সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন, ব্যয় কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৬

# কর্ণফুলী টানেলের খরচ বাড়ল ৩১৫ কোটি টাকা

# একনেকে ওঠেনি আলোচিত ইভিএম

# কিশোরগঞ্জে উড়াল সড়কসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৮৮০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প এই সভায় ওঠেনি।

সভায় প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে ও ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দ্রুত কাজ করেন। খরচ কম করেন। তবে খরচ বন্ধ করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজনীয় ব্যয় করতেই হবে।

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকি প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বলেছেন, কাজের মান বাড়ান এবং খরচ কমান। কিন্তু খরচ বন্ধ করবেন না। এছাড়া উৎপাদন বাড়াতে হবে। যে যেখানে, যেভাবে আছেন তাদের কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে।

সভায় দ্বিতীয়বারের মতো কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পায়। ফলে আবারও বাড়ছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের খরচ। পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে এই প্রকল্পের খরচ বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে প্রকল্পটির ঠিকাদারের বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন আমদানি খাতে খরচ বাড়ছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা। ফলে সব মিলিয়ে এখন এই প্রকল্পে খরচ হবে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটি যখন পাস হয়, তখন এই প্রকল্পের খরচ ছিল আট হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। তখন এর মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। পরে যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম দফা সংশোধন করে খরচ ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। মেয়াদ বেড়ে যায় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সবশেষ গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সেতু কর্তৃপক্ষ। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থ দিচ্ছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলসহ একনেক সভায় সব মিলিয়ে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- চট্টগ্রামের পটিয়ার শ্রীমাই নদে বাঁধ নির্মাণ, বরিশালে শেখ হাসিনা সেনানিবাসকে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (সওজ অংশ), কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মরিচখালী পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ, বাংলাদেশের ২৪টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্প ও ক্লাইমেট চেঞ্জ এডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট ফেজ-২ (খুলনা) প্রকল্প।’

ইভএম প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম কেনার প্রকল্পটি আমাদের তালিকায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এটা নিয়ে জানতেও চাননি। তিনি যেহেতু জানতে চাননি। তাই আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু জানাতেও চাইনি। তবে ইভিএম প্রি প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এই পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার হবে কিনা এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ চিন্তা ভাবনা করবে।’

প্রকল্পগুলোর মধ্যে মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মচিখালি পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ইস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিজট্রিজ অ্যান্ড সেফলি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টারগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প(ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশে ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বরিশাল জেলার কারখানা বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন থেকে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা প্রকল্প ব্যয় ৬৭৬ কোটি টাকা। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প ব্যয় ৫২৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় ছোট দ্বীপ এবং নদীর চরের জন্য অভিযোজন উদ্যোগ প্রকল্প ব্যয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ৩৬৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডেপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট পেজ-২ খুলনা প্রকল্প ব্যয় ৪৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, ‘বৈশ্বিক যে সংকট এটি সাময়িক। কিছু দিন পরে এই সংকট আর থাকবে না। আমরা দীর্ঘ পরিকল্পনা সামনে রেখে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দিয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :