সাক্ষাৎকার
জাতীয় চার নেতার হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি খায়রুজ্জামান লিটনের
স্বাধীনতার এতো বছর পরেও জাতীয় চার নেতার হত্যা বিচার না হওয়ায় স্বাধীন দেশের মানুষের জন্য দুঃখজনক। দ্রুত জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার করার দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন ও সমসাময়িক রাজনীতি বিষয়ে নিয়ে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এএইচএম কামারুজ্জামান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারে নিমর্মভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন এই জাতীয় নেতা। তার সুযোগ্যপুত্র আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি রাজশাহীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর মেয়র ছিলেন এবং ২০১৮ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনার বাবাসহ জাতীয় চার নেতার হত্যা বিচার এখনো হয়নি?
লিটন: স্বাধীনতার এত বছর পরেও জাতীয় চার নেতার হত্যা বিচার না হওয়া স্বাধীন দেশের জন্য দুঃখজনক। তবে যারা স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী যুদ্ধাপরাধী তাদের বিচার হয়েছে এটা জাতির জন্য সুখবর। এদের বিচারে মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। জাতীয় চার নেতার হত্যা বিচারে করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব আশা করেন?
লিটন: বাংলাদেশে একমাত্র গণতন্ত্র চর্চা করে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৪ ডিসেম্বর আমাদের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণতা দিয়ে সেই রকম যোগ্য-বিচক্ষণ ব্যক্তিদের নিয়েই আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করবেন। আবার বর্তমান কমিটিরও পুনর্বিন্যাস হতে পারে। বাকিটা নেত্রী বলতে পারবেন। আমরা আশা করি, ভালো কিছু হবে এবং দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও যোগ্য এমন নেতাকেই নেতৃত্বে দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রশ্ন: বৈশ্বিক মন্দায় মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কোনো সাংগঠনিক পরিকল্পনা রয়েছে কি না?
লিটন: বৈশ্বিক সংকট আমাদের সৃষ্ট নয়। তারপর কিছু রাজনৈতিক দল আমাদের ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এত কিছুর পরও আমাদের দল আওয়ামী লীগ এবং সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে এক হয়ে কাজ করছে। গত মাসে প্রবাসী থেকে ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসছে। তবে দেশি-বিদেশি একটি গোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যমে আমাদের বৈশ্বিক মন্দার দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। দেশি গোষ্ঠী বলতে, আমি তাদের কথাই বলছি- যারা সরকারকে উৎখাত করতে চায়, যারা সরকারের পতন ঘটাতে চায়। তারা প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের বলেছে, হুন্ডি করে দেশে টাকা পাঠাতে। যাতে করে সরকার ডলার থেকে বঞ্চিত হয়। তবে সরকার সেটাও শনাক্ত করেছে, যাতে প্রবাসীরা বৈধ মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠায়। আমরা যেন ১ ইঞ্চি জমি অনাবাদি না রাখি, আমরা যাতে অপচয়-অপব্যয় না করি। এজন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের বারবার নির্দেশ দিচ্ছেন।
প্রশ্ন: দেশের মানুয়ের জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কি থাকবে?
লিটন: আওয়ামী লীগ সবসময় দেশের মানুষের জন্য কাজ করে এবং আগামী নির্বাচনে কি কি বিষয়ে নিয়ে কাজ করবে সেই বিষয়গুলো ইশতেহারে তুলে ধরা হবে। তবে এখনই সঠিকভাবে আমার পক্ষে সব বলা মুশকিল। নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা রয়েছেন, আলাদা কমিটি আছে। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি, সেটা হলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যেটা দিয়েছিলেন, সেটা আমরা প্রায়ই বাস্তবায়ন করে ফেলছি। কিছু কিছু জায়গায় বাকি রয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘আওয়ামী লীগের মূল ইশতেহার থাকবে স্মার্ট বাংলাদেশ’। স্মার্ট বাংলাদেশের ব্যাখ্যায় কী কী থাকবে, সেটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে যেটাই হোক দেশবাসীর কল্যাণে হবে।
প্রশ্ন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি- এ বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
লিটন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। বিশে^র উন্নত দেশে যেভাবে সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেইভাবে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশ্ন: সংসদ থেকে বিএনপির সাত নেতা পদত্যাগে কোনো প্রভাব পড়বে মনে করেন?
লিটন: বিএনপির সাত নেতা পদত্যাগে আওয়ামী লীগের কিছু আসে যায় না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশের অগ্রযাত্রাকে রুখতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে বিএনপি। বিএনপির চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র কোনো দিন সফল হবে না। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে কেউ রুখতে পারবে না।
প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কতটা ডিজিটাল হয়েছে, গুজব অপপ্রচারে কতটা সক্ষম?
লিটন: গুজব প্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। এই বিষয়ে দেশের মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশে ডিজিটাল নির্মাণে একমাত্র ভূমিকা আওয়ামী লীগের। দলের নেতাকর্মীরা যতটা ডিজিটাল হয়েছে, তার চেয়ে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ডিজিটালাইড হয়েছে। কৃষক থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচে বেশি ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছেন। কৃষক আবহাওয়া খবর জানছেন, তথ্য আদান-প্রদান করছেন, কি সার দিতে হবে, কোন কীটনাশক দিতে হবে, দেশ-বিদেশে টাকা পাঠানো, টাকা গ্রহণ করা, নানা কাজে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে দেশের জনগণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেটাই চেয়েছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে দেশবাসী ডিজিটালাইড হোক। সেটা এরই মধ্যে হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের কর্মীরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: রাজশাহীতে বিএনপির-জামায়াতের জনসমর্থক বেশি- দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারপরে কারা এগিয়ে রয়েছে?
লিটন: রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াত। রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত কিছুটা শক্ত অবস্থানে ছিল, এখন যে পুরোপুরি ভেঙে গেছে- তা আমি বলব না। তবে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জন্য দলীয় প্রার্থী ঠিক করবেন। তবে দেশের উন্নয়ন ও নেত্রীর ইমেজ সবকিছু মিলিয়ে তরুণ প্রজন্ম আওয়ামী লীগের পক্ষে, নৌকার পক্ষে চলে এসেছে বলে আমি মনে করি।
(ঢাকাটাইমস/১৬ডিসেম্বর)