনেছে, এই জীবন কৃষ্ণ রায়ের একটা পালিত মেয়ে ছিল। যিনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে একটা ছেলের সঙ্গে ঘর ছাড়েন। এরপর ২০১৪ সালে শিল্পকলা একাডেমিতে সিমিকে দেখে তার সেই পালিত মেয়ের মতো দেখতে বলে জানান জীবন কৃষ্ণ রায়। বলেন, ‘তুমি আমার মেয়ের মতো দেখতে।’

যেভাবে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয় সিমিকে

জনতা ব্যাংকের আরামবাগ শাখায় নায়িকা সিমির একটা একাউন্ট ছিল। তিনি একদিন সেখানে টাকা জমা রাখতে গেলে তাকে ব্যবসার প্রস্তাব দেন পূর্বপরিচিত ব্যাংক কর্মকর্তা জীবন কৃষ্ণ রায়। যেহেতু মেয়ের মতো দেখেন, তাই সরল বিশ্বাসে জীবন কৃষ্ণের মাধ্যমে তারই পরিচিত ফরিদ নামে একজনকে ধাপে ধাপে ৮০ লাখ টাকা দেন সিমি।

যদিও নায়িকা সঠিকভাবে জানতেনই না কী ব্যবসার জন্য তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সিমির অভিযোগ, ২০২০ সালে আর্থিক সংকটে থাকায় জীবন কৃষ্ণ রায়ের কাছে তিনি লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চান। এর পরই সিমির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। নায়িকা বলেন, ‘তিনি (জীবন কৃষ্ণ) আমাকে টাকা না দিয়ে উল্টো তার পা ধরে মাফ চাইতে বলেন। একদিন আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে নানাভাবে হুমকিও দেন।’

নায়িকা সিমি ইসলাম কলি

যেভাবে মৃত্যু থেকে বেঁচে ফেরেন সিমি

নায়িকার বয়ান অনুযায়ী, কোরবানির ঈদের সময় জীবন কৃষ্ণ রায় তাকে টাকাটা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নরসিংদীতে ডেকে নেন। সেখানে সিমির শ্বশুরবাড়ি। বলা হয় শ্বশুরবাড়িতে একটা বিশেষ অনুষ্ঠান আছে। গত ২৮ জুলাই সেখানে যান সিমি। কিন্তু গিয়ে অনুষ্ঠানের কোনো আলামত না দেখে একদিন থেকে গত ২৯ জুলাই রাতে তিনি ঢাকায় ফিরছিলেন।

সিমি জানান, দেবরের মোটরসাইকেলে করে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন তিনি। রাত তখন ৯টা। নরসিংদীর শিবপুর ও রায়পুরা থানার সংযোগস্থল খইনপুর কুটিরবাজার ব্রিজের কাছে পৌঁছালে নায়িকার দেবর প্রস্রাবের কথা বলে বাইক দাঁড় করেন। ঠিক তার পরই পাশ থেকে আতর্কিত হামলা চালানো হয় সিমির ওপর। বেদম মারধরের পর হামলাকারীরা তার পায়ের রগ কেটে দেয়।

জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সিমি। মৃত ভেবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় খইনপুর গ্রামের এক বাসায়। উদ্দেশ্য ছিল সিমিকে কেটে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে কোথাও ফেলে দেওয়া। কিন্তু সেই মূহুর্তে ওই বাসার এক নারী সেখানে চলে আসায় প্রাণে বেঁচে যান সিমি। হামলাকারীরা সেখান থেকে চম্পট দেয়, সিমিকে নেওয়া হয় হাসপাতালে।

গত ২৪ আগস্ট বিকাল পাঁচটায় মগবাজারে এক বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে সিমি স্বয়ং।

ঘটনার পর হামলাকারী এবং ওই ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে আহত শরীর নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরা থানায় যান নায়িকা। কিন্তু মামলা না নিয়ে ঘটনাস্থল ব্রিজের ওপারে শিবপুর মডেল থানা এলাকা পড়েছে দোহাই দিয়ে ওই থানায় (শিবপর) মামলা করার পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পরে শিবপুর থানায় গেলে সেখানেও মামলা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ সিমির।

তবে রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোবিন্দ সরকারের দাবি, ওই নারী থানায় আসেননি। তাকেই বরং ফোন করে থানায় এসে মামলা করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কী কারণে তিনি সাড়া দেননি তা বোধগম্য নয়। অভিযোগ দিলে তার মামলা গ্রহণ করা হবে।’

শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, `ঘটনাটি আমার থানা এলাকায় না। তার পরও লোকমুখে শুনে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। থানা থেকে একজন কর্মকর্তাকে ভিকটিমের খোঁজে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই নারী ঘটনাস্থল রায়পুরা বলে আর আসেননি।’

এদিকে, সিমির ওপর হামলা এবং তার থেকে ৮০ লাখ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে ঢাকা টাইমস যোগাযোগ করে সেই ব্যাংক কর্মকর্তা জীবন কৃষ্ণ রায়ের সঙ্গে। তবে একাধিক বার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিমির অভিযোগ, শুধু ওই ব্যাংক কর্মকর্তা নয়, তার ওপর হামলার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জড়িত।

(ঢাকাটাইমস/২৮আগস্ট/এলএম/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :