আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২২, ০৯:৫৮

স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার খুবই জনপ্রিয়। আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রাচীন গ্রিক সভ্যতাতেও এর বর্ণনা পাওয়া যায়। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ রান্না ও ওষুধে এটি ব্যবহার করে আসছে। আপেল সিডার ভিনেগার একাধারে সালাদের ড্রেসিংস, ফুড প্রিজারভেটিভস এবং চাটনি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

আপেল সিডার ভিনেগার হচ্ছে এক ধরনের ভিনেগার যা ভেজানো আপেলের রস থেকে তৈরি করা হয়। আপেল থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় আপেল সিডার ভিনেগার। এতে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে। এছাড়া এ ভিনেগারে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ। আপেল সিডার ভিনেগার অনেক রোগের একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ওজন বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় অনেকে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপেল সিডার ভিনেগারের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

টাইপ-টু ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র দুই টেবিলচামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেলে, সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমে চার শতাংশ। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

ওজন কমায়

আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাওয়ার ইচ্ছাকে দমন করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। স্থুলতায় আক্রান্ত ১৭৫ ব্যক্তির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, রোজ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস দ্রুত ওজন কমায়। সেই সঙ্গে কমায় পেটের মেদ। বিজ্ঞানীরা বলেন, এই ভিনেগার স্টার্চ পরিপাকে সাহায্য করে, ফলে রক্তপ্রবাহে ক্যালরির পরিমাণ কম হয়।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। এটি খাদ্যনালীর ক্যানসার প্রতিরোধেও সমান কার্যকর।

কোলেস্টেরল কমায়

বিশ্বে অকালমৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ২০০৬ সালে জাপানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ভিনেগারের অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রুত রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ব্যাকটেরিয়া নিধন করে

ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। তাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নখের ছত্রাক, আঁচিল, কানের ইনফেকশন উপশমেও এ ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। তবে ত্বকে দিতে হলে ভিনেগারের সঙ্গে অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে নিতে হবে।

হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, আপেল সিডার ভিনেগার শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায়ও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসাথে এটি মেয়েদের নিয়মিত পিরিয়ড ঠিক রাখতেও সহায়তা করে।

হজমে সাহায্য করে

বদহজমের অসাধারণ দাওয়াই আপেল সিডার ভিনেগার। যেসব খাবার সহজে হজম হতে চায় না তেমন খাবার খাওয়ার আগে এক চুমুক আপেল সিডার খেয়ে নিলে আর বদহজম হয় না। ভাল ফলের জন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা-চামচ মধু আর এক চা-চামচ ভিনেগার মিশিয়ে খাবারের আধা ঘণ্টা আগে খেয়ে নিয়ে পারেন।

গলাব্যথা দূর করে

গলা ব্যাথা নিরাময়ের একটি ভালো টোটকা আপেল সিডার ভিনেগার। গলা ব্যাথা হলে কাপের এক-চতুর্থাংশ কুসুম গরম পানিতে সমপরিমাণ ভিনেগার মিশিয়ে এক ঘণ্টা পর পর কুলকুচা করলে উপশম পাওয়া যায়। কারণ অ্যাসিডযুক্ত পরিবেশে জীবাণু টিকতে পারে না।

বন্ধ নাক পরিষ্কার করে

আপেল সিডার ভিনেগারে থাকে পটাশিয়াম ও অ্যাসিটিক অ্যাসিড। পটাশিয়াম মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করে আর অ্যাসিটিক অ্যাসিড জীবাণু ধ্বংস করে, যা নাক বন্ধ হওয়া সমস্যা দূর করে। এছাড়া সাইনাস সমস্যাজনিত নাক দিয়ে পানি পড়াও বন্ধ করতে পারে এই ভিনেগার।

পেটের সমস্যা নিরাময় করে

আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে নানা অ্যান্টিবায়োটিক গুণ, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত ডায়রিয়া নিরাময়ে সাহায্য করে এটি। এছাড়া আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে পেকটিন, যা শরীরের ভিতরের নানা সমস্যা দূর করে।

চুলের খুশকি দূর করে

বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, এই ভিনেগার মালাসেজিয়া ফাঙ্গাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে খুশকি কমাতে সহায়ক। একইসাথে এটি পানিতে মিশিয়ে মাথায় দিলে সুন্দর ঝলমলে উজ্জ্বল চুল পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি সুন্দর ও সুগঠিত চুল পেতে সহায়তা করে।

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম

ভিনেগারের মতোই ব্যবহার করা যায় আপেল সিডার ভিনেগার। তবে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা প্রয়োজন অনুযায়ী এটিকে খাওয়ার পরিমাণ ও ব্যবহার বিধিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। তবে সামান্য গরম পানিতে ২-৩ চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। অন্যান্য ভিনেগারের মতো এটিও খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। এছাড়াও রান্নার কাজে, সালাদের সাথে এবং অন্য কোনো খাবারের সাথে এটিকে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

আপেল সিডার ভিনেগার যেভাবে বানাবেন

১০টি আপেল ভালো করে ধুয়ে প্রতিটি চার টুকরা করে কেটে নিন। বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত রেখে দিন আপেল। বাদামি হয়ে গেলে একটি বড় কাঁচের জারে আপেলের টুকরা রাখুন। ১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে জারে ঢালুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপেলের টুকরাগুলো পুরোপুরি ডুবে না যাচ্ছে, পানি ঢালতে থাকুন। প্রতি কাপে চিনি মেশাতে ভুলবেন না। পানিতে আপেল পুরোপুরি ডুবে গেলে ২ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার দিন। এবার টিস্যু দিয়ে জারের মুখ ঢেকে দিন। ভেতরে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখবেন। জারটি রান্নাঘরের ক্যাবিনেটে রেখে দিন। ৩ সপ্তাহ পর জার বের করে আপেলের টুকরাগুলো উঠিয়ে ফেলুন। ভালো করে নেড়ে আবারও আগের জায়গায় রেখে দিন। প্রতিদিন একবার চামচ দিয়ে নাড়তে হবে। ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর বের করে দেখুন টক স্বাদ এসেছে কিনা। চলে আসলে আপনার আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি!

(ঢাকাটাইমস/১৭ অক্টোবর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :