দেশে বিদেশে বৈচিত্র্যময় ইফতার ও সেহরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৬

বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। কারণ এ সময় আল্লাহতাআলা তাঁর রোজাদার বান্দাদের দোয়া কবুল করেন এবং ইফতারের মাধ্যমেই একজন রোজাদার তাঁর রোজা সম্পন্নের পর মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেন।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় হলো রমজান মাসের রোজা। রমজানের তিন দশককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথম দশক রহমত। দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত। আর তৃতীয় দশক নাজাত। রোজা হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ ও যৌনসঙ্গম থেকে বিরত থাকা। রমজান মাসে ইবাদত করলে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

প্রিয় নবী (সা.) খেজুর ও কয়েক ঢোঁক পানি দিয়েই ইফতার শুরু করতেন। সময়ের পরিবর্তনে তাতে যোগ হয়েছে হরেক রকম খাবার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইফতার ও সেহরির ধরন বিভিন্ন রকম। আবার অঞ্চলভেদে একই দেশে বিভিন্ন রকম ইফতার হয়ে থাকে। সাধারণভাবে সব দেশের ইফতারে ফল, জুস, খেজুর, পানি, দুধ বেশ প্রচলিত। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় কোনো কোনো আইটেম। সেহরিতে রাতের হালকা খাবারই বেশি পরিবেশন করা হয়। আসুন আমরা জেনে নিই পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা কীভাবে রমজান পালন করে।

বাংলাদেশ

বিভিন্ন সময়ে এই উপমহাদেশে আসা এবং শাসন করা নানা জাতি গোষ্ঠীর নানা ধরনের সংস্কৃতির মতো খাবারও এখন এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্য তালিকায় মিশে গেছে। সেভাবেই ইফতারের এই খাবারের তালিকায় ছাপ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের খাবারের সংস্কৃতির। রমজান মাসে বাংলাদেশের ইফতারে খেজুর, জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি, শরবত এবং মাংসের তৈরি কাবাবসহ নানা মুখরোচক খাবার অনেকটা যেন অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আখের গুড়ের শরবত,বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, বিভিন্ন রঙ মিশ্রিত বাহারি শরবত দিয়ে ইফতারিতে অনেকে পানীয় হিসেবে রাখেন।

আবার অনেকেই চিকেন ফ্রাই, পিজ্জা, বারবিকিউ, শামি কাবাব, সুতি কাবাব, শাহি জিলাপির পাশাপাশি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার-বিরিয়ানি, তেহারি ও ভুনা খিচুড়ি তাদের খাবারের রাখেন। রোজাদার ইফতারিতে কি ইফতার আইটেম রেসিপি রাখবেন তা তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা ও বয়সের উপরে অনেকটা নির্ভর করে।

সৌদি আরব

মহিমান্বিত রমজান মাস পালনে সৌদিতে মাস দুয়েক আগ থেকে চলে প্রস্তুতি। একে অপরে দেখা হলেই ‘শাহরু আলাইকা মোবারাকা’ বলে কুশল বিনিময় করেন। রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন কোম্পানির জিনিসে থাকে বিশেষ ছাড়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য থাকে হাতের নাগালে। আর ক্রয়-অক্ষম মানুষদের জন্য বাদশার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গিফট বক্স। যাতে থাকে তেল-চিনি-দুধসহ অন্যান্য দ্রব্য।

অনেকগুলো আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্যই তৈরি করা হয় এসব। তাঁবুগুলোতে ব্যবস্থা করা হয় ভালো ইফতারের। খেজুর, বোতলজাত পানি, জুস, মাঠা, ফল, কফি, চিকেন বিরিয়ানি, এলাকাভিত্তিক ঘরোয়া খাবার ইত্যাদি। পুরো রমজান মাসে ভিনদেশি শ্রমিকদের ইফতার বা সেহেরি কখনো কিনতে হয় না। এসব কাজ পুরোপুরি নিজস্ব উদ্যোগেই হয়ে থাকে।

সৌদি আরবের ইফতার আয়োজন বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সৌদি আরবের লোকেরা পুষ্টিকর খাবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেখানে ইফতারে যে খাবারগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো উন্নত মানের খেজুর, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, ভিমতো (আঙ্গুর রসের শরবত), তামিজ (একধরনের রুটি), বোরাক (মাংসের পিঠা), মানডি (ভাত ও মুরগির মাংসের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার) লাবাণ ইত্যাদি। এছাড়া ‘খাবসা’ নামক একটি খাবার সৌদি আরবে বেশ জনপ্রিয়। খাবসা সাধারণত মুরগি কিংবা ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। ইফতারের টেবিলে খাবসার গুরুত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি।

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের হজমে উপাদেয় সুরুয়া জাতীয় খাবার শরবা। এটি খেতে হয় রুটির সাথে। শরবা তৈরির মূল উপকরণে থাকে আলু, শিম আর মাংস। শরবা ইফতারিতে এটি রুচিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।

কাতার

কাতারের বহুল জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হারিস। মাংসের টুকরা মিলিয়ে গম সিদ্ধ করে রান্না হয় হারিস। এটি কেননা রোজাদারদের বেশ ক্যালোরি জুগিয়ে থাকে। তাছাড়া খাবারটি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যে উপকারী।

প্রতি বছর রমজান মাসের ১৪ তারিখ কাতারে শিশুদের নিয়ে পালন করা হয় ভিন্নধর্মী আয়োজন গারাংগাও। এই দিন শিশুরা কাতারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মাগরিবের নামাজের পর ব্যাগ নিয়ে গারাংগাও গান গায় এবং বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এই শিশুদের মিষ্টি ও চকলেট দিয়ে তাদের আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মূলত শিশুদের রোজা রাখার প্রশংসা করতে ও তাদের উৎসাহী করতে এই আয়োজন করা হয়ে থাকে।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় সাধারণত শুকনো খাবার বা খেজুর দিয়ে মুসলমানেরা রোজা ভাঙে। এছাড়া দেশীয় কিছু বিখ্যাত ইফতার আইটেম তো থাকবেই।

মালয়েশিয়ার লোকদের একটি স্থানীয় ইফতারে আইটেমের নাম হচ্ছে ‘বারবুকা পুয়াসা’। এটা আখের রস এবং সোয়াবিনের দুধ দ্বারা তৈরি একধরনের বিশেষ মিষ্টান্ন সামগ্রী। এছাড়া মালয়েশিয়ার ইফতারে থাকে নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস, আয়াম পেরিক, লেমাক লাঞ্জা ইত্যাদি।সঙ্গে বিভিন্ন স্থানীয় খবর তো আছেই।

মালয়েশিয়ায় মসজিদ থেকে রোজাদারদের ‘বুবুর ল্যাম্বাক’ নামক একটি খাবার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চাউল, মাংস, নারিকেলের দুধ, ঘি ইত্যাদি দিয়ে বুবুর ল্যাম্ব্যাক তৈরি করা হয়। প্রায় পাঁচ দশক আগে কুয়ালালামপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে এই খাবারটি বিতরণের প্রচলন শুরু হয়।

ইরান

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ উদ্দীপনার মাধ্যমে রমজান মাস পালন করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিয়া অধ্যুষিত মুসলিম দেশটি। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের ইফতার সামগ্রীতে ফলমূল এবং মিষ্টান্ন সামগ্রী একটু বেশি গুরুত্ব পায়। দেশটিতে ইফতার সামগ্রীতে ফল হিসেবে খেজুর, আপেল, চেরি, আখরোট, তরমুজ, তেলেবি, আঙ্গুর, কলা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মিষ্টান্ন সামগ্রীর মধ্যে মধু, পনির, দুধ, রুটি, চা উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া ইরানের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জিলাপি। পাশাপাশি ‘শোলে জার্দ’ নামক একটি খাবার বেশ জনপ্রিয়। চিনি, ছোট চাল, আর জাফরান দিয়ে এই খাবারটি রান্না করা হয়।

ভারত

ভারতের মুসলিমরা সাধারণত মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে। তবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র‍্যে ভরপুর এখানকার একেক রাজ্যের ইফতারির আয়োজন একেক রকম। যেমন হায়দরাবাদের লোকজনের খাবারের তালিকায় থাকে হালিম, কলকাতার ইফতারে থাকে খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল এবং চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেটের মতো মুখরোচক খাবার। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতারের প্লেটে থাকে ননবো কাঞ্জি নামের এক ধরনের খাবার।

পাকিস্তান

মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে পাকিস্তানে রমজান মাস পালন করা হয় বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে। ইফতারের টেবিল সাজাতে থাকে হরেক রকমের খাবার।

রুটি এবং মাংস পাকিস্তানীদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। রমজান মাসে ইফতারের ক্ষেত্রেও এ খাবারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইফতারের টেবিল সাজাতে আরও গুরুত্ব পায় টিক্কা সমুচা, ব্রেড রোল, চিকেন রোল, তান্দুরি কাটলেট, নুডুলস কাবাব, সুফিয়ানী বিরিয়ানি, গোলাপী কাবাব ইত্যাদি।

মিষ্টান্ন হিসেবে বিভিন্ন খাবার স্থান পায় সেদেশের ইফতার টেবিলে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, সালাদ, করাচি ফালুদা ইত্যাদি। ঝাল জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে নিমকি, সমুচা পরোটা ইত্যাদি।

আফগানিস্তান

আফগানিস্তানে ইফতার তালিকায় থাকে একধরনের বিশেষ স্যুপ বা সুরওয়া, ভেড়ার মাংসের দোপেঁয়াজা, কোরমা-এ-মুরগ বা মুরগির কোর্মা, কোর্মা-এ-গোশফান্দ বা খাসির কোরমা, বিভিন্ন ধরনের পাকোড়া, মিষ্টি হিসেবে শিরনি বা খোরমা ইত্যাদি খাবার। মান্টু নামে আরেকটি বিশেষ পদ থাকে। এটি মূলত ভাপে রান্না করা পেঁয়াজ আর মুরগির পুর ভর্তি ডাম্পলিং। এছাড়াও নামে ও স্বাদে আফগানি আমেজ বজায় রাখতে ইফতারে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কাবুলি পোলাও থাকে।

মরক্কো

মরক্কোয় ইফতারকে বলা হয় এফতোর। এ সময় তাদের রাস্তাগুলো পরিণত হয় খাবারের বাজারে। মরক্কোর অধিবাসীরা একটু বেশি সময় নিয়ে ইফতার করে থাকে। ইফতারে থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন রিজ্জা, ক্রাচেল, মিস্সামেন, হারিরা, ব্রিওয়াত, স্টিল্লা, হারশা, স্যাল্লো, রিজ্জা। মরক্কোতেও নাফর নামে পরিচিত একদল মানুষ পালন করে সেহরিতে মানুষদের জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব। তবে এ ক্ষেত্রে তাদেরকে শহরের মানুষ নির্বাচন করে। রমজানের শেষে নাফরদের পুরস্কৃত করা হয়। মাথায় টুপি, পায়ে জুতা আর মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে, সুরেলা গলায় প্রার্থনা সংগীত গেয়ে শহরের অলিগলিতে হেঁটে তারা মানুষকে জাগিয়ে তোলে।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ মুসলমান বাস করেন ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ইলিনয়েস, ইস্তিয়ানো, মিশিগান. টেক্সাস, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যগুলোতে। এশিয়ান মুসলিমরা যারা এখানে বসবাস করেন তারা তাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে পায়জামা, পাঞ্জাবি, কাবুলি সেট কোর্তা পরিধান করেন এবং মহিলা ও শিশুরা মেহেদি দিয়ে হাত রাঙান।

অন্যদিকে আফ্রিকান মুসলিম যারা এখানে থাকেন তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করেন। আমেরিকায় ইফতারসামগ্রীর মধ্যে খেজুর, খোরমা, সালাদ, পনির, রুটি, ডিম, গোশত, ইয়াগার্ট, হট বিনস, স্যুপ, চা ইত্যাদি থাকে। রমজান মাসে হোয়াইট হাউসে ইফতার পার্টি প্রথম শুরু করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এটা বর্তমানে একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কানাডা

রাজধানী অটোরায় সর্বাধিক মুসলমান বসবাস করে। অটোয়া ছাড়াও সাসকেচুয়ান, অল্টারিও, সিনেটোবা, টরেন্টো, কুইবেক রাজ্যগুলোতে মুসলমানরা বসবাস করেন।

রমজানে ইফতার পার্টির আয়োজন চলে মহাসমারোহে এবং প্রতি শনিবার অটোয়া ইসলামিক সেন্টারের ইফতার পার্টিতে দেশ- বিদেশের অসংখ্য মুসলমান হাজির হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘দ্য মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইফতার পার্টির আয়োজন করে। ইফতারিতে খেজুর, খোরমা, পনির, সালাদ, ফল, স্যুপ, জুস, রুটি, ডিম, গোশত, চা-কফি ইত্যাদি থাকে।

ইতালি

দেশটির অধিকাংশ অধিবাসী ক্যাথলিক খ্রিস্টান, তা ছাড়া বৌদ্ধ ও ইহুদি আছে। সমগ্র জনসংখ্যার ১% হলো মুসলমান। এই অল্পসংখ্যক মুসলমান রমজানকে ঘটা করে স্বাগত জানায়। ইফতারিতে তারা বার্গার জাতীয় খাদ্য, নানাবিধ ফল যেমন- মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর, বিভিন্ন ফলের রস খান। সেহেরিতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে থাকে।

জার্মানি

জার্মানির মুসলমানরা ১৯ ঘণ্টা রোজা রাখেন। রাত ৩টায় সেহরি খেয়ে পরদিন রাত ১০টায় ইফতার করেন তারা। জার্মানিতে প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান, যাদের বেশির ভাগ শ্রমিক এবং তারা বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে এসেছে। বর্তমানে এ দেশে দুই হাজার মসজিদ আছে। তাই কাজের মধ্যেই ইফতারির সময় হয়ে যায়। বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহে মুসলমান শ্রমিকদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।

সুদান

আফ্রিকা মহাদেশের বড় একটি মুসলিম দেশ হলো সুদান, যার রাজধানীর নাম হচ্ছে খার্তুম। এখানে ইফতারি সাধারণত খেজুর দিয়ে শুরু করা হয়। তা ছাড়া ‘হামড়া’ ‘লাহমা’ নামক গোশত দিয়ে তৈরি খাদ্য খেয়ে থাকে। চালের তৈরি ‘আছিদা’ এক ধরনের পিঠা তারা খায়।

গোশত ও সস দিয়ে তৈরি ‘মুলাহ’ নামক খাদ্যও ইফতারিতে খায় এবং একই সঙ্গে ‘গাওয়া’ নামক চা জাতীয় পানীয় তারা পান করে। সুদানিরা ‘শোরবা’ নামক স্যুপ, মাংস দিয়ে তৈরি ‘মুহাম্মার’ নামক খাবার, দুধ ভাত দিয়ে তৈরি ‘রুসবিল হালিব’ সালাদ দিয়ে খায়। তদুপরি পায়েশ, ক্ষির, ফিরনি এগুলো তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে থাকে।

তিউনেশিয়া

তিউনেশিয়ানদের খুব প্রিয় খাবার ব্রিক। ব্রিক ডিম দিয়ে তৈরি পেস্ট্রির মতো একটা খাবার। মালসুকা নামে আটায় তৈরি রুমালের মতো পাতলা শীট থাকে। এটাকে ত্রিকোনাকারে ভাঁজ করা হয়। ভাঁজের মাঝটা ভরা হয় পেঁয়াজ কুচি, পার্সলে কুচি, টুনা মাছের কিমা আর হারিসা দিয়ে। তার উপর আস্ত একটা ডিম ভেঙে দিয়ে উপরে ভাঁজটা ফেলে দেয়া হয়। এবার গরম তেলে ভেজে নিলেই ডিম ব্রেক প্রস্তুত। ডিমের তৈরি বলে মোটামুটি ভালো শক্তির উৎস, তাই সেহেরির জন্যে আদর্শ।

মিসর

রমজানে এখানে অফিসের কর্মঘণ্টা কমানো হয় যাতে সিয়াম পালনকারীরা মসজিদে ইবাদতে পর্যাপ্ত সময় পান। দিনের কাজকর্ম করে তারা রাতে কিয়ামুল লাইল, তারাবি এবং কোরআন তিলাওয়াত করে কাটিয়ে দেন। জোহরের সালাতের পর থেকে ‘বাজারের শহর’ নামে খ্যাত রাজধানী কায়রো শহরের অলিগলিতে ঢাকার চকবাজারের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে হরেক রকম ইফতারের আয়োজন। ইফতারে ঐতিহ্যবাহী পানীয় ‘শরবত কামার আল দীন’ সব বয়সীরা পান করে থাকে।

মিশরীয়রা আত্মীয়স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে পছন্দ করেন। রমজান মাসে দেশটিতে প্রতিটি বাড়ি এবং সড়কে নানা রঙের বাতিতে আলোক সজ্জ্বিত করা হয়। বেশিরভাগ মিশরীয় পরিবারের ইফতারে আইটেমে ফুল মুদাম্মাস নামক একটি খাবার থাকে, যা রুটি দিয়ে খাওয়া হয়। প্রধান ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আরো রয়েছে কোনাফা ও কাতায়েফ (আটা, মধু, বাদাম ও কিসমিসের সমন্বয়ে তৈরি কেক জাতীয় খাদ্য বিশেষ), ককটেল খুশাফ, মলোকিয়া, খেজুর ইত্যাদি।

ইফতারের টেবিলে মিশরের বিখ্যাত একটি পানীয় হচ্ছে ‘কামার আল দিনান্দ আরাসি’। শুকনা আখরোট সারাদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে তৈরি করা হয় কামার আল দিনান্দ আরাসি। ‘খাবোস রমজান’ নামক একধরনের রুটি মিশরে বেশ জনপ্রিয়। এটি কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির হয়ে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/২৭ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :