রাজধানীতে অনিরাপদ ফুটপাত, বেড়েছে ছিনতাই

পুলক রাজ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৬ | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৮

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়েছে। এতে এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকার রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকে দুর্বৃত্তরা। সেই পথ দিয়ে মানুষ যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়তে হয়। কোনো কোনো এলাকায় ছিনতাইকারীদের সঙ্গে পুলিশেরও যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। গাঁজা, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের ফাঁদে ফেলে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পথচারীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, পান্থকুঞ্জ, পানিভবন এলাকা, কলাবাগান, সংসদ ভবনের সামনের ফুটপাত, গুলিস্তান, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মহানগর প্রজেক্ট, হাতিরঝিল, ঝিলকাননসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই চলাচলে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

পথচারীদের ভাষ্য, রাজধানীর যে সড়কে রাতে লাইট থাকে না সেই সড়কের ফুটপাতে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে সমস্যায় পড়তে হয়। ফুটওভার ব্রিজে নিরাপত্তা না থাকায় রাতে ব্যবহার করতে পারছে না সাধারণ মানুষ।

রাজধানীতে দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পুলিশ কখনোই ছিনতাইকারীদের সহযোগিতা করে না। বরং ছিনতাইকারীদের ধরার জন্য পুলিশ নিজের প্রাণ বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১০ নভেম্বর রাত প্রায় ১১টার দিকে রাজধানীর পান্থকুঞ্জ এলাকার ফুটপাতে একজন পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীর ফাঁদে পড়েন। তখন এই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন। তারপরও এই পথচারী ছিনতাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পাননি। ছিনতাইকারী ও পুলিশ একসঙ্গে মিলে এরকম প্রতিদিনই ওই এলাকায় সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ভাসমান ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারীর দাপটে রাতে ফুটপাত যেন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে পথচারীদের জন্য। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নারী, পুরুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদেরও। এসব কারণে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার মুখেও পড়তে হয় পথচারীদের।

বাংলামোটর এলাকার পথচারী আলেয়া আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, কবে শান্ত হবে রাজধানী? সড়কে নেই নিরাপত্তা, আছে শুধু যন্ত্রণা। একদিকে ছিনতাইকারীর ভয়, অন্যদিকে ফুটপাতে চলাচল করতে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়। আবার কিছুক্ষণ হাঁটার পর সিগনাল পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখেও পড়তে হয়। এসব সমস্যা রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেই ঘটে থাকে।

আলেয়া আক্তার বলেন, টিএসসি থেকে মৎস্য ভবন যেতে ফুটপাত ভাঙাচুরা। শাহবাগ থেকে টিএসসি আসতে গেলেও দেখা যায় অন্ধকার। হেঁটে চলাচল করতে মহাসমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে নেই ল্যাম্পপোস্টের লাইট। এজন্য অন্ধকারে ছেয়েছে ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। নিজের নিরাপত্তা যদি না থাকে কেমন করে চলবো আমরা সাধারণ জনগণ।

হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা তাইবা রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি মিরপুর এলাকার একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। অফিস ছুটি হওয়ার পর গণপরিবহনে উঠলে যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই ফুটপাতে হেঁটেই যেতে চাই। কিন্তু ফুটপাতে হাঁটতে গিয়েও মানুষের শরীরে ধাক্কা লাগে। এমনও মানুষকে দেখেছি একটু ভিড় দেখলেই নারীদের শরীরে গিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘেঁষাঘেষি করে। একবার তো আমি একজন পুরুষকে গালে থাপ্পড়ও দিয়েছি। তারপরও এসব কুকর্ম কমেনি। পারিবারিকভাবে এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ইন্দ্রিরা রোড এলাকার বাসিন্দা সোহেল আহমদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, কী আর বলবো! রাতে চলাফেরা করতে ভয় লাগে। শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যে কয়টা ফুটওভার ব্রিজ আছে সব কয়টি ব্রিজ রাত ৯টার পর থেকে হিজড়া ও ছিনতাইকারীদের আয়ত্তে চলে যায়।

সোহেল আহমদ বলেন, ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য। সড়ক পারাপারে যেন কোনো ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। কিন্তু রাতের আঁধারে ফুটওভার ব্রিজে চলে খারাপ কাজ। মানুষ এসব দৃশ্য দেখে সড়ক বেছে নিয়েছে। কিন্তু সড়কে চলে ছিনতাই। ফুটপাত ও ফুটওভার ব্রিজগুলো রাত ১০ টার পর হয়ে ওঠে ভয়ানক।

পান্থপথ এলাকার বাসিন্দা মুকিত আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। এমনও জায়গা আছে অন্ধকার, লেম্পপোস্টে নেই লাইট। ফুটপাত ভাঙা, এর মধ্যে ছিনতাইকারীর ভয়। কখন দুর্ঘটনা ঘটে কেউ বলতে পারে না। তবে প্রতিদিন এই এলাকায় সাধারণ মানুষ ছিনতাইকারীর ফাঁদে পড়তে হয়।

ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলেরে উল্টো দিকে পান্থকুঞ্জ নামে একটা জঙ্গলের মতো জায়গা আছে। সঙ্গে মানুষ চলাচলের জন্য ফুটপাত রয়েছে। সেখানে দিনেও ছিনতাইকারীর ফাঁদে পড়ে মানুষ। তবে দিনে একটু কম থাকলেও সন্ধ্যার পর যত গভীর রাত হয় তত এই এলাকা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। দুঃখের বিষয় হলো রাতে ছিনতাইকারীর সঙ্গে পুলিশ সহযোগী হয়ে কাজ করে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, পান্থকুঞ্জের ভিতরে হিজড়াও পুলিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। পান্থকুঞ্জের ফুটপাত ধরে সাধারণ মানুষ হেঁটে গেলে হিজড়ারা মেয়ে সেজে ডাকাডাকি করে। জঙ্গলের ভিতরে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। কেউ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই ফাঁদে পড়ে। অবৈধ কোনো পণ্য দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থকড়ি লুটে নেয়।

অভিযোগ রয়েছে, পান্থকুঞ্জ এলাকায় ছিনতাইকারী, হিজড়া, পুলিশ একসঙ্গে কাজ করে। এমনকি বিভিন্ন সময় আনসার এবং আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীও সামিল হন এই চক্রের সঙ্গে। কারওয়ান বাজার মোড়ে প্রায়ই যানজট লেগে থাকায় অনেকে হেঁটে এই পথ পার হয়। আর সেই সুযোগই কাজে লাগায় দুর্বৃত্তরা।

সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে (পশ্চিম পাশে) বালু ও ইটের টুকরা স্তূপ করে রাখা হয় প্রায় সময়। এ কারণে সেখানে চলাচলকারী যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান পথচারীরা।

অভিনেত্রী মেহরান সানজানা ঢাকা টাইমসকে বলেন, দানবের শহরে বাস করি। প্রতিদিন আমরা নারীরা ঘরের বাইরে হেনস্তার শিকার হতে হয়। এই সমাজে একজন নারীকে এক ধরনের যুদ্ধ করে চলতে হয়। বাসের যন্ত্রণার কারণে এখন আমি ফুটপাত ধরে হাঁটি বা রিকশায় চলাচল করি। তারপরও বাজে কমেন্টস আমার শুনতে হয়।

সানজানা বলেন, মানুষের ভিড়ের কারণে হাঁটতেও সমস্যা হয়। এর মধ্যে ফুটপাতে ভাসমান দোকান দিয়ে আরো জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/পিআর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :