চট্টগ্রামের উন্নয়নে আবদুচ ছালামকে প্রয়োজন

মোরশেদ আলম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৭:৪১ | প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৭:৩৮

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছিল বাঙালি। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন, নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সে দায়িত্ব এসে পড়েছে তারই কন্যা শেখ হাসিনার ওপর। এ দায়িত্ব বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তিনি। গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে আমূল বদলে দিয়েছেন। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। গ্রাম থেকে উপজেলা, জেলা সবখানেই উন্নয়নের ছোঁয়া।

বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতি গঠনে পেয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যার আখ্যা। সবকিছু ছাপিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি এখন প্রেরণাদায়ী নেত্রী।

বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার গড়ার যে প্রচেষ্টা শেখ হাসিনা চালাচ্ছেন সেখানে প্রয়োজন অনেক দক্ষ হাতিয়ার, যারা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আলো ছড়াবেন। এমনই একজন আলোকিত মানুষ চট্টগ্রামের আবদুচ ছালাম। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রামবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজ হাতে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার যে দায়িত্ব, তা বাস্তবায়নে আমলা নির্ভর না হয়ে শেখ হাসিনা জনবান্ধব এবং সততা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে আপোষহীন আবদুচ ছালামের হাতেই তুলে দিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারক ও কঠোর কর্মী আবদুচ ছালাম হয়ে উঠলেন চট্টগ্রামের আলোর দিশারী।

শেখ হাসিনার সপে দেওয়া দায়িত্বকে ‘ইবাদত’ হিসেবে গ্রহণ করে আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম শহরকে রাঙিয়ে দিতে মাঠে নেমে পড়লেন। সোনার বাংলা গড়ার সেই কঠিন কাজ সুনিপুণ হাতে সম্পাদন করেছেন আবদুচ ছালাম।

‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’ নামক সীমিত পরিধির একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এর দায়িত্বে নিয়োজিত হয়ে আবদুচ ছালাম ৪০ বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পিছিয়ে পড়া চট্টগ্রামকে ঢেলে সাজাবার কঠিন সংগ্রাম শুরু করেন।

নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতেন আবদুচ ছালাম। আর তাই অসাধারণ দলনেতা হিসেবে দলের সবাইকে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর করেছেন তিনি।

যে সময়টাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় ইউরোপ আধুনিক ইউরোপে রূপান্তরিত হয়েছিল, সে সময়কে বলা হয় ‘রেনেসাঁস' (Renaissance)।

আবদুচ ছালাম সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে থাকার ১০ বছর আক্ষরিক অর্থেই চট্টগ্রামের ‘উন্নয়ন রেনেসাঁস’। রেনেসাঁস এর সময় ইউরোপ বাকি বিশ্ব থেকে ১০০ বছর এগিয়ে যায়।

আবদুচ ছালামের ১০ বছরে চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়, স্বাধীনতার পর হতে ১৯৭১-২০০৮ পর্যন্ত সময়ে তার সিকিভাগও হয়নি। গত ১০ বছর ছুটে বেড়িয়েছেন চট্টগ্রাম শহরের পথে প্রান্তরে। আলোকিত করেছেন চট্টগ্রামকে। তার হাতেই ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্ম সম্পাদন হয়েছে, যা একটা জেলা শহরের জন্য অভাবনীয়।

আবদুচ ছালাম দায়িত্ব নিয়ে নজর দেন যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। তিনি বিশ্বাস করতেন, নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্হা একটা শহরের আধুনিকায়নের পূর্বশর্ত।

কিন্তু শত বছর ধরে গড়ে উঠা স্থাপনা সরিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করা সহজ কাজ নয়। আর তাই তিনি পাঁচশত এর বেশি উঠান বৈঠক করেছেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও বাস্তুহারা মানুষের কান্নার রোল পড়েনি।

তিনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন শহরটা শহরবাসীর। অনেক বসতবাড়ি, মসজিদ, সামাজিক স্থাপনা, দোকানপাট, মাদ্রাসা, মন্দির, প্যাগোডা, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করতে হয়েছে। যেখানেই তিনি রাস্তা সম্প্রসারণ করেছেন, পাশাপাশি নালা নির্মাণ করেছেন। তিনি অর্ধেক কাজ করা অপছন্দ করতেন।

এক সাক্ষাৎকারে আবদুচ ছালাম বলেছিলেন, “আমার প্রধান ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ‘সানজি টেক্সটাইল মিলস্ এর বিল্ডিংটা হলো পার্ট পার্ট। আমাকে একটু একটু করে কারখানাটি বড় করতে হয়েছে। সামর্থ্যের অভাবে একসাথে করতে পারি নাই। কিন্তু আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী কর্তৃক অর্পিত চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি সুচারুরূপে করতে চাই”।

যেখানে যেখানে লেগেছে আবদুচ ছালামের ছোঁয়া

কাপাসগোলা হতে চকবাজার রোড সম্প্রসারণ, চকবাজার হতে আন্দরকিল্লা রোড সম্প্রসারণ, কালুরঘাট হতে বহদ্দারহাট রোড সম্প্রসারণ, আন্দরকিল্লা হতে লালদীঘি রোড সম্প্রসারণ, কোতোয়ালী মোড় হতে ফিরিঙ্গী বাজার রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মান, সদরঘাট রোড সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণ, ডিসি রোড ও পাঠানটুলী রোড সম্প্রসারণ, কর্ণফুলী মার্কেট হতে এক্সেস রোড সম্প্রসারণ ও দুইপাশে ড্রেন নির্মান, কমার্স কলেজ রোড সম্প্রসারণ, অক্সিজেন হতে প্রবর্তক মোড় রোড, ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড, সাগরিকা রোড, অক্সিজেন হতে মুরাদপুর হয়ে অলি খাঁ মসজিদ রোড, অক্সিজেন হতে কুয়াইশ রোড সম্প্রসারণ (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ), কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকা ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা রোড সম্প্রসারণ, মোহরা এনেক্স শিল্প এলাকা রোড সম্প্রসারণ, ও মোহরা এলাকার ২০ কিলোমিটারের অধিক রাস্তার কাজ তিনি সম্পাদন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সর্বাত্মক সহযোগিতায় চট্টগ্রাম শহরকে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপমুক্ত করতে আবদুচ ছালাম বেশকিছু যুগান্তকারী প্রকল্প হাতে নেন।

এর মধ্যে রয়েছে—বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, মুরাদপুর হতে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভারপাস নির্মাণ। ফলে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসে আধুনিকতার ছোঁয়া।

তার চেষ্টায় সাগরপাড়ের সিটি আউটার রিং রোড, ফৌজদার হাট হতে বায়েজিদ বাইপাস রোড, চন্দনপুরা হতে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক (বাকলিয়া এক্সেস রোড) বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম শহরকে যানবাহনের বাড়তি চাপ থেকে অনেকটা মুক্ত রেখেই উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে রাজধানী ঢাকা তথা সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।

বাস্তবায়নাধীন যেসব প্রকল্প

লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন আবদুচ ছালাম। কিন্তু সে প্রকল্প এখনো শেষ না হওয়াতে চট্টগ্রামবাসী তার সুফল পেতে শুরু করেনি।

কর্ণফুলীর তীরে চাক্তাই খালের মুখ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ৮-৫০ কি.মি. দীর্ঘ রিং রোড কাম শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এখনো বাস্তবায়নাধীন। এসব মেগাপ্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আসবে।

চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবদুচ ছালাম আরও একটি মেগাপ্রকল্প প্রণয়ন করেন। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে এখনো বাস্তবায়নাধীন।

শুধু তাই নয়, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা এই তিন খাতেই আবদুচ ছালাম মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন, নারী শ্রমিকদের জন্য সিমেন্ট ক্রসিংয়ে গড়ে তুলেছেন ডরমেটরি, সিডিএ স্কয়ার ফ্ল্যাট, দেওয়ানহাট ফ্ল্যাট, কাজীর দেউড়ী ফ্ল্যাট তারই চেষ্টার ফসল।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন আবদুচ ছালাম। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ম্যুরাল ও কোর্ট হিলে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন। তারই পরিকল্পনায় অনন্যা আবাসিকে প্রতিষ্ঠা হয় ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল’।

তিনি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের আধুনিকায়নে কাজ করেন। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের শরীরচর্চার কথা বিবেচনা করে অবহেলিত প্যারেড মাঠে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজ করেন, জরাজীর্ণ জিমনেসিয়ামটিকে সংস্কার করেন। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ ও সিডিএ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ।

চট্টগ্রামের অভুতপূর্ব উন্নয়ন চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নিগুঢ় ভালোবাসা ও আবদুচ ছালামের প্রতি অগাধ আস্থার ফসল।

একটা সময় চট্টগ্রামের মানুষ উন্নয়ন ও সিডিএ এ দুটোকে সমার্থক মনে করতো। কিন্তু সেই মোহভঙ্গ হয়েছে। আবদুচ ছালামবিহীন সিডিএ এর কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে সিডিএ নয়, উন্নয়ন ও আবদুচ ছালামই সমার্থক। তিনি নিজের মেধা, শ্রম, অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা, সততা, নিজের জীবনে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনিই তার যোগ্য ফেরিওয়ালা।

সিডিএ চেয়ারম্যানের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আবদুচ ছালাম চট্টগ্রামবাসীকে তাদের স্বপ্নের কাছাকাছিই শুধু নিয়ে যাননি, তাদের স্বপ্নের পরিধিও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন, একসময়ের সূদুর কল্পনাকে সম্ভাব্য চাওয়াতে রূপান্তরিত করেছেন।

কিন্তু চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অবর্তমানে চট্টগ্রামের রাজনীতি যেমন অবিভাবকহীন, কর্মবীর আবদুচ ছালামের অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রামের উন্নয়নের গাড়িও তেমনি চালকবিহীন। চট্টগ্রামের উন্নয়ন রেনেসাঁস মুখ থুবড়ে পড়লো কেন? একটাই উত্তর, ‘আবদুচ ছালাম নেই বলে’।

চট্টগ্রামের উন্নয়নের মানসপুত্র ছিলেন আবদুচ ছালাম। প্রিয় নেত্রীর হাতের আলোকবর্তিকাটি আরেকবার আবদুচ ছালামের হাতে তুলে দেয়া হোক। চট্টগ্রামের আকাশে উন্নয়ন সূর্যের বিচ্ছুরিত রশ্মি ছড়িয়ে পড়ুক। জনগণের বিপুল চাহিদা পূরণে প্রিয় নেত্রী একজন আবদুচ ছালামকে আরও বড় পরিসরে, ভিন্ন আঙ্গিকে উপহার দেবেন এটাই চট্টগ্রামবাসীর কামনা।

লেখক: মানবাধিকার কর্মী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :