মাদক মামলার শাস্তি দৃশ্যমান হলে ডিমান্ড-সাপ্লাই কমে যেত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০০ | প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:০৮

মাদকের মামলা বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষী পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বলেন, ‘কারাগারগুলোতে বন্দিদের ৬০ শতাংশই মাদক মামলার। বিচারের সময় সাক্ষী পাওয়া যায় না। লম্বা জট লেগেছে মামলার।’

আর এ কারণে মাদক মামলা হারিয়ে যায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মাদক মামলার বিচারে আমরা চেয়েছিলাম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল । আমরা সেটা এখনো পাইনি। যদি শাস্তিটা দৃশ্যমান হতো তাহলে মাদকের ডিমান্ড হ্রাস ও সাপ্লাই কমে যেত।’

সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মাদকাসক্তি নিরাময়ে বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন।

দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪১ হাজারের কিছু বেশি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে কিছুদিনের মধ্যে এটা আরও বাড়বে। কিন্তু সবসময় থাকেই ৮০ থেকে লাখের বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই মাদক ব্যবসায়ী।’

‘মাদক সরবরাহে সমাজের কতিপয় পেশাজীবীও জড়িত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও বিত্তবানরা। আমরা সবাইকে আইনের আওতায় আনছি। কেউ বাদ যাচ্ছে না।’

‘মাদক সরবরাহে সমাজের কতিপয় পেশাজীবীও জড়িত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে আছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও বিত্তবানরা। আমরা সবাইকে আইনের আওতায় আনছি। কেউ বাদ যাচ্ছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জেলখানায় গিয়ে দেখুন, মাদকের মামলায় পুলিশের সদস্য যেমন আছে, র‍্যাবের সদস্যও আছে। আবার তেমনি অন্য ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। পুলিশ হলে তাদের আইন আলাদা হবে, বিষয়টি এমন নয়।’

ডোপ টেস্টের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশে যারা মাদক নেয় তদেরকে ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে তাকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এই জায়গাটাতে আমরা খুব কঠিন অবস্থানে চলে আসছি।’

‘চাকরির শুরুতে যারা সিলেক্টেড হবে তাদেরকে ডোপ টেস্ট করার প্রচলন পুরোপুরি নিতে যাচ্ছি। পুলিশ-বিজিবি সব জায়গায় ডোপ টেস্টের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে কি না প্রয়োজনে আমরা ডোপ টেস্ট করব।’

চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণ করেন—এমন কথা শুনেছেন জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তবে বিষয়টি আমার জানা নেই। চিকিৎসকরা মাদক নেয়, সাংবাদিক-ইঞ্জিনিয়ারও নিয়ে থাকে। চিকিৎসকরা মাদক নেবে না এমনতো কথা নেই। তারা তো আলাদা জাতি না। তবে দুয়েকজন পথভ্রষ্ট হতে পারেন।’

মাদকের চাহিদা কমাতে মিডিয়ার অনেক গুরুত্ব:

মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদক ভয়াবহতা রুখতে না পারলে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখছি, আমাদের উন্নয়ন, তার সব বরবাদ হয়ে যাবে। এ জন্য মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের ভব্যিষৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে।’

বর্তমান প্রজন্মকে অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের যদি মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমাদের স্বপ্ন অবাস্তবই থেকে যাবে। মাদকের চাহিদা কমাতে হলে মিডিয়ার অনেকখানি গুরুত্ব রয়েছে।’

মাদকের চাহিদা কমাতে টিভিসি তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মাদকের চাহিদা হ্রাসে শুধু ক্রোড়পত্র দেই না, ছোট ছোট টিভিসিও বানাচ্ছি। প্রত্যেকটি জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। ল্যাবও হয়েছে।’

হেরোইন উদ্ধারের পর পাউডার হয়ে যায়:

সমাজের সবক্ষেত্রেই অসাধু লোক আছে মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘হেরোইন উদ্ধারের পর নাকি পরীক্ষায় পাউডার হয়ে যায়। অস্বীকার করছি না। কারণ শুধু পোর্টে কিংবা পুলিশে নয়, সব জায়গাতেই খারাপ অসাধু মানুষ আছে।’

‘সীমান্তেও যেমন চোখ বন্ধ করে অনেকে আসছে। তেমনি পুলিশেও অসাধু কেউ ইয়াবা উদ্ধারের পর পাউডার দিচ্ছে, ল্যাবে এটাও সত্য। এজন্য আমরা শক্তিশালী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করেছি।’

মাদক ঢোকা ঠেকাতে সীমান্তে সেন্সর লাগাচ্ছি:

মাদকের সাপ্লাই কমাতে বিজিবি, কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করা হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্ডারে আমরা এখন অনেক কিছু করছি। টেকনাফে নাফ নদীর যে বর্ডার তা দুর্গম। সেখানে বিওপি থেকে বিওপি যেতে সময় লাগে। আমরা সেন্সর লাগাচ্ছি সমস্ত বর্ডারে। হেলিকপ্টার টহলের ব্যবস্থা করছি, যাতে মাদকের সাপ্লাই বন্ধ করা সম্ভব হয়।’

মাদকাসক্তদের জন্য ভালো হাসপাতাল নেই:

দেশে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত আর তাদের জন্য ভালো হাসপাতাল নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে অভিজ্ঞ ডাক্তার নেই, সাইকিয়াট্রিস্ট নেই। তেজগাঁও সরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে উচ্চ ও মধ্যবিত্তের কেউ যায় না। বেসরকারি খাতে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চালুর জন্য আমরা সরকারিভাবে সহায়তা দেবো।’

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসএস/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :