৯ বছরে সুনাম সাফল্যের মুকুট, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক প্রতিষ্ঠিত অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৩, ১৪:২২ | প্রকাশিত : ১৩ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৮

প্রতিষ্ঠার মাত্র ৯ বছর। এরইমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কুড়িয়েছে সুনাম। ঝুলিতে আসছে একের পর এক সাফল্য। আলোচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নাম মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শরীয়তপুরের নড়িয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গড়ে তুলেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। পরবর্তীতে এখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

সাবেক এই আইজিপি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার চিন্তা ভাবনা আছে। যদি আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে, সেক্ষেত্রে আগাবো। আর্থিক স্বচ্ছলতা ছাড়া তো আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’

এদিকে করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করার পাশাপাশি অনলাইনে বিতর্কসহ বিভিন্ন প্রতিযাগিতা আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ছন্দপতন ঘটতে দেয়নি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই শরীয়তপুর জেলায় সেরা হওয়ার গৌরব অর্জনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরবও অর্জন করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শরীয়তপুর জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ নির্বাচিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষার্থী ঢাকা বোর্ডে প্রথম হওয়ায় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গোল্ড মেডেল।

এসব সফলতার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগের সব জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা বোর্ড আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি অবশ্যই সফলতা। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়স ৯ বছর। ৯ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান শতবছরের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চ্যালেঞ্জে টিকে তাদের টপকে সেরা হওয়ার সাফল্য অর্জন করার পেছনে আমাদের একাডেমিক রেজাল্টসহ সার্বিক প্রচেষ্টা কাজ করছে।

তিনি বলেন, একাডেমিক কারিকুলাম, অ্যক্টিভিটিজ, ডিবেট ক্লাবসহ আমাদের ১২টি ক্লাব, আমাদের ব্যতিক্রমধর্মী পাঠদানসহ সার্বিক বিষয়গুলো কাজ করেছে এ সফলতার পেছনে। এইচএসসিতে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী। গ্রামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসিতে এত শিক্ষার্থীর জিপিএ-ফাইভ পাওয়া অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের সফলতা। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায়ই তা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-ফাইভ পেয়েছে এদের মধ্যে ৭২ জন এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল। তাহলে আমাদের দক্ষ নার্সিংয়ের কারণে সম্ভব হয়েছে এতো শিক্ষার্থীর পক্ষে জিপিএ-ফাইভ অর্জন করা। এছাড়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আমাদের সন্দর একটি সমন্বয় রয়েছে। অভিভাবকরা মিটিংয়ে আসেন, ডাকলেই সাড়া দেন। দে আর ভেরি মাস কেয়ারিং।’

অন্যদিকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন, সাফল্য আর অর্জনের এই ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকলে মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ খুব শিগগিরই দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

শহীদুল হক তাঁর পিতা ও মাতার নামে মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করেন। বর্তমানে তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

শরীয়তপুরের নড়িয়ায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সাবেক আইজিপি শহীদুক হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার এসএসসি গ্রামে। আমাদের জেলা শহরের স্কুলে। যা আমাদের বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূর। প্রতিদিন ৭ কিলোমিটার হেঁটে যেতাম, হেঁটে আসতাম। বর্ষাকালে হাফপ্যান্ট পড়ে ছাতা মাথায় দিয়ে কর্দমাক্ত-পানিতে ভরা সড়ক দিয়ে যেতে হতো, আবার গ্রীষ্মকালে রোদে পুড়ে যেতাম-আসতাম। ভীষণ কষ্ট হতো। আমাদের গ্রামে যদি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতো তাহলে আমাদের তো ৭ কিলোমিটার দূরে এত কষ্ট করে যেতে হতো না। এই কষ্ট থেকেই, এই ভাবনা গ্রামে স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, আধুনিক সব সুবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের উন্নত লেখাপড়া, ডিসিপ্লিন চর্চা, সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যাবস্থাপনায় জেলার সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়েছে।

বিশেষ করে যুগপোযোগী পাঠ পরিকল্পনা, গতিশীল ক্লাব কার্যক্রম, সময়োপযোগী পরীক্ষা পদ্ধতি, নিবিড় মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আধুনিক ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে তৈরি করছে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সুবিশাল ক্যাম্পাস ও মনোরম পরিবেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় এবং বিষয়ভিত্তিক চৌকস ও মেধাবী শিক্ষকমণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বপ্ন পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটি কী লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন তাও জানালেন শহীদুল হক। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি- এই দুটি রেজাল্ট ভালো হলে শিক্ষার্থীর ফাউন্ডেশনটা শক্ত হয়। এই দুটিতে ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে সে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না। আমার লক্ষ্য হলো ওদের ফাউন্ডেশনটা শক্ত করে গড়ে দেওয়া। এসএসসি এবং এইচএসসিতে রেজাল্ট ভালো করার জন্য উপযুক্ত নার্সিং করা, কেয়ার নেয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা আগাচ্ছি। এটিই আমাদের মেইন (প্রধান) লক্ষ্য।’

শিক্ষার্থীদের প্রতি বার্তা দিতে গিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘বার্তা একটাই, মানুষের জন্য মানুষ হওয়া।’ তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মানুষ হও মানুষের জন্য।’

সাবেক এই আইজিপি বলেন, রেজাল্ট ভালো, কিন্তু মানুষ হলো না। তাহলে কোনো লাভই হলো না। এ কারণে আমাদের মূল ভিত্তিই হচ্ছে- শিক্ষা, নৈতিকতা, মানবতা ও দেশপ্রেম। আমাদের একটি থিম সং রয়েছে। যার মধ্যে একটি কবিতা আছে। তা হচ্ছে- ‘সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হব, মানুষ হব মানুষের জন্য।’

শহীদুল হক বলেন, ‘আমি চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভালো মানুষ হোক।’

এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং ৭৫ জন শিক্ষক আছেন। প্রতিষ্ঠানটি জিপিএ-ফাইভ পাওয়া শিক্ষার্থী এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো মাসিক বেতন নেয় না। ৪০০ শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে পড়াশোনা করছে বলে জানা গেছে।

এ কে এম শহীদুল হক ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি মেয়াদ শেষে আইজিপির পদ থেকে অবসর নেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

আইজিপি হওয়ার আগে তিনি অ্যাডিশনাল আইজি (প্রশাসন) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারসহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দাযিত্ব পালন করেছেন।

বত্রিশ বছরের কর্মজীবনে শহীদুল হক নানান পর্যায়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে দাগি অপরাধীদেরকে কাছ থেকে দেখেছেন, সাক্ষী হয়েছেন ঐতিহাসিক সব ঘটনার। বিশেষ করে জঙ্গিদের ভয়ংকর রূপে আত্মপ্রকাশ ও তাদের দমনের পর্বটিতে পুলিশের প্রধান হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করে জঙ্গিদমনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিংসহ বহুবিধ সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণের কৃতিত্বের দাবিদার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ তারই উদ্যোগে চালু হয়।

১৯৫৯ সালে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের ফরিদপুর জেলার শরীয়তপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) নড়িয়া থানার নর কলিকাতা গ্রামে শহীদুল হকের জন্ম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশুনা শেষে ১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি পুলিশ বিভাগে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। নির্বাচিত, সামরিক, তত্ত্বাবধায়ক, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইত্যাদি মিলিয়ে শহীদুল হক ১২টি সরকারের অধীনে কাজ করেছেন।

বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমেরিকার নিউজার্সি থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভ করা শহীদুল হক বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তি মিশন কম্বোডিয়া, অ্যাংগোলা ও সুদানে দায়িত্ব পালন করে জাতিসংঘ শান্তি পদকে ভূষিত হয়েছেন।

ব্যক্তিজীবনে তিন সন্তানের জনক শহীদুল হক লেখালেখি এবং তার প্রতিষ্ঠা করা মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকসহ সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে অবসর জীবন পার করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :