শরীরের যেসব উপসর্গে বুঝবেন কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩২ | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৯

মানুষের দেহে কোলেস্টেরল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় । আর এমন জীবনযাপন যদি করেন যেমন বেশি শুয়ে বসে থাকা। অত্যধিক পরিমাণে ধূমপান, অ্যালকোহল পান, জর্দা সেবন, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুড, মাখন, মেয়োনিজ ইত্যাদি খেলে যেকোনো সময় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর কিছু রোগ রয়েছে কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। আর কিছু ওষুধ আছে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

কোলেস্টেরল রক্তে থাকা মোমের মতো দেখতে এক প্রকার চর্বিজাতীয় তৈলাক্ত পদার্থ। মানবদেহের প্রায় প্রত্যেক কোষ ও টিস্যুতে কোলেস্টেরল থাকে। যকৃৎ ও মগজে এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কোলেস্টেরল লিপোপ্রোটিন নামক যৌগ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়। কোলেস্টেরল রক্তে বাড়লে তা জমা হয় রক্তনালির ভিতর। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক হয়ে যাওয়া হলো খুবই জরুরি। কারণ কোলেস্টেরল শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমতে পারে। এমনকি পায়েও জমতে পারে কোলেস্টেরল। তাই কোলেস্টেরল বাড়ার লক্ষণ পায়েও দেখা যায়।

রক্তে তিন ধরনের লিপোপ্রোটিন দেখা যায়, যেমন—নিম্ন ঘনত্ববিশিষ্ট লিপোপ্রোটিন (এলডিএল), উচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) ও ট্রাই-গ্লিসারাইড। এলডিএল-কে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়, খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলেই দেখা দিতে পারে সংবহনতন্ত্রের সমস্যা, বেড়ে যায় স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি। সাধারণত মানুষের রক্তে শতকরা ৭০ ভাগ এলডিএল থাকে। এইচডিএল-কে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আর ট্রাই-গ্লিসারাইড চর্বি হিসেবে রক্তের প্লাজমায় অবস্থান করে। ট্রাই-গ্লিসারাইড মানুষের খাদ্যের প্রাণিজ চর্বি অথবা কার্বোহাইড্রেট থেকে তৈরি হয়ে থাকে।

আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করার যন্ত্র হিসেবে কাজ করে হৃৎপিণ্ড। আর সারা দেহে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে অনেক সময় কোলেস্টেরল জমে। মূলত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণেই এমনটা হয়। যার ফলে ধমনীর দেওয়াল পাতলা হতে শুরু করে। এমতাবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত পৌঁছতে পারে না। কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ফলে হার্ট অ্যাটাকসহ অনেক রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

উপকারী কোলেস্টেরল শরীরে টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন হরমোনসহ অনেক হরমোন তৈরি করে। এছাড়া মেটাবলিজম বৃদ্ধির জন্য কোলেস্টেরলের প্রয়োজন হয়। অথচ এত উপকারী হওয়া সত্ত্বেও খারাপ কোলেস্টেরল কিন্তু আমাদের জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। কারণ খারাপ কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। আর সব থেকে বড় কথা হল, খারাপ কোলেস্টেরল কিন্তু নীরবেই আঘাত হানে আমাদের শরীরের উপর। আর এর তেমন কোনো লক্ষণও প্রকাশ পায় না। তাই তো একে নীরব ঘাতক নামেই ডাকা হয়ে থাকে। যদিও শরীরে এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখলে বোঝা যাবে যে, শরীরে বাসা বেঁধেছে কোলেস্টেরল। এর জন্য এই লক্ষণগুলোর বিষয়ে জানা অত্যন্ত জরুরি।

হাত ও পায়ে অসাড় ভাব এবং ফোলা ভাব

শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়লে তার প্রভাব প্রথমে হাত এবং পায়ে দেখা দিতে শুরু করে। খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হাতে-পায়ে রক্ত সরবরাহ কমতে থাকে। এই কারণে শিরার রঙও পরিবর্তন হতে শুরু করে। ফলে হাত-পা ফুলে ওঠে এবং অসাড় হয়ে আসতে থাকে। সেই সঙ্গে থাকে তীব্র ব্যথাও। আর হাত-পাও দুর্বল হয়ে আসতে থাকে।

ত্বকে র‍্যাশ বেরোতে শুরু করে

খারাপ কোলেস্টেরল বাড়তে থাকায় রক্তনালীতে প্লাক জমা হতে শুরু করে। এর ফলে ত্বকে দাগ-র‍্যাশ বেরোতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন জায়গাতেই এমন র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। যেমন - চোখের নীচে, পিঠে, পায়ে এবং হাতের তালুতে কোলেস্টেরলের জন্য র‍্যাশ বেরোয়।

নখ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়

রক্তে বেশি কোলেস্টেরল জমতে শুরু করলে তা ধমনীর প্রাচীরকে পাতলা করে দেয়। এই কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সঠিক ভাবে পৌঁছতে পারে না। আর নখেও এর প্রভাব দেখা দেয়। কোলেস্টেরলের প্রভাবে নখে সাধারণত কালো দাগ দেখা দেয়। এমনকী নখ ভঙ্গুরও হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, নখ পাতলা এবং বাদামি হতে দেখলেও বুঝতে হবে যে, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে।

চোখের চারপাশে হলদেটে দাগ

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে চোখের চার পাশে হলদেটে দাগ সৃষ্টি হয়। আবার খারাপ কোলেস্টেরল খুব বেশি পরিমাণে বেড়ে গেলে এই দাগ নাকেও দেখা যায়। একে জ্যান্থেপ্লাজমা প্যালপেব্রাম (এক্সপি) বলা হয়।

দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা যাতে বেড়ে না-যায়, তার জন্য কী কী করণীয়

কোলেস্টেরল যাতে বাড়তে না পারে, তার জন্য সব সময় সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই সময় থাকতেই খাবার এবং পানীয়ের ক্ষেত্রে রাশ টানতে হবে। আর ত্যাগ করতে হবে খারাপ অভ্যেসগুলোকেও। ডায়েট থেকে বাদ দিতে হবে প্রক্রিয়াজাত খাবার, পিৎজা বার্গার, প্যাকেটজাত জিনিস ইত্যাদি। তার পরিবর্তে বরং স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন - ডায়েটে রাখা উচিত মরশুমি সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্য বা হোল গ্রেনস, ফল ইত্যাদি। সেই সঙ্গে ত্যাগ করতে হবে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবনের মতো বদভ্যাসও। স্বাস্থ্যকর খানাপিনার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মতো এক্সারসাইজ করা উচিত। সেই সময় না পেলে ঘড়ি দেখে হাঁটাহাঁটি করলেও হবে।

ঢাকাটাইমস/১১ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :