ইউনাইটেড হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ বিদেশি পাইলটের মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৪৬

ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মোহান্নাদ ইউসেফ হাসসান আল হিন্দি নামে গালফ এয়ারের একজন (বিদেশি) পাইলটের মৃত্যুর পর ‘ভুল চিকিৎসায়’ অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবার এ অভিযোগ করে। প্রয়াত পাইলট হাসসান আল হিন্দির বোন তালা এলহেনদি এ অভিযোগ করেন।

প্রসঙ্গত, পাইলট হাসসান আল হিন্দি জর্ডান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর বিষয়ে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে জর্ডান থেকে ঢাকায় এসেছেন তার বোন তালা এলহেনদি।

সংবাদ সম্মেলনে তালা এলহেনদি অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই অবহেলাজনিত ও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মারা গেছেন। আমি এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ন্যায়বিচার পেতে আমি বাংলাদেশ এসেছি।

তালা এলহেনদি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার ভাই ইউসেফ হাসসান আল হিন্দি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৬৩ বছর বয়সী পাইলট ছিলেন। একজন পাইলট হিসেবে নিজের কাজের দরকারে নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করতেন।

গত ১৪ ডিসেম্বর তিনি ঢাকার মেরিডিয়ান হোটেলে ছিলেন। খুব সকালে তার গালফ এয়ারের ফ্লাইট পরিচালনার কথা ছিল। রাত পৌঁনে তিনটায় তিনি ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত হন। এরপর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ভোর সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান।

পরে ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তখন তিনি সেখানে লুটিয়ে পরেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমার ভাইয়ের প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তখন তিনি পাঁচ মিনিট কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন সিপিআর পেয়েছেন। ক্রমশ তার রক্তচাপের অবনতি হতে থাকে। এরপর তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫ টার মধ্যে তাকে বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, তার ভাইকে সাড়ে ভোর ৫টায় ইউনাইটেড হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে আসা হয়। তখনও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ভোর পৌঁনে ৬টায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিএম) স্থানান্তর করা হয়।

পরে সকাল ৬টা ২৫ মিনিটে দ্বিতীয়বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে হয় তার। এরপর তাকে ১০ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয়। সকাল ৭ টায় আমার ভাইকে ইমিডিয়েট ইকোকার্ডিওগ্রাম (ইসিএইচও) করা হয় এবং কার্ডিওলজির পরামর্শ নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, সকাল ৯ টায় প্রথমবারের মতো কোনো কার্ডিওলজিষ্টের পরামর্শ নেওয়া হয় বলে হাসপাতাল দাবি করে। আমার ভাইয়ের সংকটাপন্ন অবস্থার কারণে তাকে পারকিউটেনাস করোনারি ইন্টারভেনশনের (পিসিআর) প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তার বন্ধু/ফার্ষ্ট অফিসার খলিলকে অবহিত করা হয়।

এখানে নিয়মানুযায়ী গালফ এয়ার থেকে অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল যা নেওয়া হয়নি এবং গালফ এয়ার ও তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মতি নিতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে ভাবী ও আমার অন্য ভাইদের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

এ সময় তার হার্টে ব্লক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করতে পিসিআর অস্ত্রোপচারের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। তারা বলছে এটা স্বাভাবিক ও মানসম্পন্ন প্রক্রিয়া। কিন্তু আমার ভাইকে যে ভেন্টিলেটর দিয়ে রাখা হয়েছে ও এরমধ্যে তিনি তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট করেছেন, সেই ঝুঁকিকে আগ্রাহ্য করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই প্রক্রিয়া অনেক ঝুকিপূর্ণ, তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে গালফ এয়ারের মতামত নেওয়ার দরকার ছিল, যা নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। সকল সাড়ে ১০ টায়, পিসিআই ইন্টারভেশনের জন্য আমার ভাইকে ক্যাথেটারিজেইশন ল্যাবরেটরিতে (ক্যাথ ল্যাব) স্থানান্তর করা হয়। করোনারি এনজিওগ্রাফি (সিএজি) শেষে তারা দেখতে পান, আমার ভাইয়ের বাঁ পাশের একটি ধমনী ৯৯ শতাংশ ব্লকড হয়ে গেছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেলা সোয়া ১১টায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমের মধ্যেই আমার ভাইয়ের চতুর্থ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তাকে ৪৫ মিনিট সিপিআর দেওয়া হয় এবং টেম্পোরারি পেসমেকার (টিপিএম) বসানো হয়। দুপুর ১২ টা ৮ মিনিটে আমার ভাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের চিকিৎসা করেছেন ডা. কায়সার নাসির। কিন্তু পরিবারের কাছে চিকিৎসার যে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে তার নাম পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমার ভাইয়ের অ্যাজমা ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা বলেছে; ভুল করে এটা বাদ পড়ে গেছে। ফোনে কার্ডিওলজিষ্টের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। তিনি সশরীরে রোগীর কাছে উপস্থিত ছিলেন না।

মারা যাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমার ভাইকে সমাহিত করা হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, ভোর ৪টা ৮ মিনিট পর্যন্ত আট ঘন্টা সময় পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময়ে তারা আমার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/পিআর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :