মিয়ানমারের স্কুলে শিশুদের যেভাবে হত্যা করে সরকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৩০ | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:২২

সম্প্রতি মিয়ানমারের সাগাইং স্কুলে ১১ শিশু হত্যার ঘটনা বেশ আলোচনায় আসে। দেশটির সংবাদ মাধ্যম এবং বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী এ সংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থেকে সরে আসা এক পাইলট জান্তা সরকার কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে সে বর্ণনা দিয়েছেন।

জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনী থেকে দলত্যাগ করা পাইলট ক্যাপ্টেন জে থু অংয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছে থাইল্যান্ড ভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যম ইরাবতী। সাক্ষাৎকারে কিভাবে জান্তা পাইলটরা গত সপ্তাহে সাগাইং অঞ্চলের একটি গ্রামের স্কুলে হামলা চালিয়ে ১১ শিশুকে হত্যা করেছিল সে ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য তিনি দিয়েছেন।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক বাহিনী থেকে সরে আসেন ক্যাপ্টেন জে থু অং। তার মতে, হামলাকারী হেলিকপ্টারগুলি ভূমি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মিটারের বেশি উড়তে পারত না। সাগাইং এলাকার স্কুলটিও ছিল খোলা মাঠের মাঝখানে অবস্থিত। তাই হামলার সময় স্পষ্টভাবেই পাইলটরা স্কুলের শিশুদের দেখতে পেয়েছিল।

সাগাইংয়ের দেপাইন টাউনশিপের লেট ইয়েট কোনে গ্রামের একটি স্কুলে রাশিয়ার তৈরি দুটি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি চালায় সরকার। ঘটনায় সাত বছরের কম বয়সীসহ প্রায় ১১ জন শিশু নিহত হয় এবং এক ডজনেরও বেশি আহত হয়। অপরদিকে জান্তা সৈন্যরা তখন মাটিতে আক্রমণ করে। সে হামলায় প্রায় পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক গ্রামবাসীও নিহত হয়।

ক্যাপ্টেন জে থু অং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পরপরই সামরিক বাহিনী থেকে সরে এসেছিলেন। তার ভাষ্যমতে, ভূমির পরিস্থিতি বিবেচনা করে, হেলিকপ্টারগুলি ৩০০ থেকে ৪০০ মিটারের বেশি উড়তে পারত না। গ্রামের স্কুলের চারপাশে পাহাড় বা জঙ্গল ছিল না, বরং মাঠ দিয়ে ঘেরা ছিল। বলতে গেলে পাইলটদের চোখে স্কুলের শিশুদের না দেখতে পাওয়ার তেমন কোনো কারণই থাকার কথা না। বরং তাদের স্পষ্ট দেখতে পাওয়ার কথা।

ক্যাপ্টেন জে থু অং

স্কুলের এক স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের বরাত দিয়ে ইরাবতী জানায়, হেলিকপ্টার আসার সময় শিশুরা স্কুলের মাঠে খেলছিল। শিক্ষকরা চিৎকার করে শিশুদেরকে নিরাপদে থাকার জন্য শ্রেণীকক্ষে আসতে বলেন। কিন্তু শিশুরা ভেতরে ছুটতে থাকলে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান শিক্ষক। বিস্ফোরণটি সরকারের হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা রকেট থেকে হয়েছিল।

জে থু অং বলেন, হামলা পরবর্তী ছবিগুলো স্কুলটিকে লক্ষ্যবস্তু করার বেশ কিছু সূত্র দেয়। হেলিকপ্টারগুলি স্থীরভাবে স্কুল ভবনের দিকে লক্ষ্য রাখবে, কারণ তাদের দিকে কোন গুলি চালানো হয়নি, বরং রকেট এবং মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানো হবে। ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ছাদ ছিঁড়ে গেছে, কংক্রিটের স্তম্ভ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানবদেহের টুকরোও দেখতে পাচ্ছি। এই সব প্রমাণ করে যে স্কুলটিতে রকেট হামলা হয়েছে।

শিক্ষক ও গ্রামবাসীদের ভাষ্যমতে, হেলিকপ্টারগুলো অন্তত তিনটি রকেট ছুড়েছে, পাশাপাশি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মেশিনগানের গুলি ছুড়েছে। হামলার সময় প্রায় ২০০ তরুণ ছাত্র ক্লাসে উপস্থিত ছিল।

হামলার ঘটনার পরপরই জে থু অং তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি বলতে লজ্জা বোধ করছি যে আমি এমআই-৩৫ উড়েয়েছি। যারা একসময় আমার বন্ধু ছিল তারাই এমন জঘন্য অপরাধটা করেছে।’

সাক্ষাৎকারে অং বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং প্রধান অপরাধী আঞ্চলিক কমান্ডার যিনি আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে পাইলটরাও দায়ী। যদিও হামলাকারী পাইলটদের কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। তবে সেনাবাহিনীর কাছে বর্তমানে ১৩টি এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার রয়েছে এবং কেবলমাত্র ২৬ জন পাইলট রয়েছেন যারা সেগুলি উড়াতে পারে।

সাগাইংকে কেন টার্গেট করা হয়েছিল?

এমআই-৩৫ হেলিকপ্টারগুলি প্রধানত ভারী যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে সামরিক সরকার এমআই-৩৫ এর পাশাপাশি এমআই-১৭ হেলিকপ্টারও ব্যবহার করছে প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি সাগাইং অঞ্চলে হামলা চালাতে।

এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার দিয়ে আক্রমণ করার ঠিক পরপরই এমআই-১৭ হেলিকপ্টারগুলি জান্তা সৈন্যদের টার্গেট এলাকায় নামানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। সৈন্যরা তখন গ্রামবাসীদের হত্যা ও আটক করে এবং বাড়িঘরে আগুন দেয়। লেট ইয়েট কোনে গ্রামেও ঠিক তাই হয়েছে।

অং বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সাধারণত কায়াহ এবং চিন রাজ্যে এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় এই ধরনের অভিযান চালায় না। সামরিক বাহিনী ভয় পায় এই জন্য যে, এই অঞ্চলগুলিতে এমআই-৩৫ হামলার পরেও যদি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার থেকে ৭৫ জন বিধ্বংসী সৈন্য নামানো হয় তবু তারা মাটিতে টিকতে পারবে না। কিন্তু সরকার বিশ্বাস করে সাগাইং-এ পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এর সঙ্গে লড়াই করার জন্য ৭৫ জন সৈন্য যথেষ্ট।

পাঁচ মাস আগে মিয়ানমারে আসা দুটি এসইউ-৩০এসএমই জেটের হুমকির বিষয়েও সতর্ক করেছেন জে থু অং। তিনি বলেন, রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়ায় এসইউ-৩০এসএমই ব্যবহার করেছিল। এটি আট টন পর্যন্ত বোমা বহন করতে পারে এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত অন্যান্য বিমানের চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক শক্তি রয়েছে এর। পিডিএফ ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করতে এসইউ-৩০এসএমই ব্যবহার করতে পারে জান্তা। কেননা তারা পিডিএফকে ধ্বংস করার সমস্ত উপায় ব্যবহার করবে।

তিনি বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি তাদের ওপর কাজ করেনি এবং এখন তাদের অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য রাশিয়া রয়েছে।

এখনও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে থাকা সেনাদের উদ্দেশ্যে জে থু অং বলেন, ‘আপনি দেখবেন যে নিরীহ শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারের সব মানুষ এখন জানে সামরিক পাইলটরা নিষ্পাপ শিশুদেরও হত্যা করবে। সচেতন থাকুন, আপনি যদি বর্বর শাসকের অনুসরণ করতে থাকেন এবং নিরপরাধ নাগরিকদের ক্ষতি করতে থাকেন তবে আপনি নিজেকে মানুষও বলতে পারবেন না। সত্য দেখুন, দ্রুত বেরিয়ে আসুন এবং এমন অপরাধ করা এড়িয়ে চলুন যা আপনাকে সারা জীবন তাড়িত করবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :