হৃদরোগের ঝুঁকি কমে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৫

বাঙালি রান্নার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান কাঁচা মরিচ। খাবারে স্বাদ বাড়ানো ও সুগন্ধের জন্য কাঁচা মরিচের জুড়ি নেই। বাঙালির পাতে ভাতের সঙ্গে মরিচ থাকবেই। বিশেষ করে কাঁচা মরিচ। অন্যদিকে শুকনো মরিচের ঝাঁজ বাড়ায় তরকারির স্বাদ। শুধুই স্বাদ নয়, মরিচের আরও একটি গুণের খবর জেনে নিন। মরিচ খেলে আয়ু বাড়ে। তবে মরিচের ঝাল নাকি তারুণ্য ধরে রাখে, ক্যানসার দমন করতে সহায়তা করে এবং হৃদপিণ্ডকেও ভালো রাখে৷ এমনটাই বলছেন এখন বিশেষজ্ঞরা৷

কাঁচা মরিচ বর্তমানে পৃথিবীর সর্বত্র রান্না ও ঔষধি হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মরিচকে অর্থকরী ফসল বলা হয়। কাঁচা মরিচের ইংরেজি নাম চিলি ও বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাপসিকাম অ্যানোয়াম। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে মরিচের চাষ করা হয়। তবে চরাঞ্চালে মরিচের উৎপাদন বেশি হয়। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মরিচ চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে মরিচ সাধারণত বিভিন্ন জাতের উপজাতের মরিচ আছে । এরমধ্যে বিশেষ ঐতিহ্যবাহী মরিচ রয়েছে। কামরাঙা মরিচ, ভুত মরিচ, রাজা মরিচ, নাগাহরি, সাপের বিষ মরিচ, নাগা মরিচ, বোম্বাই মরিচসহ আরো কত নাম। তবে নাগা মরিচটি করেছে বিশ্ব মাতোয়ারা। বাংলাদেশের নাগা মরিচ লন্ডন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে এখন সারা বিশ্বের সম্পদ হয়ে গেছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সায়েন্টিফিক সেশনের প্রাথমিক গবেষণা বলছে প্রতিদিন কাঁচা মরিচ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ভালো। ক্যানসার বা কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েক ধাপ কমে যাবে। মরিচের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ক্যানসার প্রতিরোধক গুণাগুণ। মরিচের ঝাল গুণাগুনের জন্য দায়ী ক্যাপসাইসিন।

গবেষণা চালানো হয়েছে আমেরিকা, চীন, ইতালি, ইরানের প্রায় ৫ লাখ ৭০ জনের উপর। তাদের স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভাস সংক্রান্ত রেকর্ড বা যা ডায়েট বলে পরিচিত তা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। যাদের নিয়মিত মরিচ খাওয়ার অভ্যাস আছে এবং যাদের নেই, তাদের মধ্যে ফারাক খতিয়ে দেখা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যারা রোজ কাঁচা মরিচ খান তাদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ২৬ শতাংশ কমেছে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে ২৩ শতাংশ। এবং অন্যান্য যেসব রোগে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, সে ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে ২৫ শতাংশ।

আমেরিকার ওহায়োর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক হার্টের কার্ডিওলজিস্ট বো জু বলেছেন, ‘এটা দেখে আমরা নিজেরাই খুব অবাক হয়েছিলাম যে কাঁচা মরিচ সব ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। আসলে মানুষের খাদ্যাভাস সার্বিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।’

কাঁচা মরিচে থাকা একাধিক উপাকারি উপাদান রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে ফাইব্রিনোলেটিক অ্যাকটিভিটিকে বাড়িয়ে দিয়ে মস্তিষ্কে যাতে ব্লাড ক্লট না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে মরিচ। ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

কাঁচা মরিচে প্রচুর ডায়াটারি ফাইবার, নিয়াসিন, থিয়ামিন, রাইবোফ্লবিন, আয়রন, ফলেট, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি-৬, সি, কে, পটাশিয়াম, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। চলুন কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।

সুগার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রয়েছে কাঁচা মরিচের। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। মরিচে থাকা একটি উপাদান রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কাঁচা মরিচ ছেলেদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা কমে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঁচা মরিচ। এর মধ্যে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও জিরো ক্যালোরি। মরিচ খেলে কারও পরিপাক প্রক্রিয়া অন্তত তিন ঘণ্টা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেডে় যায়। এতে দ্রুত ওজন কমতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও কাঁচা মরিচ দ্রুত খাবার হজম করতে সাহায্য করে।

কোনো দুর্ঘটনায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে মসলাদার কিছু খেলে ভালো কাজ দেয়। এর মধ্যে যদি মরিচ থাকে তাহলে আরও ভাল। কাঁচা মরিচের মধ্যে থাকে ভিটামিন কে। এটি রক্তক্ষরণ বন্ধে সাহায্য করে।

ঠাণ্ডার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে কাঁচা মরিচ। হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগার ধাত ও সাইনাসের সমস্যা থেকে বাঁচায় কাঁচা মরিচের থাকা ক্যারাসাসিন। কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীরকে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।

হাড় শক্ত করতে মরিচের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মরিচে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। ফলে এটি শুধুমাত্র হাড় শক্তই করে না বরং দাঁতকেও মজবুত করে।

মরিচের ঝাল ১০ বছর পর্যন্ত নাকি মানুষের আয়ুও বাড়িয়ে দিতে পারে৷ একটি গবেষণা থেকে এমনটিই জানতে পেরেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়৷

পরিপাকতন্ত্রের সুরক্ষায় কাঁচা মরিচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে অন্যান্য রোগব্যাধি হওয়া থেকে দূরে রাখতে পারে৷ তাছাড়া কাঁচা মরিচের আঁশ পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে

খুব বেশি নয় মরিচে থাকা বিটা ক্যারোটিন এবং ক্যাপসিকিন হৃদরোগ, ডায়েবেটিস এবং পেটের নানা সমস্যার ঝুঁকি কমায়৷ আর সে কারণেই ডা.ভল্ফগাং ফাইল-এর মতে একজন মানুষের সপ্তাহে তিনদিন দু’টো করে ছোট কাঁচা মরিচ খাওয়াই যথেষ্ট৷

গ্রীষ্ম কালে মসলা জাতীয় খাবারের সাথে কাঁচা মরিচ খেলে তা ঘামের সাথে বেড়িয়ে যায় ফলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে।

চর্বি জাতীয় খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ খেলে মোটা হওয়ার কোনা ভয় থাকে না। কারণ কাঁচা মরিচ খাদ্যের সঙ্গে থাকা চর্বিকে ধ্বংস করে । ফলে স্লিম থাকা যায়।

কাঁচা মরিচে অবস্থিত ক্যাপসাইসিন খাদ্যে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি শুষে নিয়ে শরীরে মেদ রোধ করতে সাহায্য করে।

কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে।

ত্বক ও চুল ভালো রাখতে কাঁচা মরিচে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দারুণ উপকারি। তাছাড়াও রক্তনালী আর তরুণাস্থি গঠনে সাহায্য করে।

প্রতিদিন একটি করে কাঁচা মরিচ খেলে রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি কমে যায়। ও হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন সমস্যা কমে যায়।

কাঁচা মরিচ মেটাবলিসম বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। ফলে নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন এ যা হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা মাড়ি ও চুলের সুরক্ষা করে।

নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে নার্ভের বিভিন্ন সমস্যাও কমে যায়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় অন্তত একটি করে কাঁচা মরিচ রাখলে ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়ে না।

(ঢাকাটাইমস/২৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :