রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদী সেই রনি এখন কোথায়?

রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা দূর করার দাবিতে কমলাপুর স্টেশনে ১৯ দিন অবস্থান করে বিপুল আলোচনায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছয় দফা দাবি পূরণের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে ঘরে ফিরে যান তিনি। এরপর থেকে তাকে আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেলেন মহিউদ্দিন রনি?
ঢাকাটাইমস রনির খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, তিনি খুব ভালো নেই। গত এক মাস তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এখনো তা থেকে মুক্ত হতে পারেননি তিনি। এর আগে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর স্টেশনে দিন-রাত অবস্থান করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ঘুম, খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম ও রেল প্রশাসনের হয়রানির ধকলও সইতে হয় তাকে।
গত ১৩ জুন রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট কাটার চেষ্টা করেন রনি। অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে বিকাশ থেকে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠানো হয়। কিন্তু পিন নম্বর দিয়ে সেটা নিশ্চিত করার আগেই বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিটের মূল্য কাটা হয়।
ঘটনার পর রনি দ্রুত কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলওয়ের সার্ভার রুমে অভিযোগ করেন। কিন্তু টিকিট কিংবা টাকা ফেরত পাননি। বরং তিনি দেখতে পান, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তার বুকিং করা ৬৮০ টাকার আসনটি আরেক যাত্রীর কাছে ১২০০ টাকায় বিক্রি করেন স্টেশনের কম্পিউটার অপারেটর।
রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনা এবং ভোগান্তির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবিসহ ৭ জুলাই কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু করেন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের এই শিক্ষার্থী। কোরবানির ঈদের দিনও তিনি কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করেন।আন্দোলনকালে নিজের প্রতি অনিয়মের বিরাট প্রভাব পড়ে মহিউদ্দিন রনির ওপর। আন্দোলন থেকে ফেরার পর অসুস্থতা ঘিরে ধরে তাকে। ঢাকাটাইমসকে রনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বর্তমানে সুস্থ না হলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘আমি এক মাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ছিলাম। তারপর বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হই। গতকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে একজন বিশেষজ্ঞের চিকিৎসায় এসেছি।’
নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে রনি বলেন, ‘রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্দোলনের সময় খাবারের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তখন আমি ওটাকে সেভাবে পাত্তা দিইনি। পরবর্তী সময়ে আস্তে আস্তে আমার লিভার ফুলে অনেক বড় হয়ে যায় ও ড্যামেজ করে দেয়। সেই সঙ্গে খাদ্যনালীতেও বেশ কিছু সমস্যা হয়েছে।’
এখন থেমে থেমে জ্বরও আসছে জানিয়ে রনি বলেন, ‘জ্বরের কারণটা ডাক্তার এখনো নির্ণয় করতে পারছেন না। তবে আশা করি শিগগিরই সুস্থ হয়ে উঠব।’ তার ছয় দফা দাবি পূরণের কত দূর কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি আন্দোলনে নেই। তবে আমার বন্ধুরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে বেড়াচ্ছে। ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দায়ের করছে।’
অসুস্থ থাকলেও রনি খোঁজ রাখছেন রেল ও সহজ ডটকমের কাজকারবার সম্পর্কে। সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে বুধবার ভোক্তা অধিকারের ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ করে রনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে সহজ ডটকমের এমন প্রতারণা দেখে মনে হচ্ছে, রেলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা নয়, প্রতারণা করে দ্রুত টাকা-পয়সা কামিয়ে নিতে চাইছে তারা।’
রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তির প্রতিবাদে ১৯ দিন অবস্থানের পর ২৫ জুলাই রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয় রনির। চার ঘণ্টার বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থাগিতের ঘোষণা দেন প্রতিবাদী এই তরুণ। বৈঠকের পর জানানো হয়, দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না নজরদারিতে রাখতে রনিকে রেলের অংশীজন কমিটির সদস্য করা হবে।
রনি তখন জানিয়েছিলেন, তার আন্দোলন ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ যাতে সুবিধা নিতে না পেরে, সেজন্য কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে কমলাপুর স্টেশনে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় দায়ী এবং স্টেশনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যারা স্টেশনে প্রবেশ করতে দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার রেল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
রনির ছয় দফা দাবি
• টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডটকম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
• যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।
• অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।• যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
• ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
• ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/কেআর/মোআ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

দাম কমায় গরুর মাংস কেনার হিড়িক

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ দুই পরাশক্তির

৫৮১ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ: পোটনকে গ্রেপ্তারে কেন সময় নিচ্ছে দুদক

নীতি সুদহার বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা

ইন্টারনেটে উন্মুক্ত শিশুর তথ্য, বাড়াচ্ছে নিরাপত্তা ঝুঁকি

পুলিশ পরিদর্শক দম্পতির এত সম্পদ!

ইন্টারনেটে ধীরগতি, ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কা উচ্চ মাধ্যমিকের সাড়ে ১৩ লাখ ফল প্রত্যাশীর

তাজরীন অগ্নিকাণ্ড: ১১ বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ, ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষের গাফিলতি

নির্বাচন নিয়ে দ্বিধায় ইসলামি দলগুলো
