ব্রিটিশ নির্ধারিত পাস মার্ক যখন বর্তমানেও কার্যকর

আবু হানিফ
 | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৬

পড়াশোনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক কতটা জ্ঞান অর্জন করল তা নির্ধারিত হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে কি না তা নির্ধারিত হয় পাস মার্ক দিয়ে।

সাধারণত পাস মার্ক হয়ে থাকে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৩৩। একজন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সর্বনিম্ন ৩৩ শতাংশ মার্ক পেতেই হবে। অন্যথায় সে অকৃতকার্য হবে। যদিও ৩৩ মার্ক ভালো ফলাফলের কাতারে পড়ে না একেবারেই। ‘ডি’ গ্রেডে পাস বলতেও দ্বিধা হয়। এ নাম্বারটি নেহায়েতই কোনোরকমে উত্তীর্ণ হিসেবেই বিবেচিত।

আবার এখন শর্তসাপেক্ষে পাস মার্কের মান কমিয়ে ২৮ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক নিজস্ব ক্ষমতায় পরীক্ষার্থীকে ২৮ এর সঙ্গে ৫ যোগ করে ৩৩ দিতে পারেন। অর্থাৎ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে মার্ক সর্বনিম্ন ৩৩ হতেই হবে। এর কম হলে তা কোনোভাবেই পাস মার্ক হিসেবে গণ্য হবে না।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বাকি দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানেও ৩৩ শতাংশ নাম্বারকে পাস মার্ক হিসেবে ধরা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, ১০০ এর ১ তৃতীয়াংশের চেয়েও কম মার্ককে কেন বা পাস মার্ক ধরা হয়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এর পিছনের রহস্য।

১৮৫৭ সালের আগে ভারত শাসন করতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কিন্তু ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর সরাসরি ব্রিটিশরাজের অধীনে ভারত শাসিত হয়। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশরাজের অধীনে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো ম্যাট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় পরীক্ষকেরা পাস করার মানদণ্ড কি হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগছিলেন। পাসের মার্ক কি ব্রিটিশ পরীক্ষার্থীদের অনুরূপ হবে না কি কম। সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে তারা ব্রিটিশ লর্ডদের পরামর্শ চান। তখন ইংল্যান্ডে পাস মার্ক ছিল ৬৫। অর্থাৎ ১০০ তে ৬৫ পেলে পরীক্ষায় কৃতকার্য বিবেচনা করা হতো, যা আমাদের দেশে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট হিসেবেই অভিহিত।

তখন ব্রিটিশ লর্ডরা মনে করতেন এই উপমহাদেশের মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির মাত্রা ব্রিটিশদের তুলনায় অনেক নিচে, বড়জোর ব্রিটিশদের অর্ধেক হতে পারে। আর সে অনুযায়ীই তারা পাস মার্ক নির্ধারণ করেন ৬৫ এর অর্ধেক ৩২.৫। সেই সূত্রেই ম্যাট্রিক পরীক্ষার পাস মার্ক ৬৫-এর অর্ধেক ৩২.৫ সাব্যস্ত করা হয়।

এ নীতির কার্যকারিতা ছিল প্রায় ৪ বছর। পরে গণনার সুবিধার্থে ১৮৬২ সালে ০.৫ যোগ করে ৩৩ করা হয়। আর তখন থেকই পাস মার্ক ৩৩ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এ উপমহাদেশ ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে অনেক আগেই তবুও এত বছর পরেও ইংরেজাদের শেখানো নিয়মেই চলছে উপমহাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন। এখানে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ইংরেজরা এ জাতিকে অবজ্ঞা ও ছোট করতেই এমন মান নির্ধারণের পদ্ধতি চালু করেছিল।

প্রায় দুইশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও কেন সে নিয়ম আজও প্রচলিত, তা নিয়ে কেউ ভাবছে না! আর এটাই হলো উপমহাদেশের ব্রিটিশ উপনিবেশের উত্তরাধিকারের একটি নিদর্শন মাত্র। তাহলে কি আজও এ জাতির জ্ঞান-বুদ্ধির উন্নতি হয়নি—ভাবার বিষয়!

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :