টিউলিপে রাঙিয়ে দিলেন শ্রীপুরের মাটি

মহিউদ্দিন আহমেদ, শ্রীপুর (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৩৩

গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ারের মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স প্রোডাক্টসের এ বছর ফুটেছে ১০ রঙের টিউলিপ। বাগানজুড়ে ফুটেছে সারি সারি নেদারল্যান্ডসের টিউলিপ ফুল। বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হচ্ছে টিউলি ফুলের চারা । টপে রাখা চারটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা টিউলিপ ফুলের চারা কিনতে আসছেন এ বাগানে। টিউলিপ শীতপ্রধান দেশের ফুল।

এর উৎপত্তির আদিস্থান নেদারল্যান্ডস। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই ফুলের পরিচিতি রয়েছে। অনেকের মতে, এটি পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভূত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে এর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন।

তার বাগানজুড়ে ফুটেছে নানান রঙের রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’ প্রোডাক্টস নামে এ বাগানে সারি সারি শত শত টিউলিপ ফুল ফুটে রয়েছে। শীত এলেই একের পর এক ফুটতে শুরু করে। বেগুনি, হলুদ, লাল ও সাদাসহ মোট ১০ রঙের ফুল রয়েছে এই বাগানে। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে প্লান্টিং শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাগানে শত শত টিউলিপ ফুলে দৃষ্টি কাড়ে হাজারো দর্শনার্থীদের। শীত এলেই দর্শনার্থীরা ভিড় জমায় বিদেশি এ ফুল দেখতে।

ঢাকার ধানমন্ডি থেকে আসা বিজিএমএ কলেজছাত্রী ফাতেমা আক্তার জানান, আজকে ছুটির দিন দেলোয়ারের মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স প্রোডাক্টসের বাগানে বিভিন্ন বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি টিউলিপ ফুল চাষি সফল উদ্যোক্তা দেলোয়ার ভাইকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি বাগান করায়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক, সাধারণ দর্শনার্থী থেকে শুরু করে কৃষক ও কৃষি শিল্পোদ্যক্তরাও আসেন এ বাগানে।

কথা হয় বাগান মালিক কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ারের সাথে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফুলের বাগানসহ নার্সারি কাজে সম্পৃক্ত তিনি। ২০১৮ সালে রিচ ওয়ান নামে একটি সিড কোম্পানি টিউলিপ ফুলের এক হাজার বাল্ব (কন্দ) তাকে উপহার দিতে চান। কিন্তু প্রস্তুতি না থাকায় আনেননি। পরের বছর এনেছেন। রোপনের ২৫ দিন পর প্রথম একটি টকটকে লাল রঙের ফুল ফুটে। তার আনন্দ দেখে কে! এরপর থেকেই বড় করে শুরু হয় এ ফুলের চাষ। বিশেষ করে গেল বছরই বড় পরিসরে চাষ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

টিউলিপের চাষ নিয়ে দেলোয়ার শোনান তার স্বপ্নের কথা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোথাও টিউলিপের চাষ হচ্ছে না। তাই এই ফুলকে তিনি দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কাজ শুরু করেছেন। এ বছর নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ, লাল, পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেলসহ ৮/১০ প্রজাতির ৭০ হাজার টিউলিপের বীজ আমদানি করেছেন। আমদানিকৃত বিজের ৪০ হাজার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১ হাজার রাজশাহীতে এবং ৫ হাজার যশোরের গদখালীতে রোপণ করেছেন।

তিনি বলেন, এ দেশে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ফুল ব্যাপকভাবে চাষ হয়। তবে ভিন্ন সৌন্দর্যের টিউলিপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের ফুলের বাজারে গোলাপসহ অন্য ফুলের ভিড়ে ব্যাপকভাবে টিউলিপ ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। তার বিশ্বাস, এ দেশে টিউলিপের বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। বড় পরিসরে উৎপাদনে যাওয়াও সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, এখনো বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল বিক্রি করে লাভবান হতে পারেননি। তবে স্বপ্ন দেখেন, একদিন নিজের আর্থিক চাহিদা পূরণ করেও দেশের জিডিপি বাস্তবায়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পেয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :