রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে কঠোর হওয়ার বার্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

সিলেট ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:০৫ | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:১৬

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দেশটির দুই গ্রুপের সংঘাতের কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বলেন, ‘সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে আর কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের বের করে দেওয়া হবে।’

শুক্রবার দুপুরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিও-৩ ইউনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে সরকারের একই অবস্থানের কথা তুলে ধরেছিলেন। সেদিন তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরও কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে আতঙ্কে কেউ কেউ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে। তাদের বের করে দেওয়া হবে’

মানবিক কারণে আন্তর্জাতিক সম্পাদায়ের আহ্বানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। বর্তমানে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন।

এদিকে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের পণ্য নিয়ে নিষেধাজ্ঞায় পড়া রুশ জাহাজের বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘রাশিয়ার সেই জাহাজ বাংলাদেশে পণ্য খালাস না করে ফিরে গেছে। এর কারণে পণ্য পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে বাকি সব কাজ ঠিকভাবেই হবে।’

এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিও-৩ ইউনিট উদ্বোধন শেষে সিলেট-১ আসনের এ সাংসদ বলেন, ‘এ হাসপাতালের আইসিউ-৩ ইউনিট এই অঞ্চলের মানুষের জন্য, বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে অবদান রাখবে।’ তবে হাসপতালের দ্বিতীয় শাখার কাজ শুরুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, এ হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে এবং সিলেটবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দ্রুত ওসামানীর দ্বিতীয় শাখার কাজ শুরু করা জরুরি। এ জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযানে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে কয়েক মাসের ব্যবধানে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। মানবিক কারণে আন্তর্জাতিক সম্পাদায়ের আহ্বানে তখন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। বর্তমানে ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশ মানবিক কারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও শুরু থেকেই নিপীড়নের শিকার এ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নিতে জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় দেশটির তৎকালীন (সু চি) সরকার। এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও হয়।

পরে দীর্ঘ আলোচনায় ২০১৯ সালে দুদফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ শুরু হলেও নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানায় রোহিঙ্গারা।

প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টার মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী সু চি সরকারকে উৎখাত করলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যায়। এরপর থেকেই জান্তা সরকার দেশটির মসনদ দখলে নিলে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জর্জরিত হয় মিয়ানমার। এই সংঘাতের প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। সীমান্তে অস্থিরতায় বেশ কয়েকবার দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

তবু থেকে নেই সীমান্ত সংঘাত, ২০২৩ সালের শুরুতেই সীমান্তের জিরো পয়েন্টে দেশটির দুই গ্রুপের সংঘাতের কারণে আতঙ্কে আরও রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে। এর মধ্যেই শরণার্থী শিবিরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এতো শরণার্থীর চাপ সামলাতে চিন্তিত বাংলাদেশের সামনে সীমান্তে নতুন অস্থিরতায় এবার কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ এমন বার্তাই দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :