১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ

আ. লীগ-বিএনপিতে ‘হেফাজতকাণ্ডের ভয়’

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:১১ | প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:২৯

আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার গণসমাবেশ ঘিরে উত্তাপ, শঙ্কা ও ভয় বাড়ছেই। এখনও গণসমাবেশের স্থান নিয়ে রয়েছে দোটানা। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের অনুমতি দিতে চায়, আর বিএনপি নয়াপল্টনেই করতে চায়। গতকালও এর সুরাহা হয়নি। তবে সরকার কেনো নয়াপল্টনে দিতে চাচ্ছে না? আবার বিএনপি কেন সোহরাওয়ার্দীতে যেতে চাচ্ছে না? উভয় পক্ষের কি এমন ভয়? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

যদিও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ঘুরেফিরে উঠে আসছে হেফাজত প্রসঙ্গ। সূত্র বলছে, ‘হেফাজততাণ্ডব’কে ভয় পাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। হেফাজতকে ঢাকা ছাড়া করতে পুলিশ যে ধরনের অভিযান চালিয়েছিল, সেই রক্তক্ষয়ী অ্যাকশনকেই ভয় পাচ্ছে বিএনপি।

যদিও পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, যে কোনোভাবেই হোক জনগণের জানমালের ক্ষতি হতে দেবে না পুলিশ। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা কঠোর হাতে দমনে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও ভয় কাটছে না সাধারণ মানুষের।

এ অবস্থায় ১০ ডিসেম্বর ঘিরে পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ঘোষণা না দিলেও তাদের মধ্যে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় কাজ করছে। কেননা গত বুধবার রাতে মতিঝিলে একটি বিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ শঙ্কা থেকে গণসমাবেশের দু-এক দিন আগে থেকেই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে মালিক সমিতির কয়েকজন নেতার কাছ থেকে।

গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওই গণসমাবেশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাহারা বসানোসহ বেশকিছু পদক্ষেপের কথা বলছেন। হেফাজতের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, হেফাজত শাপলা চত্বর অবরোধ করে যে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং তাদের সেখান থেকে উঠাতে সরকারকে যেরকম হিমশিম খেতে হয়েছে- ওই ধরনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চায় না সরকার।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গণসমাবেশ করতে কঠোর অবস্থানে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, হেফাজতের মতো অবস্থা করতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দিতে চায় সরকার। হেফাজতকে শাপলা চত্বর ছাড়া করতে যে ধরনের অভিযান পুলিশ চালিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘জঙ্গি’ বা অন্য কারণ দেখিয়ে সে ধরনের অভিযান হতে পারে। এমন ভয় পাচ্ছে বিএনপি।

একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপিকে নয়াপল্টনে গণসমাবেশের অনুমতি দিতে সরকারের ভয় পাচ্ছে যে, বিএনপির এই গণসমাবেশের আড়ালে হেফাজতের কর্মসূচিতে ঢুকে জামায়াত-শিবির যেরকম নাশকতা করেছিল, সেরকম পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি হয়- তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা, হেফাজতের পেক্ষাপট ভিন্ন থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের শাপলা চত্বর ছাড়া করতে পেরেছে। কিন্তু বিএনপির বেলায় এ ধরনের অভিযানে জনগণ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যাতে জনমত বিএনপির পক্ষে চলে যেতে পারে। এসব কারণে এই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা।

সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। গণসমাবেশে পরিকল্পিতভাবে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে ওই উদ্যান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। উদ্যানের গেটগুলো আটকে দিলেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে নেতাকর্মীরা। এছাড়া সরকার উপযাচক হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিতে চাওয়ায় বিএনপি মনে করছে, সরকারের কোন ছক রয়েছে। যে কোনো ফাঁদ পেতে থাকতে পারে সরকার। সেই আশঙ্কা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এড়াতে চায় বিএনপি। যা তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বুধবার আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযান, যা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, জঙ্গি দমনের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করতেই এই কূটকৌশল সরকারের।

বিএনপি সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে গত ১২ অক্টোবর থেকে। এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রতিটি সমাবেশ হয়েছে কোনো না কোনো মাঠে। তবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশের জন্য তারা মাঠের পরিবর্তে বেছে নিয়েছে সড়ক। সমাবেশের নামে কি তবে অন্য পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির? এ প্রশ্ন তুলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পোস্টে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘বিএনপির আসলে উদ্দেশ্য কী? তবে কি তারা ১০ ডিসেম্বর তাদের দলীয় কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় বসে আর না উঠার পরিকল্পনা করছে? তারা কি ২০১৪-১৫ সালের মতো লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে দেশে আবার জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়? এ বিষয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের সমন্বয়ক আবদুল্লাহ্ আল নোমান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের মতো অবস্থা করতেই সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দিতে চায়। সরকার নাশকতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর জন্য এই ষড়যন্ত্র করছে।’

যে কারণে নয়াপল্টন চায় বিএনপি

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় থাকায় পুরো গণসমাবেশ তারা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।

বিএনপি বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সব সময় ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতি থাকে। বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে নানাভাবে বাধা পেতে পারেন। তাছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েকটি নতুন স্থাপনা তৈরি হয়েছে। ফলে গণসমাবেশের স্থানও অনেক ছোট হয়ে গেছে।

ঢাকার গণসমাবেশ সফল করার ব্যাপারেও বিএনপি চাপে আছে। কেননা এখান থেকেই তারা সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের ঘোষণা দিতে চায়। সুতরাং এই গণসমাবেশ ব্যর্থ করে দিতে সরকার ও সরকারি দল কঠোর অবস্থানে থাকবে। ফলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে গণসমাবেশ করতে পারলে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে।

ক্ষমতাসীনরা নয়াপল্টনকে কেন ভয় পাচ্ছেন

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বিএনপি ঢাকার গণসমাবেশের আগের দিন থেকেই পল্টন-মতিঝিল ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে ঢাকাকে অচল করার পরিকল্পনা করছে। এমন তথ্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মারফত জানতে পেরেছে সরকার। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন ও আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর পুরানা পল্টন, অর্থাৎ বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিপরীত পাশের এলাকাসহ মতিঝিলের বেশকিছু পয়েন্টে জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আশপাশের গলি থেকে বের হয়ে প্রধান সড়কে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়ার মুখে আটক বা গ্রেপ্তার এড়িয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছার জন্য ওই এলাকাগুলো বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের জন্য সুবিধাজনক। যেমনটি হেফাজতের মতিঝিল দখলের সময় ঘটেছিল। এমন হামলা বা সংঘর্ষময় নাজুক পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ পল্টন এলাকায় বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না।

১০ ডিসেম্বর নিয়ে গতকাল এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে বিএনপি সন্ত্রাস করার আগাম বার্তা দিয়েছে। গত পরশু (বুধবার) মধ্যরাতে মতিঝিলে বিআরটিসির একটা দোতলা বাস পুড়িয়ে দিয়েছে।

১০ ডিসেম্বর ঘিরে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা বসাতে শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সহযোগীদের নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ক্যাম্পাসে সতর্ক পাহারা থাকবে। আওয়ামী লীগে সারাদেশে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম সব জায়গায় সতর্ক পাহারা থাকবে।’ বিএনপি মাঠে জঙ্গিদের নামিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

ঢাকাটাইমস/০৩ডিসেম্বর/আরআর/এলএ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যেই প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নুর

বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী 

কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

আজ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :